জনগণের চাপে পড়ে রাজ্য সরকারগুলি হত-দরিদ্র মানুষকে, গ্রামকে ও কৃষককে সস্তায় বিদ্যুৎ দিতে বাধ্য হয়। রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ বোর্ড, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সেটা জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। এই পুরো ঘটনাগুলো রাজ্য সরকারগুলির নির্দেশে ঘটে। গ্রাম হোক শহর, গরিব হোক বা কোটিপতি, কৃষক হোক বা সরকারি চাকরিজীবী মানুষ; সকলকে সমানভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সরকারের বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে। তাই ‘বিদ্যুৎ (সংশোধনী) আইন ২০২২’ নিয়ে লিখেছেন যোগেন্দ্র যাদব। আজ শেষ কিস্তি।
এই আইনের পক্ষে সরকার যুক্তি খাড়া করছে যে সরকারি বিদ্যুৎ বোর্ড আর কোম্পানিগুলিতে এখন ভারি মন্দা চলছে। রাজ্য সরকারের পক্ষে এই বোঝা বহন করা আর সম্ভব হচ্ছে না। সরকারি কোম্পানিগুলোর বিদ্যুৎ বিতরণে চুরি কোনোভাবে আটকানো যাচ্ছে না। বাড়িতে বাড়িতে সস্তার বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সরকারের অর্থের ক্ষতি হয় বেশ অনেকখানি। প্রাইভেট কোম্পানির গ্রাহকরা একের বেশি বিকল্প পাবেন। গ্রাহক নিজের পছন্দের কোম্পানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা এক ভিন্ন ছবি তুলে ধরছে। সত্যি এটাই যে প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর সমগ্র জনগণকে বিদ্যুৎ প্রদানের কোনো আগ্রহ নেই। তারা শহরের লগ্নিপতি বা দেশের কোটিপতিদেরই বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। যার পকেট গরম তার ঘরে আলোর রোশনাই অনেক সস্তা হয়ে যাবে। সাধারণ জনগণকে পাওয়ার সাপ্লাই করার দায় সরকারি বিদ্যুৎ বোর্ডের ঘাড়ে গিয়ে উঠবে। এবারে সরকার তো আর বিদ্যুতের দাম বাড়াতে পারবে না। সেইজন্য গ্রামে এবং খুব ধনবান নয় এমন কলোনিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ আগের থেকে আরো খারাপ হয়ে যাবে। না বিদ্যুতের থাম আর মিটার ঠিক সময়ে লাগানো হবে, না ট্রান্সফারমার ঠিক সময়ে পাল্টানো হবে। অনেক রাজ্যেই কৃষকদের সস্তায় বা বিনামূল্যে বিদ্যুৎ প্রদানের প্রকল্প বন্ধ হতে পারে। আদানির মতো ব্যবসায়ীদেরই কেবল সুবিধা হবে।
আমাদের দেশের বিদ্যুৎ বিতরণের প্রক্রিয়া প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা ওড়িশায় টিকতে পারেনি। এটা যে একটা ভুল প্রচেষ্টা, সেটা প্রমাণিত হয়েছে। শুনতে খারাপ লাগলেও এটা খুব সত্যি যে, বিদ্যুৎ আজ সকলের সবথেকে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর একটা হয়ে উঠলেও এখনো অনেক মানুষেরই বিদ্যুৎ সংযোগ রাখার সামর্থ্য নেই। চড়চড়িয়ে বাড়তে থাকা দাম আর বেকারত্ব গোটা দেশের সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা দুষ্কর করে তুলেছে। এককালে বিদ্যুৎ বিতরণ প্রক্রিয়া যেন তেন প্রকারেন প্রাইভেট ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিতে চাওয়া মানুষরাও এখন এমন নীতি থেকে নিজেদের দূরে রাখে আজকাল। কিন্তু মনে হয় আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় সরকার এই ঘটনা থেকেও কিছু শেখার চেষ্টা করে না। বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং তা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া রাজ্য সরকারের কাজ। এবারে বিদ্যুৎ খাতে খরচা যদি রাজ্য সরকার করতে চায় তবে তার নিয়মকানুন কেন্দ্রীয় সরকার ঠিক করে দেবে। এটা মোটেই কোনো উচিত কথা নয়। ঠিক এই কারণেই তেলেঙ্গানা, পাঞ্জাব এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীরা এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। আগামী দিনে এই বিলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের স্বর আরো চড়াও হওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করব রাজ্য সরকার নিজের কাঁধে সমস্ত বিদ্যুৎ বিতরণের দায় না নিয়ে সরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে যথাসম্ভব সাহায্য করবে, পাশাপাশি বিদ্যুৎ চুরি যাওয়া রোধ করার দায়িত্ব পালন করবে। (সমাপ্ত...)
লেখক ‘স্বরাজ ইন্ডিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা।
অনুবাদ: প্রতীক্ষা ঘোষ
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct