দেবাশীষ পাল, মালদা, আপনজন: গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান পদের দায়িত্ব দেওয়ার নাম করে এক পঞ্চায়েত সদস্যর কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠলো তৃণমূলের ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে বামনগোলা ব্লকের মদনাবতী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের এক মহিলা পঞ্চায়েত সদস্যা রঞ্জিতা হালদার পাঁচ লাখ টাকা ব্লক সভাপতিকে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু পরবর্তীতে অনাস্থার মাধ্যমে সেই মহিলা সদস্যা প্রধান হতে পারেন নি। এখন দলের ব্লক সভাপতির কাছে পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে মদনাবতী গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল দলের পঞ্চায়েত সদস্যা রঞ্জিতা হালদারকে । এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে তৃণমূলের বামনগোলা ব্লক সভাপতি অশোক সরকারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই মালদার রাজনৈতিক মহলে তুমুল সরগোল পড়ে গিয়েছে। ওই পঞ্চায়েত সদস্যা রঞ্জিতা হালদারের অভিযোগ, শুধু আমি একাই নয়, এরকম আরেকজন পঞ্চায়েত সদস্য অর্চনা রামের কাছেও ৭ লাখ টাকা নিয়েছিলেন ব্লক সভাপতি প্রধান করে দেবে বলে। তাদের সঙ্গে প্রতারণা করে অবশেষে রানু বিশ্বাস রায় নামে অন্য এক সদস্যকে মদানাবতী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান করা হয়।
রঞ্জিতা হালদারের, অভিযোগ মদনামতি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পদে আমি ছিলাম । তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অশোক সরকার চক্রান্ত করে আমাকে এই পদ থেকে গত নভেম্বর মাসে সরিয়ে দেন । আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা হয়। প্রধান পদে টিকে থাকতে গেলে তখন আমার কাছে পাঁচ লক্ষ টাকার দাবি করে ব্লক সভাপতি । সেই টাকাও আমি দিই। আরো এক পঞ্চায়েত সদস্যাকে প্রধান করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার কাছে ৭ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু দুজনের সাথেই ব্লক সভাপতি প্রতারণা করেছে। তারই প্রতিবাদ জানিয়ে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে লিখিত চিঠি জানিয়েছি। এদিকে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন বামনগোলা তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অশোক সরকার । তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এরকম কোন ঘটনাই ঘটে নি । পঞ্চায়েত সদস্যরাই অনাস্থার মাধ্যমে নতুন প্রধান গঠন করেছেন। উল্লেখ্য , মদনাবতী গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন সংখ্যা ১৯। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিরিখে এই গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছে তৃণমূল। গত বছর নভেম্বর মাসে এই গ্রাম পঞ্চায়েতে অনাস্থা আনা হয়। সেই সময় প্রধান ছিলেন রঞ্জিতা হালদার। পরবর্তীতে অনাস্থান মাধ্যমে নতুন প্রধান করা হয় রানু বিশ্বাস রায়কে।
এদিকে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চরম অসস্তিতে পড়েছে দল। তৃণমূলের জেলার মুখপাত্র শুভময় বসু বলেন, এখানে পঞ্চায়েত সদস্যরা অনাস্থার মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন করেছেন। আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে দল কোনোভাবেই জড়িত নয়। যদি প্রাক্তন প্রধান ব্লক সভাপতিকে টাকা দেওয়ার অভিযোগ করে থাকেন, তাহলে এটা নিত্যান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। যদি সত্যি আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকে, তাহলে বলবো যিনি দিয়েছেন এবং যিনি নিয়েছেন দুজনে সমান অপরাধী । দল এই ঘটনায় কোনোভাবেই যুক্ত নয়। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সুদীপ্ত চ্যাটার্জি জানিয়েছেন, তৃণমূল এখন কাঠমানির সরকার, তা মানুষ জানতে পেরে গিয়েছে। একটা পঞ্চায়েত স্তরের সদস্যর কাছ থেকে যদি এইভাবে টাকা নেওয়া হয় , তাহলে বুঝতে হবে তৃণমূলের হেভিয়েট নেতা-মন্ত্রীদের কাছে এত টাকার উৎসের কারণ কি? বামন গোলার ঘটনা আমরা শুনেছি। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অশোক সরকারের বিরুদ্ধে এর আগেও আর্থিক লেনদেনের বিস্তর অভিযোগ উঠেছিল। আমরাই এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct