সোমবার দুপুরে নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, বুধবার মন্ত্রিসভায় রদবদল তিনি করবেন। সেই রদবদলই হল বুধবার বিকেলে। রাজ্যের অপসারিত মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সংক্রান্ত কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই মমতা চাইছিলেন, ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তি’র লোকজনকে সরকার পরিচালনায় নিয়ে আসতে। তবে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং সাধন পান্ডে মারা গিয়েছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে। তাঁদের দফতরগুলো প্রায় খালি পড়ে রয়েছে। আমার পক্ষে এতগুলো দফতর একা দেখা সম্ভব নয়। তাই মন্ত্রিসভায় ছোট রদবদল করছি।’’ এই রদবদলে নতুন মন্ত্রী হলেন অনেকে। মন্ত্রিত্ব হারালেনও অনেকে। লিখেছেন সুব্রত রায়....
স্নেহাশিস চক্রবর্তী (পূর্ণমন্ত্রী) : স্নেহাশিস চক্রবর্তী হুগলির জাঙ্গিপাড়ার বিধায়ক। এর আগে তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতির দায়িত্ব ছিলেন তিনি। দলের হয়ে বিভিন্ন টিভি-শোতে বিতর্কে অংশ নেন তিনি। এবার তাঁকেই মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্বে আনলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রী হয়ে স্নাহাশিস বলেন, ‘সংগঠনে নেত্রী যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তা করেছি। এবার প্রশাসনের দায়িত্বে আনলেন উনি। যে দায়িত্ব থাকবে সেটা পালন করব। উন্নয়ের কাজ করব।’
বিপ্লব রায় চৌধুরী (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী) : পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পূর্ব পাঁশকুড়ার বিধায়ক বিপ্লব রায় চৌধুরী হলেন মমতা মন্ত্রিসভার স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী। বর্তমানে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প নিগমের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন তৃণমূলের এই প্রবীণ বিধায়ক। মন্ত্রী হয়েই বিপ্লব বলেন, ‘চ্যালেঞ্ডের কাজ পেয়েছি, করে দেখাতে হবে। আশা করি মন্ত্রিসভার কাজ আরও সুচারুভাবে হবে।’
পার্থ ভৌমিক (পূর্ণমন্ত্রী) : নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক গত কয়েক বছরে ব্যারাকপুরে লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের স্বম্ভ হয়ে উঠেছেন। শিল্পাঞ্চলে দলের জয়েও তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে মনে করেছে শাসক শিবির। এরপরই পার্থকে মন্ত্রি করা হল। পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘দলনেত্রীর নির্দেশ পালন করব। মা, মাটি, মানুষের উন্নয়নে আরও গতিশীল মন্ত্রিসভা হল। বাংলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশ্বাস করেন, যান সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই দুই নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলা দেশের সেরা হওয়ার লক্ষ্যে এগোবে।’
বীরবাহা হাঁসদা (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী) : ঝাড়গ্রাম কেন্দ্র থেকে একুশের ভোটে জোড়-ফুল টিকিটে জয় পেয়েই রাজ্যের বন-দফতরের প্রতিমন্ত্রী হন বীরবাহা হাঁসদা। এ দিন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন তিনি। বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মনে করেছিলেন তাই প্রতিমন্ত্রী থেকে স্বাধীন দায়িত্বে তুলে এনেছেন। কাজের দায়িত্ব আরও বাড়ল। মন, প্রণা দিয়ে কাজ করতে চাই।’
তাজমুল হোসেন (প্রতিমন্ত্রী) : প্রতিমন্ত্রী দায়িত্বে আনা হল মালদহের হরিশচন্দ্রপুরের বিধায়ক তাজমুল হোসেনকে।
উদয়ন গুহ (পূর্ণমন্ত্রী) : বামফ্রন্ট আমলে কৃষিমন্ত্রী কমল গুহর ছেলে। উদয়ন গুহ তিনি বাবার হাত ধরেই রাজনীতিতে এসেছিলেন। কমল গুহ বামফ্রন্টের শরিক দল ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রভাবশালী নেতা হিসাবে দীর্ঘদিন দিনহাটার বিধায়ক ছিলেন। উদয়নেরও রাজনীতিতে হাতেখড়ি সেই ফরোয়ার্ড ব্লক থেকে। ২০০৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ফরোয়ার্ড ব্লকের হয়ে দিনহাটায় প্রথম প্রার্থী হন উদয়ন। উপনির্বাচনে দিনহাটা কেন্দ্র থেকে রেকর্ড ভোটে জিতে বিধায়ক হয়েছেন উদয়ন গুহ। এবার তাঁকে পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্বে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শপথ নেওয়ার পর উদন গুহ বলেন, ‘আলাদা অনুভূতি। বাবা বামফ্রন্ট্রের মন্ত্রী ছিলেন ২০ বছর, এবার আমি হলাম। মুখ্যমন্ত্রী আস্থা রেকেছেন, তাঁর বিশ্বাসের যোগ্য মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করব। চ্যালেঞ্জ এলে তা মোকাবিলা করব।’
বাবুল সুপ্রিয় (পূর্ণমন্ত্রী) : মন্ত্রিসভায় বাবুলের জায়গা পাওয়া প্রত্যাশিতই ছিল। রাজ্য মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রী হলেন তিনি। ২০১৪ সালে আচমকাই উল্কার মতো রাজ্য রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ করেন বাবুল। বাবা রামদেবের সুপারিশে আসানসোল কেন্দ্রে বিজেপির টিকিট পান তিনি। প্রথম বারেই তৃণমূলের প্রার্থী দোলা সেনকে পরাজিত করে সাংসদ হন। পরিচিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্নেহধন্য হিসাবে। পরে বিজেপি ত্যাগ করে তৃণমূলে যোগদান করেন তিনি। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণের পর উপনির্বাচনে জেতেন বালিগঞ্জ থেকে। এবার সেই বাবুলই মমতা মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্বে। বাবুল বলেন, ‘খুব ভাল লাগছে। দিদি আমার গত অগাস্টের ভগ্ন হৃদয়ে মলম দিলেন। আজ আমি খুব খুশি। মমতাদি যেভাবে বলবেন সেভাবেই কাজ করব।’
প্রদীপ মজুমদার (পূর্ণমন্ত্রী) : রদবদলের পর বাংলার মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রীর জায়গা পেলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি দফতরের প্রধান উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার। ভোটের রাজনীতিতে প্রথম দিকে দেখা না গেলেও ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রদীপকে দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের প্রার্থী করেন দলনেত্রী মমতা। কিন্তু তিনি পরাজিত হন। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে আবার ওই একই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়। ভোটে জেতার পর দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক হন। মন্ত্রী যে-ই হোন না কেন, প্রদীপের পরামর্শ মেনেই রাজ্যের কৃষি দফতরের যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শপথের পর তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মস্তিষ্কপ্রসূত সব কাজ আমরা রূপায়ণের চেষ্টা করেছি। তাতে মানুষ উপকৃত হয়েছেন। সেই কাজই এবার আরও দায়িত্বের সঙ্গে পালন করতে পারব।’
সত্যজিৎ বর্মন (প্রতিমন্ত্রী) : রাজ্যের মন্ত্রিসভায় রদবদলের পর প্রতিমন্ত্রী হলেন সত্যজিৎ বর্মণ। চল্লিশের কোঠা পার করা তৃণমূল নেতা সত্যজিতের বাংলার রাজনীতিতে আগমন ২০০১ সালে। প্রথম জীবনে কংগ্রেসের সদস্য হলেও ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের পর তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। সত্যজিৎ ২০২১ সালে হেমতাবাদ কেন্দ্র থেকে জিতে প্রথম বার বিধায়ক হন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct