এম মেহেদি সানি, কলকাতা, আপনজন: ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল আসনে জেতার পর ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের বিভিন্ন জেলা কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রেসিডেন্টের নাম ঘোষণা করেছে সোমবার। ২২টি জেলাকে ৩৫ ভাগে বিভক্ত করে জেলা সভাপতি এবং জেলা চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এই নতুন তালিকায় বর্তমান বিভিন্ন জেলা কমিটিতে বেশ কিছু রদবদল করা হয়েছে। বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিধায়কও জেলায় দলের শীর্ষ পদে স্থান পেয়েছেন। জলপাইগুড়ির জেলা সভাপতি হয়েছেন মহুয়া গোপ। এর পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ ও বহরমপুরে সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয়েছে শাঁওনি সিং রায়কে। বারাসাতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ অশনি মুখোপাধ্যায়কে সরিয়ে জেলা সভাপতি করা হয়েছে সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে। বনগাঁর জেলা সভাপতির দায়িত্বে আনা হয়েছে বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিত দাসকে। বসিরহাটে জেলা সভাপতির দায়িত্বে আনা হয়েছে সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তৃণমূল বিধায়ক বিরবাহা সোরেন টুডুকে ঝাড়গ্রাম জেলার চেয়ারম্যান পদে আনা হয়েছে। ২২ টি জেলাকে ৩৫ ভাগে বিভক্ত করে নতুন যে জেলা সভাপতি এবং জেলা চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে তার সংখ্যা মোট ৬৭ জন। তবে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এক জন অতিরিক্ত ওভারঅল কো-অর্ডিনেটরের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তৃণমুল কংগ্রেস তাদের সাংগঠনিক রদবদল ঘটালেও সংখ্যালঘুরা কিন্তু ব্রাত্য থেকে গেছে। তৃণমূল কংগ্রেস ঘোষিত ৬৮ জন জেলা সভাপতি এবং জেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে মুসলিম হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছেন মোট ৫ জন। তারা হলেন, মালদা জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সী, জঙ্গিপুর জেলা সভাপতি খলিলুর রহমান, বহরমপুর মুর্শিদাবাদ জেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের খান, নদিয়া নর্থ কৃষ্ণনগর জেলা চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদ আর বসিরহাট জেলা চেয়ারম্যান হাজী নুরুল ইসলাম। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় ২০২১ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা বেশ ভাল বৃদ্ধি পায়। ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় মুসলিম বিধাকদের সংখ্যা ছিল ৫৯ জন। তার মধ্যে ৩২ তৃণমূলের, কংগ্রেসের ১৮ জন এবং বাম ৯ জন। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস একাই পায় ২১৩টি এবং বিজেপি পেয়েছে ৭৭টি আসন। একটি আসন ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) দখলে যায় এবং নির্দল প্রার্থী একটি আসনে জয়লাভ করেন। সব মিলিয়ে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৪৪ জন মুসলিম বিধায়ক নির্বাচিত হন যার মধ্যে ৪৩ জন তৃণমূল কংগ্রেসের এবং একজন আইএসএফের। কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের কোনও বিধায়ক নেই। উল্লেখ্য, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষে তাদের নতুন জেলা কমিটির তালিকা প্রকাশ করেছিল। সেসময় কলকাতা উত্তর ব্যতীত ২৩টি জেলা সভাপতির নাম প্রকাশ করে এবং দার্জিলিং ব্যতীত সমস্ত জেলা চেয়ারম্যানের নাম প্রকাশ করে।
সেই তালিকায় মোট পদাধিকারের সংখ্যা ছিল ১০৭ জন, যাদের মধ্যে ছিল মাত্র ৮জন মুসলিম। এরপর গত বছরের আগস্ট মাসে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতির বাস্তবায়ন করতে গিযে তৃণমূল কংগ্রেস যে রদবদল ঘটায়। তাতে দেখা যায় মোট ২৯৪ জনকে দলীয় পদ দেওয়া হয়, যাদের মধ্যে মুসলিম মাত্র ৩১জন। আর মুসলিমের মধ্যে তিনজন মহিলা। কিন্তু এবারের নতুন জেলা কমিটির সাংগঠনিক পদে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কমে পাঁচে দাঁড়াল। তৃণমূলের এবারের সাংগঠনিক পদে রাজ্যের সবাচাইতে সংখ্যালঘু প্রধান জেলা মুর্শিদাবাদে দুজন স্থান পেয়েছেন। মালদায় একজন, নদিয়া একজন ও বসিরহাটে একজন। তৃণমূল যে ৬৮ জনের নাম ঘোষনা করেছে তাতে এই পাঁজন স্থান পাওয়ায় শতাংশের বিচারে তা প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ। অথচ ২০১১ সালে জনগণনা অনুযায়ী বাংলায় মুসলিম জনসংখ্যা যেখানে ২৭ শতাংশ। তার চাইতে বড় কথা এ রাজ্যে এখন তৃণমূল খংগ্রেসের সবচাইতে বড় ভোট ব্যাঙ্ক মুসলিমরা। গিত বিধানসভা নির্বাচনে দুহাত উজাড় করে তৃণমূলকে ভোট দিলেও সাংগঠনিক পদে কিন্তু মুসলিমরা তৃণমূলের কোছে সেই ব্রাত্যই রয়ে গেল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct