আপনজন ডেস্ক: বর্ধমানের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসে কলকাতার ফুটবল মহলে উজ্জ্বল তারকা হয়ে উঠছেন বাস্তব মিত্র। অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডরেশন থেকে ‘ডি’ লাইসেন্স প্রাপ্ত এই ক্রীড়াবিদ ফুটবল সেবার পাশাপাশি মানুষের সেবায় ব্রত নিয়েছেন। সেভাবেই তার সক্রিয়তা ক্রমশ দেখা যাচ্ছে শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেও। বাস্তব মিত্রের এই বেড়ে ওঠার মধ্যে রয়েছে বিশেষ কাহিনী। পূর্ব বর্ধমান জেলার লাখুরিয়া গ্রাম থেকে একটু একটু করে বেড়ে ওঠা এই তরুণ এখন উজ্জ্বল তারকার হাতছানি দিচ্ছেন। বাবা ছিলেন পশু চিকিৎসক ডাক্তার পরাশর মিত্র যিনি সদ্য ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মা তনুশ্রী মিত্র নাটক অভিনয় কবিতা লেখা ছিল তার ভালো বিষয়। সেই পরিবারে বেড়ে ওঠা বাস্তবের। এর পর ছোটো থেকে ফুটবলের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা ছিল। ধাপে ধাপে গ্রাম থেকে টাউন থেকে সাবডিভিশন থেকে জেলা তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। বাাব পেশায় চিকিৎসক হওয়ায় তিনি চাইতেন তার মতো হযে উঠুক ছেলে। তাই তিনি ফুটবল নিয়ে বেশি মাতামাতি পছন্দ করতেন না। বরং তিনি ছিলেন ছেলের ফুটবল খেলার বিরোধী। তাই বাস্তব মিত্র বাবার চোখের আড়ালে ফুটবল চর্চা করতেন। সেই একনিষ্ঠ চর্চা একটা সময়ে গ্রাম এলাকার বেশ নাম কুড়ায়। দক্ষ গোলকিপার হিসেবে এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তার সুনাম। তখনই বাস্তবের স্বপ্ন জাড়ে কলকাতা পাড়ি দেওয়ার। কলকাতা থেকেই ফুটবলের বিকাশ ঘটাতে বদ্ধ পরিকর হয়ে ওঠেন। কারণ, বাস্তব বুঝতে পারেন কলকাতা মাঠে না খেললে কিছু করা সম্ভব নয়। এর পর কলকাতায় পাড়ি দিয়ে খুব কষ্টের মধ্যেই দিন কাটাতে হয়। অর্জুন পুরস্কার প্রাপ্ত অ্যাথলেটিক অলিম্পিক প্লেয়ার সোমা বিশ্বাস তার একাডেমিতে বাস্তবকে থাকার সুযোগ করে দেন বলে জানান। শুধু তাই নয়, সোমা বিশ্বাসের স্বামী চারুচন্দ্র কলেজের অধ্যাপক এবং খেলাধুলা বিভাগের প্রধান সমীর বেরার হাত ধরে দিল্লি ন্যাশনাল গেমসের ময়দান-এ সুযোগ পান।
বাাব ফুটবল খেলার বিরোধী হলেও মায়ের ইচ্ছাকে কাজে লাগিয়ে ফুটবলার হওয়ার অদম্য জেদ বাস্তব মিত্রকে কলকাতা বুকে নিয়ে সাফল্য এনে দেয়। প্রতিদিনের খরচ চালানোর জন্য অনেক কষ্ট তাকে করতে হয়। কলকাতার দোকানে কাজ করা, হাওড়া স্টেশন এ রাত কাটানো এই রকম অনেক ঘটনার দৃষ্টান্ত হয়ে আছে এর পর একে একে বাস্তব মিত্রের বেড়ে ওঠা। এভাবেই লাখুরিয়া গ্রামের ছেলেটি রবীন্দ্র ঠাকুরের নামাঙ্কিত রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়া তার ঝুলিতে রয়েছে আরও অনেক পুরস্কার। তবে, তার মধ্যে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডরেশন থেকে ‘ডি’ লাইসেন্সপ্রাপ্ত হওয়ায় ফুটবল সংপৃক্ততা বেড়ে যায়। কোচের তকমা পেয়ে উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন। কিন্তু এসবের মাঝে তিনি নিবেদিত প্রাণ হয়ে উঠতে চান মানুষের সেবায়। তাই নেমে পড়েন নির্বাচনী প্রচারে। অবশ্যই তা শাসক দলের হয়ে। ২১ জুলাই কলকাতার শহীদ দিবসের প্রস্তুতিতে তাকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক মঙ্চে দেখা যায়। বাস্তব জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতার মানুষের প্রতি একাগ্রতা তাকে মানুষের সেবা করার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এখান পুরোপুরি কলকাতার বাসিন্দা হওয়ার সুযোগে কিভাবেই মানুষের পাশে থাকা যায় সেটাই ভেবে চলেছে বাস্তব। তিনি চান, এভাবেই গ্রামের তরুণরা তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হোক। তাই বাস্তব মিত্রের এখন একটাই ইচ্ছা, কীভাবে মানুষের পামে থেকে তাদের উপকার করে যাবেন। সেই লক্ষ্যেই তিনি এগিয়ে চলেছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct