আপনজন ডেস্ক: “পাঁপড় তৈরির ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন?” আজকের এই নিবন্ধে আপনাদের কে কিভাবে পাঁপড় তৈরির ব্যবসা শুরু করতে পারবেন তা নিয়ে আলোচনা করব। আজকাল আমাদের দেশে ছোট ছোট ব্যবসা খুব দ্রুত হারে বাড়ছে। মানুষরা তাদের বাড়ি থেকে ছোট ক্ষুদ্র শিল্প শুরু করছে। এবং দেখা গেছে এই ধরনের কাজে মহিলারাই বেশি করে অংশ গ্রহণ করছে। আজকের এই নিবন্ধ পড়লে আপনারা জানতে পারবেন পাঁপড় তৈরির ব্যবসা কিভাবে শুরু করে কিভাবে আপনিও অনেক টাকা আয় করতে পারবেন।
পাঁপড় তৈরির ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন?
আমাদের দেশে পাঁপড় ব্যপক হারে ব্যবহার করা হয়। পাঁপড় ব্যবহৃত হয়না এমন কোন বাড়ি আপনি খুঁজে পাবেন না। আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানে, উৎসবে, বিয়েতে পাপড় ব্যবহৃত হয়। কারণ মানুষ খাওয়ার পর ও খাবারের সঙ্গে পাপড় খেতে পছন্দ করে। এই সব কারনের জন্য পাঁপড়ের চাহিদা বাজারে অনেক বেশী। আবার দেখা গেছে পাঁপড় ব্যবসায় পুরুষদের থেকে নারীদের অবদান অনেক বেশী। যে সমস্ত ছোট ছোট পাঁপড় তৈরির ব্যবসা গড়ে উঠেছে তার ভেতর বেশির ভাগই মেয়রা নিজের বাড়ি থেকে এই কাজ শুরু করেছেন বা করেন।
পাঁপড় তৈরির ব্যবসায় পাঁপড়ের চাহিদা কত?
শুধু ভারতেই নয়, ভারত বাংলাদেশ, পাকিস্থান সহ সমগ্র এশিয়ার বেশিরভাগ দেশেই মানুষ পাঁপড় কে খাদ্য উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করে। এছাড়া এখন ইউরোপ ও আমেরিকাতে পাঁপড় রপ্তানি করা হয়। ভারত থেকে প্রায় ১২১ টি দেশে পাঁপড় রপ্তানি করা হয়। ২০২০-২০২১ সালে ভারত থেকে ৩৪ মিলিয়ন USD টাকার পাঁপড় রপ্তানি করা হয়েছে।তাই এই ব্যবসা করতে পারলে দেশের সঙ্গে সঙ্গে বিদেশেও অনেক বড় বাজার আছে।
পাঁপড় তৈরির ব্যবসা শুরু করতে হলে কতটা জায়গার দরকার?
আপনি যদি পাঁপড় তৈরির ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে প্রথমে আপনাকে কতটা জায়গা লাগবে সে সম্পর্কে ধারনা রাখতে হবে। পাঁপড় তৈরির ব্যবসা শুরু করতে কমপক্ষে ৮০ থেকে ১০০ বর্গমিটার জায়গার প্রয়োজন হবে।কিন্তু এই কাজটি ঘরে বসেও শুরু করা যেতে পারে। কারন পাঁপড় তৈরি করার জন্য কিছুটা জায়গাও দরকার এবং বাকি একটা বড় জায়গা দরকার পাঁপড় শুকানোর জন্য।
পাঁপড় তৈরির ব্যবসায় কাঁচামাল কি লাগে?
বাজারে অনেক ধরনের পাঁপড় আছে। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের পাঁপড় তৈরি করা যায়।আপনি যে ধরনের পাপড় বানাতে চান সেই অনুযায়ী কাঁচামাল ব্যবহার করতে হবে। কিছু উপাদান নিম্নরূপ – আলু, ডাল, তেল, গরম মশলা, লবণ, কালো মরিচ, সোডিয়াম বাইকার্বনেট, হিং ইত্যাদি। তবে বাজারে বিভিন্ন রকমের পাঁপড় তৈরি হয় যেমন চালের পাঁপড়, আলুর পাঁপড়, ডালের পাঁপড়, সাবুর পাঁপড় ইত্যাদি। তাই এই সমস্ত আলাদা আলাদা পাঁপড়ের জন্য আলাদা আলাদা কাঁচামাল লাগবে।
পাঁপড় তৈরির ব্যবসায়, কি ধরনের পাঁপড় তৈরির মেশিন লাগবে ?
পাঁপড় তৈরির ব্যবসায় বেশ কিছু রকমের মেশিনের প্রয়োজন হয়। যেমন –
গ্রাইন্ডিং মেশিন,
মিক্সার মেশিন,
পাপড় প্রেস মেশিন,
শুকানোর মেশিন
পেকিং করার মেশিন ইত্যাদি।
তবে পাঁপড় কে যদি রোদে শুকানোর মত সময় এবং জায়গা থাকে তবে শুকানোর মেশিন বা ড্রাইং মেশিনের প্রয়োজন হয় না।
পাঁপড় তৈরির পদ্ধতি
পাঁপড় তৈরি করতে হলে নিচের পদ্ধতি দেখুন –
প্রথমে যে উপাদান দিয়ে পাঁপড় তৈরি করবেন তার ময়দা বনিয়ে নিতে হবে। বা তাকে ভাল করে পেশাই করে নিতে হবে। পেশাইয়ের জন্য গ্রাইন্ডিং মেশিন ব্যবহার করতে পারেন। এর পরে যা যা উপাদান মিশ্রন করবেন যেমন লবণ, কার্বনেট, মশলা ইত্যাদি জলের সঙ্গে মিশিয়ে ছোট ছোট বল বানাতে হবে। এবার পাপড় প্রেস মেশিন দিয়ে ১মিমি পুরুতে চাপা দেওয়া হয়। চাপা বৃত্তাকার আকৃতির পাপড় 14-15% আর্দ্রতা পাঁপড় তৈরি হয়। এরপর একে শুকানোর মেশিন দিয়ে শুকিয়ে নেওয়া হয়।
পাঁপড় তৈরির ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন?
পাঁপড় তৈরির ব্যবসায় মূলধন কত লাগবে ?
পাঁপড়ের ব্যবসা শুর করতে হলে আপনাকে প্রথমে চিন্তা করে নিতে হবে আপনি কত উৎপাদন করবেন । উৎপাদনের উপর নির্ভর করে আপনি ব্যবসায় ১০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন। আপনি কতটা খরচ করতে চান সেটা আপনার ব্যাপার। বেশির ভাগ মানুষ প্রায় ১ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে। এবং এই ১লাখ টাকা মূলধন নিয়োগ করলে আপনি একটা ভাল ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
পাঁপড় তৈরির ব্যবসা করার জন্য লোণ কোথায় পাবেন ?
আপনি যদি পাঁপড় তৈরির ব্যবসা করার জন্য লোণ নিতে চান তবে আপনি সরকারি সাবসিডি লোণ এর জন্য আবেদন করতে পারেন। আপনি প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা থেকে লোণ নিতে পারেন। এখানে আপনি ২৫ লাখ পর্যন্ত লোণ পেয়ে যাবেন। এছাড়া আপনি রাজ্যসরকারের BSKP লোণ ও পেতে পারেন এতে আপনি ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোণ পেতে পারেন। এই সমস্ত লোণে সরকার থেকে ভর্তুকি পাবেন।
পাঁপড় তৈরির ব্যবসা থেকে কত টাকা আয় করা যায় ?
পাঁপড় তৈরির ব্যবসার আয় অনেকটা নির্ভর করে আপনি কতটা পরিমাণ পাঁপড় তৈরি করতে পারছেন। কেননা এই ব্যবসার বাজার আনেক বড় , বাজারে মাল বিক্রি করতে কোন অসুবিধা হয় না। কিন্তু আপনাকে মালের গুনমানের উপর বেশী নজর দিতে হবে। মান ভাল থাকলে বিক্রিতে কোন অসুবিধা হয় না। তবে হিসেব অনুযায়ী এই ব্যবসায় ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে আপনি মাসে প্রায় 2৫ থেকে 30 হাজার আয় করতে পারেন।
পাঁপড় তৈরির ব্যবসার জন্য লাইসেন্স এবং রেজিসট্রেশান
আপনি যদি পাঁপড় তৈরির ব্যবসা শুরু করতে চান তবে আপনাকে কিছু লাইসেন্স এবং আপনার ব্যবসার কিছু রেজিসট্রেশান করাতে হবে। যা নিচে দেওয়া হল –
FSSAI লাইসেন্স:- পাস্তা যেহেতু একটি খাদ্য পণ্য, এবং খাদ্য পন্যের ব্যবসা করতে হলে FSSAI লাইসেন্স এর দরকার হয়। তাই আপনাকে ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি এবং FSSAI লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে।
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত লাইসেন্স:- খাদ্য পণ্য তৈরি করতে হলে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত লাইসেন্স নেওয়া দরকার হয়।এর জন্য আপনাকে স্থানীয় বা রাজ্য স্বাস্থ্য বিভাগের অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
বিজনেস লাইসেন্স: – ব্যবসা করার জন্য আপনাকে ট্রেড লাইসেন্স করা আবশ্যক। এছাড়াও আপনাকে MSME এর অধীনে ব্যবসা রেজিসট্রেশান করতে হবে। এর জন্য, আপনি আপনার স্থানীয় ব্লক বা কপরেসান কর্তৃপক্ষ বা উদ্যোগ আধার থেকে ব্যবসা সম্পর্কিত সমস্ত লাইসেন্স এর জন্য তথ্য নিতে পারেন এবং ব্যবসা শুরু করার আগে সমস্ত রকমের এই ধরনের কাজ করে নিতে পারেন।
পাঁপড় তৈরির ব্যবসা মার্কেটিং কিভাবে করবেন ?
পাঁপড় তৈরির ব্যবসায় মার্কেটিংএর জন্য আপনাকে ভীষণ রকম প্রচার করতে হবে। আপনি সংবাদপত্র, মাসিক পত্রিকা তে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন।আপনার কাছাকাছি লোকাল এলাকাতে বড় বড় মুদি দোকান গুলোতে সরবরাহ করুন। পাইকারি মুদি দোকানেও রাখতে পারেন। আপনার শহর বা আসে পাসের শহরের মল গুলিতে আপনার মাল রাখুন। সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য ও নিতে পারেন। আপনার পন্যের জন্য একটি youtube চ্যনেল বানান ও প্রাচার করুন। বাকি সোশ্যাল মিডিয়াতে ও পোস্ট করুন। প্রথেমে আপনাকে জানাতে হবে আপনার পণ্য সম্পর্কে, তারপরে পণ্যের যদি মান ও দাম কম থাকে তাহলে আপনার কারখানা থেকে সবাই এই পণ্য নিয়ে যাবে।
নিচের বিষয়গুলোর উপর নজর রাখুন
পাঁপড়ের ব্যবসায় পাঁপড়ের গুণাগুণ ও স্বাদের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে, কারণ পাঁপড় স্বাদ ও গুণমানের উপর নির্ভর করে বেশি বিক্রি হয়। মান ভালো না হলে এর মার্কেটিং করতে ভীষণ সমস্যা হতে পারে। পাঁপড়ের ব্যবসা শুরু করার আগে আপনার লোকাল বাজার এর চাহিদা সম্পর্কে জেনে নিন, কারণ এখনকার দিনে প্রতিটি ব্যবসাতে ভীষণ প্রতিযোগিতা তাই দাম ও চাহিদা যেনে তবে শুরু করুন। পাঁপড় তৈরি করা খুবই লাভজনক এবং সহজ ব্যবসা, যা আপনি আপনার বাড়ি থেকে শুরু করতে পারেন। বাজারে এই জিনিসটির অনেক বেশী ডিমান্ড আছে তাই বিক্রি নিয়ে খুব একটা সমস্যা হয় না।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct