আপনজন ডেস্ক: নির্বাচন এলেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জনগণকে বিনামূল্যে নানা পরিষেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। এইর উদ্দেশ্যে জনগণের মন জয় করে ভোট আদায় করা। নির্বাচন ইস্তাহারে তাই বিনামূল্যে বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে দিনমজুর কিংবা মহিলাদের জন্য মাসিক ভাতা প্রদান, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন দেওয়া প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এ নিয়ে এক জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার এক তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করল সুপ্রিম কোর্ট। তাতে প্রধান বিচারপতিদ এনভি রামানা ও বিচারপতি কৃষ্ণা মুরারির বেঞ্চ জানিয়েছে, নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলির দেওয়া এই সকল বিনামূল্যে পরিষেবা দানের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার প্রবণতা দেশের জন্য “একটি গুরুতর সমস্যা”। এর ফলে ভারতীয় অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে। এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে অশ্বিনী উপাধ্যায় নামে এক আইনজীবী একটি জনস্বার্থ মামলা করেন। তিনি রাজনৈতিক দলগুলির বিনামূল্যে পরিষেবা দানের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়েছিলেন । আবেদনটিতে নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও করা হয়। সেই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এনভি রামানা বলেন, “কেউ বলে না যে এটা (বিনামূল্যে পরিষেবা দান) একটা সমস্যা। অথচ, এটা একটা গুরুতর বিষয়। জনসাধারণের কেউ কেউ বলেন, তারা কর দিচ্ছেন। সেই করের টাকা উন্নয়নমূলক প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করতে হবে। তাই, এটা একটা গুরুতর সমস্যা। কেন্দ্রীয় সরকারেরও ক্ষুধার্তদের মুখে খাদ্য তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু, দেশের অর্থনীতির ক্ষতি এবং জনগণের কল্যাণের মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে।” এই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এনভি রামানা একটি ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, আমার শ্বশুর একজন কৃষক এবং তিনি যেখানে থাকেন, সেখানে সরকার নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া বন্ধ করেছিল। এ বিষয়ে তিনি আমাকে আরও বলেন, এর বিরুদ্ধে পিটিশন করা যাবে কি না? কিন্তু কয়েক মাস পর সরকার ঘোষণা করল, যাদের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে, তাদের সংযোগ এখন থেকে বৈধ হয়ে যাবে। বলুন তো, এটা কি ধরনের কল্যাণ প্রকল্প? যারা সংযোগের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা কি বার্তা পাঠাচ্ছি? অবৈধ ব্যক্তিরা লাভবান হচ্ছেন। আমি আমার শ্বশুরকে উত্তর দিতে পারিনি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে রেয়াত দেননি প্রধান বিচারপতি। শুনানি চলাকালে নির্বাচন কমিশনকে কড়া ভর্ৎসনা করে আদালত। প্রধান বিচারপতি এনভি রামানা কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তারা কখন হলফনামা দাখিল করেছে। রাতেও দেখা হয়নি, সকালে খবরের কাগজ দেখে আমরা জানতে পারি। শুনানিতে আদালতের উপদেষ্টা সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিবাল ও আম আদমি পার্টির পক্ষে অভিষেক মনু সিংভি উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তী শুনানি ১৭ আগস্ট ।
এর আগে, গত সপ্তাহে এই মামলার শুনানিতে এই মামলার বিরোধিতা করেছিল আম আদমি পার্টি। অরবিন্দ কেজরীবালের দল দাবি করেছিল, “যোগ্য এবং সুবিধাবঞ্চিতদের আর্থ-সামাজিক কল্যাণের পরিকল্পনাগুলিকে ‘ফ্রিবিজ’ (বিনামূল্যের পরিষেবা) হিসেবে বর্ণনা করা যায় না। অসম সমাজে বিনামূল্যে বিদ্যুত, জল এবং পরিবহণের সুবিধা দেওয়াটা আবশ্যক।” আবেদনকারী আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায়ের সঙ্গে বিজেপির “ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক” রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছিল আপ। তারা আরও বলেছিল, “নির্বাচনী বক্তৃতা থেকে এই ধরনের সমাজতান্ত্রিক এবং কল্যাণবাদী অ্যাজেন্ডাগুলিকে সরিয়ে দিয়ে, জনকল্যাণের পরিবর্তে বর্ণ এবং সাম্প্রদায়িক আবেদনের উপর নির্ভরশীল একটি সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন আবেদনকারী।” আগামী ১৭ অগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণ একটি গুরুতর সমস্যা। আর, এর জেরে অর্থ হারাচ্ছে অর্থনীতি। এমনটাই মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার এই প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলো বিনামূল্যে নানা সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এর ফলে আর্থিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অর্থনীতি অর্থ হারাচ্ছে। এই ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায়ের দায়ের করা একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি করছিল। আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায়, নির্বাচনের সময় ভোটারদের লোভ দেখাতে রাজনৈতিক দলগুলো যে প্রতিশ্রুতি দেয়, তার ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়েছিলেন। তিনি আবেদন করেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ইস্তেহার নিয়ন্ত্রণ করা হোক। আর, ইস্তেহারে দেওয়া মিথ্যে প্রতিশ্রুতির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে জবাবদিহি করতে বলা হোক। এই ব্যাপারে আদালত জানিয়েছে, ‘কেউ বলছেন না যে এটা কোনও সমস্যা নয়। এটি একটি গুরুতর বিষয়। যাঁরা সুবিধা পাচ্ছেন, তাঁরা সেটা চান। তাঁরা মনে করেন দেশ হবে কল্যাণকর রাষ্ট্র। কেউ কেউ বলতে পারেন যে তারা কর দিচ্ছেন। তাই এই অর্থ উন্নয়নের খাতে বরাদ্দ করা হোক। সুতরাং এটি একটি গুরুতর সমস্যা। তাই উভয় পক্ষের কথাই শুনতে হবে।’ প্রধান বিচারপতি জানান, ভারত এমন একটি দেশ, যেখানে দারিদ্র রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারেরও ক্ষুধার্তদের খাওয়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। মূল বিষয় হল অর্থনীতি ভারসাম্য হারাচ্ছে। তাই জনগণের কল্যাণকেও ভারসাম্যপূর্ণ করতে হবে। মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য হয়েছে ১৭ আগস্ট।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct