আপনজন ডেস্ক: দক্ষিণ মহারাষ্ট্রের সাংলিতে অহল্যাদেবি হোলকার সড়কে দুপুরে তেমন একটা ভিড় থাকে না। কিন্তু কাল দুপুর গড়িয়ে বিকেল নাগাদ এই সড়কের পাশে একটি চা ও পানের দোকানের সামনে লোকজনের ভিড় বেড়ে যায়। সংবাদমাধ্যমেরও দু-একজন চলে আসেন সেখানে। সবার চোখে দোকানের ১৪ ইঞ্চি ভিডিওকন টিভির পর্দায়। বার্মিংহামে কমনওয়েলথ গেমসে লড়ছে এ দোকানেরই ছেলে সঙ্কেত মহাদেব সরগর। টিভি পর্দায় সেঁটে থাকা চোখগুলো সহসাই উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ভারোত্তোলনে ছেলেদের ৫৫ কেজি ওজনশ্রেণিতে রুপার পদক জিতেছেন সঙ্কেত।
ডান হাতে চোট ছিল। হাতটা স্লিংয়ে বেঁধে বিজয় মঞ্চে ওঠেন সঙ্কেত। চোখেমুখে আঁধার। কী ব্যাপার! এবার কমনওয়েলথ গেমসে সঙ্কেতের কল্যাণে প্রথম পদকের দেখা পেয়েছে ভারত। ২১ বছর বয়সী ছেলেটি কোথায় আনন্দে ভেসে যাবেন, তা না, চোখেমুখে আঁধার। আসলে বাবাকে দেওয়া কথা রাখতে পারেননি সঙ্কেত। বার্মিংহামে রুপা জয়ের পর জানালেন সে কথা, ‘বাবার কাছে ওয়াদা করেছিলাম, সোনার পদক জিতব। রুপা জিতেছি, তবে বাবা এতেই খুশি।’সঙ্কেতের বাবা মহাদেব আনন্দ সরগর এই চা ও পানের দোকানের মালিক। দোকানটি তিনিই পরিচালনা করেন। বাবার অনুপস্থিতিতে সঙ্কেত নিজেও দোকানদারি করেছেন। কিন্তু এখন ভাগ্যটা পাল্টাতে চান। ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ সঙ্কেত বলেছেন, ‘এই পদকে আশা করি আমার পরিবারের ভাগ্য পাল্টাবে। বাবাকে আর পানের দোকানে দেখতে চাই না।’
সোনার পদক জয়ের পথেই ছিলেন সঙ্কেত। কিন্তু ক্লিন অ্যান্ড জার্ক ইভেন্টে এসে দুবার ওজন তুলতে ব্যর্থ হন ডান হাতের চোটের জন্য। ওজন তোলার সময়ই চোট পান। রুপা জিতলেও সোনা জিততে না পারার আক্ষেপটা লুকাতে পারেননি সঙ্কেত। তাঁর ভাষায়, ‘বাবা বলেছেন, সোনা জিতলে বেশি ভালো হতো। তবে আমি খুশি। সোনায় ভাগ্য পাল্টায়, এটা বাবার কথা। পরিবার আমাকে প্রেরণা দিচ্ছে ঠিক, তবে সোনা তো সোনাই। পদক জয়ের পর অনেক অ্যাথলেটেরই তো ভাগ্য পাল্টায়। সরকার সাহায্য করে। আমিও নিজের পরিবারকে সাহায্য করতে চাই। বাবা দোকানদারি করুক, সেটা আমি আর চাই না। পরিবার আমার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। পদকটি তাঁদের উৎসর্গ করছি।’ সঙ্কেতের বাবা মহাদেব ৯০ দশকে সাংলি অঞ্চলে আসেন। শুরুতে ফেরি করে ফল বিক্রি করতেন। এরপর কিছু টাকা জমিয়ে পানের দোকান দেন। পরে দোকানটির পাশেই চা এবং সকালের নাশতার আরেকটি দোকান দেন মহাদেব। ২০০০ সালে জন্ম নেওয়া সঙ্কেতকে হাতে-পায়ে একটু বেড়ে ওঠার পর স্বাভাবিকভাবেই দোকানের কাজে সাহায্য করতে হয়েছে। সঙ্কেত জানালেন, ‘চা-টা আমাদের বিশেষ পানীয়। এর বাইরে আমি সাদা পান, মিঠা পান ও মাসালা পান—খুব অল্প বয়সেই বানানো শিখেছি।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct