সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন বন্ধ করার জন্য এই আইন করা হয়েছিল, কিন্তু গত কয়েক বছরে এই আইন রাজনৈতিক বিরোধীদের প্যাঁচে ফেলার জন্য ব্যাবহার করা হয়েছে। আগে প্রতি বছর গড়ে ১০০ থেকে ২০০ মামলা হতো, কিন্তু গত তিন বছরে ৫৬২ টা মামলা, তারপর ৯৮১ ও ১১৮০ টা মামলা হয়েছে এই আইনে। প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট অনুসারে, ইডি আপনাকে সন্দেহ করেছে, তাইই আপনি এখন একজন অপরাধী। এখন আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনি নির্দোষ। এ নিয়ে লিখেছেন যোগেন্দ্র যাদব। আজ প্রথম কিস্তি।
সকালবেলা। জোরে জোরে দরজায় বেল বাজছে। আপনি দরজা খুললেন। খুলেই কিছু অফিসারদের দেখতে পেলেন: “আমরা ইডি। আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাদের সাথে যেতে হবে। এক্ষুণি।” আপনি তাদের সাথে তাদের অফিসে পৌঁছালেন। আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয়: “আপনি কি গত বছর আপনার একটা প্লট গুপ্তজিকে বিক্রি করেছিলেন?” আপনি বললেন: “হ্যাঁ, আমার নিজস্ব প্লট ছিল, কোনো বিতর্কিত সম্পত্তি ছিল না। দু নম্বরি করে বিক্রি করিনি, কোনো কালো মামলাও নেই। সঠিক পন্থায় নথিভুক্ত, সাক্ষী, সমস্ত প্রমাণও আছে আমার কছে।” তারা আপনার প্রমাণের প্রতি একটুও আগ্রহী নয়: “আপনি কি জানেন যে গুপ্তা, যার কাছে আপনি প্লট বিক্রি করেছেন, ব্যবসায় কারচুপি করার জন্য তার বিরুদ্ধে ৪২০ র মামলা আছে?” আপনি মুচকি হাসলেন। ত্রপর বললেন: “দেখো ভাই, আমি তার কাছে প্লট বিক্রি করেছি, কন্যাদান করিনি। সম্পত্তির এজেন্ট চুক্তিটা করেছে। পেমেন্ট চেকের মাধ্যমে এসেছে। তার সাথে, তার পরিবার বা ব্যবসার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। মাস কয়েক আগে আমি খবরের কাগজে পড়লাম যে তার বিরুদ্ধে কিছু ফর্ম রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। কিন্তু সেসব তো আমাদের চুক্তির পরে ঘটেছে।” আপনি মনে করলেন,যে ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়েছে। বিষয়টা মিটে গেছে। কিন্তু তখনই আপনার মাথায় পাহাড় ভেঙে পড়বে: “মনে হচ্ছে আপনি প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট আইনটার ব্যাপারে কিছু জানেন না। আপনি এই আইনের অধীনে একজন অপরাধী। কারণ অপরাধের আয় আপনার পকেটে পৌঁছেছে। কাজেই আপনিও একজন অপরাধী।
এই অপরাধের দরুন আমরা আপনাকে গ্রেপ্তার করছি!” এইবার আপনার মনে পড়ল যে গত মাসে আপনার স্থানীয় এসডিএমের সাথে আপনার কথা কাটাকাটি হয়েছিল। তিনি তখন আপনাকে হুমকি দিয়েছিলেন, “ তোকে জেলে পিষে মারব!” তারপরও আপনি নার্ভাস হয়ে পড়েননি: “যদি গ্রেফতারই করতে চান, তাহলে এফআইআর দিন আমায়”। ইডি অফিসার তাচ্ছিল্য ভরে হাসলেন: “আমাদের এখানে এফআইআর হয় না। এটা থানা নয়। আমাদের কাছে ইসিআইআর নামে একটা প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরী হয়।” হঠাৎ আপনি বলে উঠলেন: “আচ্ছা ভাই, ঠিক আছে। কিন্তু, সে নাম যাই হোক না কেন, আমাকে এর একটা কপি তো দিন অন্তত।” তিনি আবারও সেই একইরকম ভাবে হাসলেন: “না, ইসিআইআর একটা গোপন নথি। এটা অপরাধীকে দেওয়া যায় না। আর হ্যাঁ, এটাও শুনুন। আপনার বিচার সিআরপিসির কথায় হবে না। আমাদের নিজস্ব নিয়ম আছে। আর সেটাও, গুপ্ত!” আপনি অবাক হয়েছেন: “ভাই, যে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়, তাকেও এফআইআর দেওয়া হয়। কোর্ট মার্শালের নিয়মও দেওয়া হয়। আর একটা কথা। আমি একজন অভিযুক্ত, এখনও অপরাধী নই।” তিনি বাঁকা হাসি হাসছেন: “প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট অনুসারে, ইডি আপনাকে সন্দেহ করেছে, তাইই আপনি এখন একজন অপরাধী। এখন আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনি নির্দোষ।”
লেখক ‘স্বরাজ ইন্ডিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা।
অনুবাদ: প্রতীক্ষা ঘোষ
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct