সি চিন পিংয়ের ‘একটি আধুনিক পরাশক্তির জাতীয় পুনরুজ্জীবন’ শীর্ষক ঘোষিত নীতির অংশ হিসেবে তিনি তাইওয়ানকে শান্তিপূর্ণভাবে মূল ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর তাঁর সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের সীমাবদ্ধতাকে সামনে তুলে ধরেছে। এটি মার্কিন কংগ্রেসের একজন সদস্যের তাইওয়ান সফরের বিষয়ে বেইজিংকে প্রতিক্রিয়া দেখানোর দিকে ঠেলে দিয়েছে। ফলে উত্তেজনা বিরাজমান। এ নিয়ে লিখেছেন টনি ওয়াকার। আজ শেষ কিস্তি।
১৯৯৫ সালে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন তাইওয়ানের ন্যাশনালিস্ট পার্টির নেতা লি তেং-হুইকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের অনুমোদন দিলে চিন ক্ষুব্ধ হয়। ক্লিনটনের ওই অনুমোদন তাইওয়ানের নেতাদের যুক্তরাষ্ট্র সফরের নিষেধাজ্ঞাকে উল্টে দিয়েছে। পরের বছর তাইওয়ানের প্রথম অবাধ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লির নির্বাচন বেইজিংকে আরও অসন্তুষ্ট করে। তাঁর নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ১৯৯৫-৯৬ সালজুড়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। ওই সময় চিন তাইওয়ানের কাছে সামরিক মহড়া চালায় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনা আগ্রাসন রোধ করতে যুদ্ধজাহাজ পাঠায়।তাইওয়ান নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের মধ্যে উত্তেজনা এত দিন বিক্ষিপ্তভাবে প্রকাশ পেয়েছে; তবে এই সর্বশেষ বিস্ফোরণ সম্ভবত সি চিন পিংয়ের জন্য সবচেয়ে গুরুতর ঘটনা। সামরিক সংঘর্ষে জড়ানো চিন বা যুক্তরাষ্ট্রের কারোরই আগ্রহ নেই। তবে একটি দুর্ঘটনার ফলে দুই দেশ একটি বড় ধরনের বিবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে—এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এটি উল্লেখযোগ্য যে তাইওয়ান এবং এর আশপাশে নিজের সামরিক মহড়ার সময় চিন প্রণালিতে মধ্যম রেখা অতিক্রম এড়াতে চিন সতর্কতা অবলম্বন করেছে। চিনের সামরিক বাহিনী সর্বশেষ যে বিমান ও সমুদ্র মহড়া চালিয়েছে, তার মধ্যে গোলা নিক্ষেপও ছিল।
পেলোসি তাঁর সফরের কারণে যে কূটনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, তার জন্য কোনো রকম অনুশোচনা প্রকাশ করেননি। তিনি তাইওয়ানে অবতরণের পরে ওয়াশিংটন পোস্ট–এ প্রকাশিত তাঁর নিজের লেখা একটি মতামতধর্মী লেখায় তিনি তাইওয়ানের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য বেইজিংয়ের সমালোচনা করেছেন। তিনি হংকংয়ে রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর ‘নিষ্ঠুর পীড়ন’ এবং এর উইঘুর মুসলমান সংখ্যালঘুদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের জন্যও বেইজিংকে দায়ী করেছেন। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কারবি পেলোসির সফর নিয়ে প্রশাসনের ভুল ধারণার কথা উল্লেখ করেছেন। কারবি বলেছেন, ‘এ সর্পিল ঘটনাপ্রবাহ কোনো ধরনের সংকট বা সংঘাতের দিকে যাক তা আমরা চাই না।’ এখন পর্যন্ত চিন পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তাইওয়ানের পণ্য চিনে রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং বেইজিংয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকোলাস বার্নসকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মধ্যরাতে তলব করা হয়েছে। পেলোসির সফর মার্কিন-চিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বৃহত্তর উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটাতে পারে। তবে বাইডেন ও সির মধ্যে একটি মুখোমুখি বৈঠক হলে এ উত্তেজনা প্রশমিত হতে পারে।(সমাপ্ত)
লেখক: মেলবোর্নের লা ট্রোব ইউনিভার্সিটির একজন ফেলো
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct