সংসার সুখে..
শংকর সাহা
সেইবারে ঘরের চালে নতুন টিন দেবার সময়ে ব্যাঙ্ক থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা লোন নিয়েছিল ভবতোষ। অভাবের সংসারে লোন নেওয়া ছাড়া হয়তো তার কোনো উপায়ও ছিলনা। সেইজন্যে মাসে মাসে কিস্তি বাবদ হাজার দুয়েক টাকা দিতে হয় ব্যাঙ্কে। ছোট্ট পানের দোকান করে মাসে মাসে লোন শোধ করতে হাতের কাছে প্রায় সবটাকাই শেষ হয়ে যেত। এদিকে বাড়িতে চার চারটে মানুষের দুবেলা দুমুঠোর ভাতের ব্যবস্থা করতে যেন হিমশিম খেতে হয় ভবতোষকে। সুনন্দা ভবতোষের স্ত্রী। এ সংসারে বিয়ে হয়ে আসার পর থেকে সে হাসিমুখে অভাবকে মেনে নিয়েছে। আজ লকডাউনে ভবতোষের ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ। দোকান প্রায় চলছে না বললেই চলে। সংসার খরচ তার উপরে মাসে মাসে কিস্তির টাকা।চিন্তায় ভবতোষ প্রায় ভেঙ্গে পড়ে। বাড়িতে এলেও তেমন কথা বলেনা। সুনন্দা ভবতোষের মনের অবস্থা সব বুঝতে পারে।
সেদিন ছিল সোমবার। মাসের প্রথমেই কিস্তির টাকা মিটিয়ে দেয় ভবতোষ কিন্তু এমাসে তার টাকার জোগাড় হয়নি।দোকান বন্ধ করে সাইকেল নিয়ে রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছে এমন সময় ব্যাঙ্কের এককর্মীর সাথে দেখা। লজ্জায় ভবতোষ মাথা নিচু করে থাকে। কিছু বলতে যাবে এমন সময় ব্যাঙ্কের কর্মীটি বলে বসেন, ‘দাদা,আপনার বাড়িতে গিয়েছিলাম কিস্তির টাকা আনতে। আপনি ছিলেন না। বউদি দিয়ে দিয়েছেন” ভবতোষ অবাক হয়ে যায়। ব্যাঙ্ককর্মীকে নমস্কার জানিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। প্রায় লজ্জিতমুখে বাড়ি এসে বারান্দায় হেলান দিয়ে বসে সে। সুনন্দা জলের গ্লাসটি তার হাতে দিতেই সে বলে,’ আচ্ছা,তুমি আজ কিস্তির টাকা দিয়েছো স্যর বললেন কিন্তু ওতো গুলো টাকা এইসময়ে কোথায় পেলে ?’ সুনন্দা হেসে বলে,’ তুমি তো কোনোদিনও নিজের সমস্যার কথাগুলো বলনা আমায়। নিজে চেপে রেখে কষ্ট পাও। তুমি বিকেলে দোকানে চলে গেলে আমি আর তমা কাকিমা সেঁলাইয়ের কাজ করি। আমি জানি তোমায় বললে করতে দিতে না ।তাই বলিনি ভব?’ “ তাই বলে ওত গুলো টাকা’? ‘তাতে কী? সংসারটা বুঝি তোমার একার? আমি সামান্য একটু পয়সা জমিয়েছি তাই দিতে পারলাম..’ ভবতোষ সুনন্দার দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। চোখটি তার অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ে হঠাৎই সুনন্দা ডেকে বলে,’হাত ধুয়ে খেতে এসো। আজ তোমার পছন্দের শুক্তো করেছি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct