আপনজন ডেস্ক: ভারতের ৭৫ বার্ষিকী স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রত্যেক ভারতীয়কে মহিলাদের সম্মান করার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী দিল্লির লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বলেন, ‘মহিলাদের প্রতি আমাদের আচরণ বিকৃত করা হয়েছে। আমরা মাঝে মাঝে আমাদের মহিলাদের অপমান করি। প্রত্যেক ভারতীয়র কাছে আমার একটাই অনুরোধ, আমরা কি দৈনন্দিন জীবনে আমাদের মহিলাদের প্রতি মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারি? নারী শক্তির গর্ব ভারতের স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মহিলাদের প্রতি শ্রদ্ধা ভারতের বিকাশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। আমাদের নারী শক্তিকে সমর্থন করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর সেই আহ্বানের মাত্র এক দিন পরে, গুজরাত সরকার ১১ জন দোষীকে মুক্তি দিয়েছে যারা ২০০২ সালে গর্ভবতী বিলকিস বানুকে ধর্ষণের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ছিলেন। দিল্লিতে নির্ভয়া কাণ্ডের পর যখন দেশজুড়ে ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির জন্য গর্জে উঠেছিল তখন সকল দেশবাসী একই স্বরে তাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকারও ধর্ষকদের কোনও ছাড় দিতে চায় বলে নীতি নিয়েছিল। অথচ, ২০০২ সালের গুজরাত মামলায় বিলকিস বানুর ধর্ষকদের গুজরাত সরকার সমস্ত সাজা মকুব করে দিল স্বাধীনতা ৭৫ বার্ষিকী উদযাপনের সময়। দেশবাসী যখন দেমের ৭৫ বর্ষের স্বাধীনতা উদযানে ব্যস্ত তখন বিলকিস বানু ধর্ষকদের শাস্তি দেওয়ার স্বাধীনতাকে হরণ করা হল।
২০০২ সালের ৩ মার্চ সালের গুজরাত দাঙ্গার সময় বিলকিস বানুর বয়স যখন ২১ বছর ও পাঁচ মাসের গর্ভবতী ছিলেন তখন তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। তার মাত্র কয়েক দিন আগে সবরমতী এক্সপ্রেসের কোচে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় ৫৯ জন ‘কর সেবক’ নিহত হওয়ার ঘটনার পর যে সহিংসতা শুরু হয়েছিল তা থেকে বাঁচার আশায় তারা তারা আহমেদাবাদের কাছে মাঠে লুকিয়ে ছিলেন সেসময় গণধর্ষণের শিকার হন বিলকিস বানু। তার ছোট্ট বাচ্চা সহ পরিবারের সাতজনকে হত্যা করা হয়। বাকি ছয় সদস্য পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মুম্বাইয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত বিলকিস বানুকে গণধর্ষণ ও তার পরিবারের সাত সদস্যকে হত্যার অভিযোগে ১১ জন অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। পরে বম্বে হাইকোর্ট তাদের সাজা বহাল রাখে। ২০১৯ সালে, সুপ্রিম কোর্ট এমনকি গুজরাত সরকারকে একটি বাড়ি এবং একটি চাকরি ছাড়াও ক্ষতিপূরণ হিসাবে ৫০ লক্ষ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তার তিন বছর পর দোষীরা মুক্তি পেল গুজরাত সরকার তাদেরকে শাস্তি মকুব করে দেওয়ায়। যে ১১ জন দোষীকে অকাল মুক্তি দেওয়া হলে তারা হল, যশবন্তভাই নাই, গোবিন্দভাই নাই, শৈলেশ ভট্ট, রাধেশাম শাহ, বিপিন চন্দ্র জোশী, কেসারভাই ভহনিয়া, প্রদীপ মর্ধিয়া, বাকাভাই ভহনিয়া, রাজুভাই সোনি, মিতেশ ভট্ট এবং রমেশ চন্দনা। বিলকিস বানুর স্বামী ইয়াকুব রসুল এ নিয়ে বলেন, তিনি জানেন না কেন গুজরাত সরকার এই ১১ জনকে মুক্তি দিয়েছে যারা তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছিল এবং তাদের পরিবারের সাত সদস্যকে হত্যা করেছিল। বিলকিস বানু এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে, ইযাকুব রসুল বলেন, প্রতিদিনই আমরা এই ঘটনায় নিহতদের কথা স্মরণ করি, যাদের মধ্যে আমাদের মেয়েও রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে (মুক্তি) কিছু বলতে চাই না। আমরা যা করতে চাই তা হল দাঙ্গায় প্রাণ হারানো আমাদের কাছের এবং প্রিয়জনদের আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করা। তিনি আরও বলেন, আদালতের নির্দেশে সরকার ক্ষতিপূরণ দিলেও এখনও চাকরি পাননি। তিনি বলেন, আমাদের এখন কোনও নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই, আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে থাকছি। কারণ, তা জানালে আমাদের বাঁচার কঠিন হয়ে পড়বে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct