“আজও সে অপেক্ষায়”
উদয় পদ বর্মন
মধ্যবিত্ত পরিবার। অজয় বাবু তার পরিবারকে নিয়ে গোপালপুরের গ্রামের বাড়িতে বসবাস করেন। অজয় বাবুর পরিবার বলতে তার স্ত্রী রীনা এবং একমাত্র সন্তান আকাশ।খুব আদর-যত্নে মানুষ হতে থাকে আকাশ। সে ছিল বাবা মায়ের নয়নের মণি। এবার আকাশ ধীরে ধীরে বড়ো হয়ে উঠছে, একটু একটু করে বুঝতে শিখছে ভালো মন্দের ছোঁয়া। স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে বেশ আনন্দ উৎসবের মধ্যে দিয়ে দিন অতিবাহিত করেন অজয় বাবু। বাঙালির আবার বারমাসে তেরো পার্বণ। উপস্থিত হলো, সেই দিনটি অর্থাৎ রাখী পূর্ণিমা উৎসব। যে দিনটি সৌভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয় ভাই বোনেরা। যে উৎসব আনন্দ মুখরিত হয়ে ওঠে ভাই-বোনের স্নেহ ভালোবাসায় রাখী বন্ধনের মধ্যে দিয়ে। ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় দিদি ও বোনেরা এই দিনটিতে রেশমী সুঁতোয় বাঁধা রাখী পরিয়ে উভয় উভয়কে মিষ্টি মুখ করাই।
এই সুন্দর মুহূর্তটি অজয় বাবুর একমাত্র সন্তান আকাশের দৃষ্টিগোচরে আসে। সে মনে মনে ভাবে আমাকে তো কেউ রাখী পরিয়ে মিষ্টি খাইয়ে দিলো না! মুহূর্তের মধ্যে সে ছুটে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো মাগো আমাকে রাখী পরিয়ে মিষ্টি খাইয়ে দাও না। মা বললো পাগল ছেলে আমার ওতো দিদি বোনেরা ভাইকে পরিয়ে দিয়ে মিষ্টি মুখ করাই বাবা। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মায়ের কাছে আকাশ জানতে চায়, মা আমার দিদি বোনেরা কোথায়? মা নিরুত্তর! পুনরায় মায়ের কাছে জানতে চাইলে, মা ছেলের দিকে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, চোখ দিয়ে ঝরে পড়ে অশ্রু বিন্দু। কিছুক্ষণ বাদে আকাশের মা আর সেই কান্না চেপে রাখতে পারেনি। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন, সঙ্গে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলেন, তোর দিদি আর কোনো দিন ফিরবেনা বাবা! এখন তুই আমাদের সবকিছু। এরপর আকাশ হয়তো একটু অনুধাবন করতে পেরেছে, তার দিদি আর কোনো দিন ফিরবেনা। এখন সে আর আবেগে ভেসে যায় না। শুধু রাখী পূর্ণিমার দিনটি যেদিন ফিরে ফিরে আসে, দরজায় এসে কড়া নাড়ে; তখন বিচলিত হয়ে ওঠে তার হৃদয় এক অজ্ঞাত বেদনায়। নির্বাক হয়ে আকাশ দাঁড়িয়ে থাকে ঘরের এক কোণায়। আজও সে অপেক্ষা করে থাকে দিদি আবার একদিন ফিরে আসবে।।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct