আপনি এই বছরের পরিস্থিতিটা দেখুন। প্রতি বছরের মতো এবারও বন্যায় ভেসেছে অসম। দু-সপ্তাহ আগে, রাজ্যের ২৪ টা জেলার ১৪ লাখ মানুষ বন্যার কবলে পড়েছিল। প্রায় দেড় লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে থাকতে বাধ্য হয়েছে। এমনিতে তো অসমের বন্যার পর প্রতি বছর বিহারে বন্যার মরশুম আসে। কিন্তু, এবার ব্যাপারটা উল্টে গেছে। যেমন, প্রতি দুই-তিন বছরে একবারই হয়। কোনও রাজ্যে বন্যা ও কোনও রাজ্যে খরা প্রসঙ্গ নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন যোগেন্দ্র যাদব। আজ শেষ কিস্তি।
আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই খরা দুর্ভিক্ষে পরিণত হতে পারে। এবং তারপরে, ইতিহাসের সেই চেনা পুনরাবৃত্তি যা পি সাইনাথ তার বিখ্যাত বই “ এভরি ওয়ান লভস এ গুড ড্রট “ (প্রত্যেকে একটি ভাল খরা পছন্দ করে) এতে বর্ণনা করেছেন। সরকারি কমিটি তৈরী হবে, ত্রাণ দেওয়া হবে, ফাইল ও অফিসারদের পেট বড় হবে, এবং সব শেষে ভাগ্যের দোহাই দিয়ে কৃষক বেঁচে থাকবে। আমরা কি এই প্রতি বছরের চেনা ট্র্যাজেডির চক্রব্যুহ থেকে মুক্ত হতে পারি? হ্যাঁ, যদি আমরা একটা নতুন উপায়ে চিন্তা করতে পারি এবং সেই নতুন চিন্তাকে বাস্তবায়ন করার সাহস পাই। গত দুই দশকে অনেক পরিবেশবিদই বন্যা ও খরাকে নিয়ে নতুনভাবে ভাবিয়েছেন এবং সমাজের পুরনো চিন্তাধারাকে নতুনভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। কয়েক দশক ধরে বিহারে বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থ চেষ্টা পর্যবেক্ষণ করার পরে, দীনেশ মিশ্র বলেছেন যে আমাদের বন্যা মুক্তির মতো বিভ্রান্তিকর স্লোগান থেকে মুক্তি পাওয়া উচিৎ। বর্ষাকালে অতিবৃষ্টি, জলাবদ্ধতা, নদীতে বন্যা এবং বাঁধ থেকে জল বের হওয়া প্রকৃতির সাধারণ নিয়ম, এটা কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা বা দুর্ঘটনা নয়। নদীগুলোকে বাঁধে বাঁধার চেষ্টা শুধু বৃথাই নয়, বিপজ্জনকও বটে।
এ কারণে নিকাশি-নালার মুখগুলো বন্ধ হয়ে দুই-তিন দিনের বন্যা এখন দুই-তিন মাসের বন্যায় পরিণত হয়েছে। নদীর ধারে বসবাসকারী মানুষজন সবসময়ই জলের সাথেই বাঁচতে জানত, আমাদেরও এবার সেটা শিখে নেওয়া জরুরি। পাহাড়ের বনজঙ্গল না কাটলে, নদীর চারিদিকে বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোতে বসতি স্থাপন না করলে, জল প্রবাহের পথে রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি তৈরী না করলে বন্যার বিপুল ক্ষয়ক্ষতির কিছুটা আঁটকানো যায়।একইভাবে, খরা মোকাবিলা করার জন্য, আমাদের প্রত্যেকটা জমিতে খালের জল বা নলকূপের জল বা সেচের জলের ব্যবস্থা হবে এই দিবাস্বপ্ন ত্যাগ করতে হবে, বৃষ্টিনির্ভর চাষের বাস্তবতা মেনে নিতে হবে এবং আমাদের সেচ ব্যবস্থার পাশাপাশি ফসল-চক্রকে বৃষ্টির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। বিজ্ঞান সব কিছু বানালেও, জল তৈরির যন্ত্র এখনো পর্যন্ত আবিস্কার করেনি। আমাদের এই প্রকৃতিতে যেটুকু পরিমাণ জল আছে সেটা নিয়েই বাঁচতে শিখতে হবে।এই বছর, ইংল্যান্ডে, উত্তর ভারতের মতো গরম পড়েছে। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও উপরে উঠেছে। ইতিহাসে প্রথমবার এমন ঘটনা ঘটল। মানে, জলবায়ুর অকাল পরিবর্তন এখন আমাদের নাকের ডগায় এসে দাঁড়িয়েছে। এখনও যদি আমরা প্রকৃতির সাথে ছেলেখেলা বন্ধ না করি, তাহলে ঈশ্বর আমাদের ক্ষমা করলেও, প্রকৃতি ছেড়ে কথা বলবে না। (সমাপ্ত)
লেখক ‘স্বরাজ ইন্ডিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা।
অনুবাদ: প্রতীক্ষা ঘোষ
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct