সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: শনিবার সন্ধ্যায় ঘণ্টা দেড়েকের রুদ্ধশ্বাস অপারেশনের পর কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনী (সিআইএসএফ)-র ঘাতক জওয়ানকে নিরস্ত্র করে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশ। পার্ক স্ট্রিটের অদূরে জাদুঘর চত্বরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যারাক থেকে বার করে নিয়ে যাওয়ার সময় নির্লিপ্তই দেখাল গ্রেফতার হওয়া হামলাকারী জওয়ানকে। পুলিশের গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের দিকে তাকিয়ে হাতও নাড়তে দেখা গেল তাঁকে। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ কিট স্ট্রিটে এমএলএ হস্টেলের উল্টো দিকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যারাকে গুলিচালনার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আততায়ীর নাম অক্ষয়কুমার মিশ্র। হেড কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন তিনি। তাঁর বাড়ি ওড়িশার ঢেঙ্কানলে। তাঁর ছোড়া গুলিতে রঞ্জিতকুমার সারেঙ্গি নামে অন্য এক কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ভরসন্ধ্যায় আচমকাই গুলি চালাতে শুরু করেন অক্ষয়। এলোপাথাড়ি গুলি পুলিশের গাড়ি এফোঁড় ওফোঁড় করে গিয়েছে। গুলি চলার খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে আসে কলকাতা পুলিশের বিশাল বাহিনী। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, কাঁদানে গ্যাস নিয়ে জাদুঘরের কাছে ওই ব্যারাকের সামনে জড়ো হতে থাকে পুলিশ। আসেন কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল, যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) মুরলীধর।পুলিশ সূত্রে খবর, গুলি ছোড়ার পর ব্যারাকের ভিতরেই ছিলেন আততায়ী। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন পুলিশের কর্তারা। কারণ, তত ক্ষণে জানা গিয়েছে, ঘটনার সময় ব্যারাকের ভিতর শতাধিক জওয়ান ছিলেন। পুলিশের পদস্থ আধিকারিকেরা প্রথমে মাইকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন হামলাকারী অক্ষয়কে। পুলিশ সূত্রে দাবি, উল্টো দিকে অক্ষয়ও পুলিশকে অস্ত্রশস্ত্র বাইরে রেখে ভিতরে ঢোকার আর্জি জানান। এ ভাবে বেশ কিছু ক্ষণ চলতে থাকে। এর পর বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন করে নিরস্ত্র অবস্থাতেই ভিতরে ঢোকেন কয়েক জন পুলিশ অফিসার।
সূত্র মারফত খবর, অক্ষয়কে নিরস্ত্র করতে ওখানেই তাঁর ‘কাউন্সেলিং’ করা হয়। এর পর অক্ষয় নিজে থেকেই পুলিশের কাছে ধরা দেন। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে আটক করা হয় এবং পরে গ্রেফতার। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের গাড়িতে করে অক্ষয়কে ব্যারাক থেকে বার করে আনার সময় সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা দেখে হাত নাড়তে থাকেন তিনি। গোটা ঘটনায় তিনি যে অনুতপ্ত নন, সে ভাবই প্রকাশ পেয়েছে তাঁর চোখেমুখে।একটি সূত্রের দাবি, ছুটি বাতিল হওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন অক্ষয়। দিন তিনেক আগে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছে। তার জন্য ছুটির আবেদন করেছিলেন তিনি। সেই আবেদন বাতিল হওয়ায় অক্ষয়ের মনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল বলে মনে করছে ওই সূত্রটি। তার সঙ্গে হামলার ঘটনার যোগ থাকতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীরাও। অন্য দিকে, অক্ষয়ের গুলিতে যাঁর মৃত্যু হয়েছে, সেই রঞ্জিতের বাড়ি ওড়িশাতেই। অক্ষয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কেমন ছিল, পুরনো শত্রুতা ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনা প্রসঙ্গে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘গোটা ঘটনায় এক জন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্য এক জন। তাঁর নাম সুবীর ঘোষ। অন্তত ১৫ রাউন্ড গুলি চলেছে। কম্যান্ডো এনে অপারেশন চালানো হয়েছে। হামলাকারীকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আত্মসমর্পণ করানো হয়েছে। আটক করার পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত শেষে জানা যাবে কেন তিনি গুলি চালিয়েছেন।’’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct