টিয়া রিয়োন
মোঃ আব্দুর রহমান
আষাঢ় মাসে আকাশে শুরুম গুরুম মেঘের গর্জন। কোন রকমে স্কুল থেকে গুটিগুটি পায়ে বাসায় ফিরলো জুলি। অমনিই ঝপঝপিয়ে বৃষ্টি নামলো। এমন বৃষ্টির অপেক্ষায় সে বহুদিন। এবার মায়ের ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে আস্তে করে ব্যাগটা রেখে, জুতোটা খুলে, চিতাবাঘের মতো পা টিপে টিপে বাহিরে গেলো। তুমুল বৃষ্টিতে বাড়ীর উঠোন পানিতে ভরেগেলো। ব্যাঙ ডাকতে শুরু করলো, পুকুরে হাঁসগুলি কেত কেত সুরে হইচই লাগালো। সাথে ঘর থেকে জুলির মাও চেচাতে লাগলো,” মা জুলি তাড়াতাড়ি ঘরে আয় অসুখ করবে।” কার কথা কে শোনে। জুলিতো জুলির মতো করে মনের সুখে বৃষ্টিতে হাসছে, খেলছে এবং গাইছে....। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি একটু থামলো। কিন্তু তাও জুলি ঘরে আসতে চায়না। এবার জুলির মা জুলিকে জোর করে ঘরে নিয়ে আসলো। তবে আষাঢ়ে বৃষ্টি থামলেও এবার জুলির চোখের কান্নার ঢল আর থামেনা। রাগ একটাই- কেন তাকে বৃষ্টি থেকে আনা হলো। অবশেষে কেঁদেকেটে ঘুমিয়েগেলো জুলি। মেয়েটাকে আজ খাওয়াতেও পারলনা মা।জুলির বাবা আরমান সাহেব উপজেলা শহরে কলেজের প্রভাষক। জুলি বাবার কলিজার টুকরা। বাড়ী ফিরে জুলির মায়ের কাছ থেকে সব শুনে, খাওয়ার জন্য ঘুম থেকে আদর করে ডাকতেগেলো ওর বাবা।” মা জুলি, কইরে ওঠ।” জুলি ঘুম থেকে উঠে কাঁপছে। বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। ও মা সে কি! ওর গায়ে প্রচন্ড জ্বর!
অনেক তেল মালিশ, পানির ঢেলে কিছুতেই কিছু হচ্ছিলনা। এদিকে জ্বর আরও বাড়তে লাগলো। জুলিও কাঁদছিলো। সাথে কাঁদছে জুলির মা,” কতবার বৃষ্টিতে ভিঁজতে নিষেধ করলামরে মা-তবুও শুনলিনা..”। জুলির বাবা আর দেরি না করে হাসপাতালে নিয়েগেলো। জুলির মা কাঁদছে আর কাঁদছে। ডাক্তার বললো, “ আপনারা প্লীজ ধৈর্য্য ধরুন, আমরা দেখছি...।” পরের দিন সকালে ভোরের সূর্য্য এসে জুলির চোখে পড়লো। ঘুম ভেঙে জুলি দেখে, ওর বাম হাতটা ওর মা বুকে ধরে পাশে বসে ঝিমাচ্ছে। আর ওর ডান পাশে ওর বাবা ডান হাতটা ধরে চেয়ারে বসে বসে ঝিমাচ্ছে। ছোট্ট জুলির বুঝতে বাকী রইলোনা, তার বাবা-মা দুজন সারারাত তার পাশে বসে না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছে। এবার সে বাবা-মা দুজনকেই ডাকলো। বাবা-মা দুজনেই জুলিকে বুকে নিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। জুলি বললো,” মা কেঁদোনা, আমি আর কখনও বৃষ্টিতে ভিজবোনা। আর কখনও তোমার কথার অবাধ্য হবোনা। আমাকে মাফ করে দাও।চলো আমরা বাড়ী যাই মা।” ডাক্তার সাহেব এসে পিছন থেকে জুলির সবকথা শুনে ওর কপালে হাত দিয়ে বললো,” জুলি মা মনি একদম ঠিক বলেছে, আপনারা এখন বাড়ী যেতে পারেন।” অবশেষে বাবা-মা দুজনের হাত ধরেই বাড়ীর পথ ধরলো জুলি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct