নিজস্ব প্রতিনিধি, বীরভূম, আপনজন: অজয় নদের এপারে বীরভূমের নানুর,অজয় নদীর ওপারে পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট। সীমান্তবর্তী নানুর - মঙ্গলকোট দুটি এলাকায় রাজ্য রাজনীতিতে ঘুরে ফিরে আসে বারবার, খুন রাহাজানি বিশেষ করে অজয় নদের দেদার বালিলুট নিয়ে। ঠিক সেইরকমই গত বুধবার নানুরের বাসাপাড়া এলাকায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই ও ইডির আচমকা বড়সড় অভিযান চললো।বীরভূম জেলা পরিষদের প্রভাবশালী পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ এর বাড়িতে।যদিও তিনি বাড়িতে ছিলেন না। পাশাপাশি এই কর্মাধ্যক্ষ এর বকলমে এক হিসাব রক্ষকের বাড়িতেও চলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের অভিযান।বেশকিছু মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। গরু পাচার মামলায় বীরভূমের দাপুটে নেতা অনুব্রত মন্ডল 'ঘনিষ্ঠ' ধৃত সায়গল হোসেনের বিপুল সম্পত্তির খোঁজে নাকি ভোট পরবর্তী হিংসা মামলার তদন্তে তা পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে উঠেনি।তবে নানুরের এই সিবিআই ইডির অভিযানে তটস্থ সীমান্তবর্তী পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট এলাকা। নানুরের সীমান্তবর্তী এই মঙ্গলকোটের নুতনহাট এলাকায় এক জমি দালাল রয়েছেন। যিনি মঙ্গলকোট, নানুর, বোলপুর, পাথরচাপরি এলাকায় বিভিন্ন জমি কেনাবেচার দলিল করেছেন 'পাওয়ার অফ এটনি' দেখিয়ে।জমি /জায়গা কেনবার সময় আর্থিক লেনদেনের উল্লেখ নেই দলিলগুলিতে ।
তবে ওই দালাল সম্পর্কিত জমি/জায়গা বিক্রি করার সময় দলিলে অর্থের লেনদেন রেখেছে।কেনবার সময় নেই কেন! এটাই বড় রহস্যের।শতাধিক দলিলে এইসব কর্মকাণ্ড রয়েছে। এইসব এলাকায় ( পূর্ব বর্ধমান ও বীরভূম) সাব রেজিস্ট্রার অফিসে গত দশ বছরের দলিল খোঁজা হলে অনেক তথ্য কেন্দ্রীয় আর্থিক বিষয়ক তদন্তকারী সংস্থা ইডি পেতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। পাশাপাশি মঙ্গলকোটের নুতনহাট এলাকায় ওই জমি দালালের প্যান কাডে রিপোর্ট নিলে ব্যাংকিং লেনদেনের তথ্য এক দিগন্ত খুলে দিতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।এমনকি বিদেশ থেকে অর্থ লেনদেনে হাওলা যোগও পেতে পারে! এমনকি এই জমি দালাল সুদের কারবারে সিদ্ধহস্ত। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের একাংশ আধিকারিকদের সাথে দহরম মহরম দেখা যায়। বিভিন্ন দলীয় অফিসে জমি জায়গা বিষয়ক সালিশি সভায় তার এক।গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।গত বুধবার বীরভূমের নানুরে সিবিআই ও ইডির অভিযানে অভিযুক্তদের সাথে এই জমি দালালের 'বিশেষ সম্পর্ক' রয়েছে। অনেক জায়গায় নামে - বেনামে নেতাদের সম্পত্তি গড়তে এই জমি দালালের সিন্ডিকেট কে ঠিকমতো চিহ্নিতকরণ করতে পারলে সিবিআই বিশেষ করে ইডির তদন্ত অনেক সহজ হয়ে যাবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তবে সবটাই তদন্ত সাপেক্ষ। অভিযুক্ত ওই জমি দালাল বরাবরই এইসব অভিযোগ অস্বীকার করে গেছেন। সাম্প্রতিক সময়কালে গরু পাচার কান্ডে পুলিশের এক কনস্টেবল সায়গলের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি দেখে বাকরুদ্ধ হয়েছে অনেকেই। মহানগরে দামি দামি ফ্ল্যাট, অজশ্র জমি জায়গার দলিল, ৭০ কেজি সোনা,ইত্যাদি ইত্যাদি ! তাহলে গরু পাচারের মুক্তাঞ্চল থানা, মহকুমা, জেলার আধিকারিকদের একাংশের খোঁজখবর নিলে আরও অজানা তথ্য প্রকাশ পাবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। অনেকেরই দাবি- 'কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই ও ইডি এইসব এলাকায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারদের একাংশের দায়িত্বভারের ইতিহাসে নজরদারি চালালে বিপুল সম্পত্তির ভূগোলের সন্ধান পেতে পারেন'।
মূলত বীরভূম - পূর্ব বর্ধমান - মুর্শিদাবাদ - নদীয়া জেলা গুলিতে বেশ কয়েকজন অফিসার এমন আছেন, যাঁরা ২০১৪ থেকে এইসব এলাকায় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। এইসব পুলিশ অফিসারদের থানায় গাঁজা পাচারের মামলা বেশি হয়েছে বলে দাবি বিভিন্ন সুত্রে। শুধু গরু পাচার নয়, বালি পাচারে শীর্ষে এইসব এলাকাগুলি। অজয় - ভাগীরথী (গঙ্গা) নদীর উপকূলে এইসব এলাকা। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ কয়লা পাচার কান্ডে ইডির তলবও পেয়েছেন। এখন দেখার গরু পাচার মামলায় সিবিআই এবং ইডি নানুর ও মঙ্গলকোটে কোন যোগসূত্র খুঁজে পায় কিনা?
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct