ক্রমেই মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এতে আতঙ্কিত হওয়ার খুব কারণ নেই। কারণ এই রোগে শরীরে লক্ষ্মণ ফুটে ওঠে। তাই প্রাথমিক অবস্থাতেই যদি অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের কাছে আসলে সহজেই সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা যায়। মাঙ্কিপক্স নিয়ে লিখছেন বিখ্যাত আন্তর্জাতিক হোমিওপ্যাথ ডা. প্রকাশ মল্লিক। এম.ডি. হোমিও (ধন্বন্তরি), সিনিয়র সুপার স্পেশালিস্ট হোমিওপ্যাথ, ফোন ৯৮৩০০২৩৪৮৭
এক বিরল ভাইরাল রোগ মাঙ্কপক্স। কিছুদিন আগে পর্যস্ত এই রোগ আফ্রিকার বাইরে খুব কমই দেখা গেছে। কিন্তু গত সপ্তাহে আফ্রিকার বাইরে অন্তত ১১টা দেশে, মান্কিপক্সের ১২০টারও বেশি নিশ্চিত বা সন্দেহজনক কেস রিপোর্ট করা হয়েছে । এই ভাইরাসকে মাঙ্কিপক্স বলা হয়। কারণ গবেষকরা প্রথম ১৯৫৮ সালে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করার জন্যে রাখা কিছু বানরের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত করেন। তবে এটি ইঁদুরের মতো বন্য বা ওয়াইল্ড প্রাণী বা কোনো সংক্রামিত লোকদের থেকে অন্যান্য মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয় বলে মনে করা হয়। আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিম আর কেন্দ্রীয় অংশে বছরে গড়ে কয়েক হাজার মাঙ্কিপক্সের ঘটনা ঘটে। তবে এতদিন আফ্রিকার বাইরে সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা কয়েকটি মুষ্টিমেয় সংক্রামিত মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। যাঁরা আফ্রিকা ভ্রমণ বা সংক্রামিত প্রাণী আমদানির সঙ্গে জড়িত, তাঁদের মধ্যেই সংক্রমণ দেখা যেত। ১৯৭০ সাল থেকে গতবছর আফ্রিকা মহাদেশের বাইরে শনাক্ত হওয়া মোট সংখ্যাকে সাম্প্রতিক সংক্রমণের ঘটনা এর মধ্যেই ছাড়িয়ে গেছে।
তবে মাঙ্কিপক্সের জীবাণু কোভিড-১৯ মহামারির জন্য দায়ী SARS CoV-2 এর মতো এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে এত সহজে সংক্রমণ হয় না। যেহেতু এটি এর বিস্তার রোধ করার জন্য এরমধ্যেই ডাক্তারদের হাতে চিকিৎসা আছে আর ভ্যাকসিনও রয়েছে। মাঙ্কিপক্স ভাইরাস SARS CoV-2-এর মতো অ্যারোসল নামে ক্ষুদ্র বায়ুবাহিত ফোঁটার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে না, বরং কাশি থেকে লালার মতো শারীরিক তরলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থেকে ছড়িয়ে পড়ে বলে মনে করা হয়। এর মানে হল, মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তি SARS CoV-2 আক্রান্ত ব্যক্তির তুলনায় অনেক কম ঘনিষ্ঠ পরিচিতিকে সংক্রমিত করতে পারে। এই দুই ভাইরাসই flu- র মতো উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু মাঙ্কিপক্স বর্ধিত লিম্ফ নোড আর মুখ, হাত ও পায়ে স্বতন্ত্র তরল-ভরা ক্ষত সৃষ্টি করে। বেশিরভাগই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসা ছাড়াই মাঙ্কিপক্স থেকে সেরে
ওঠে। পর্তুগালের গবেষকরা ১৯ মে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের প্রথম খসড়া জিনোম জমা বা আপলোড করেন, তা এখনো খুব প্রাথমিক খসড়া আর কোনো নিদিষ্ট সিদ্ধান্তে আসার আগে আরো কাজ করা দরকার। এই প্রাথমিক জেনেটিক ডেটা থেকে গবেষকরা যা বলতে পারেন তা হল পর্তুগালে পাওয়া মাঙ্ক পক্স ভাইরাসের স্ট্রেন মূলত পশ্চিম আফ্রিকায় পাওয়া এক ভাইরাল স্ট্রেনের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে অনেককিছুই এখনও অজানা রয়ে গেছে। মাঙ্কিপক্স হল ডিএনএ ভাইরাস, সুতরাং আরএনএ ভাইরাসের তুলনায় পারে ভালো ভাবে। যার মানে এটা হঠাৎ বদলে এক মানুষ থেকে আরেক মানুষে সংক্রমণে পারদর্শী হয়ে উঠবে এটা আশা করাটা বাড়াবাড়ি হবে। মাঙ্কিপক্স ছাড়াই ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন নয়, কারণ এটি ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি করে। যদি মাঙ্কিপক্স উপসর্গবিহীনভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে তবে তা বড়ো সমস্যার সৃষ্টি করবে। কারণ ভাইরাসটিকে ট্র্যাক করা কঠিন হয়ে পড়বে। হোমিওপ্যাথিতে জেলমিসিয়াম, ব্যাসিলিনাম, বাসভেন, সারাসিনিয়া প্রভৃতি হোমিওপ্যাথি ওষুধ ব্যবহার করে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে একজন দক্ষ হোমিওপ্যাথিক কারণ, লক্ষণ ও মায়জম মিলিয়ে রোগীকে সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করলে অচিরেই রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে। চিন্তার তেমন কোনো কারণ নেই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct