ভয়াবহ দাবদাহের কবলে বিশ্ব। এমনিতেই প্রায় তিন বছর যাবৎ করোনা অভিঘাতে গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে মানবজাতি দিন অতিবাহিত করছে। করোনাযুদ্ধে মানবজাতি জয়ের দ্বারপ্রান্তে আসলেও এখনো এর পরিসমাপ্তি ঘটেনি। করোনা ভ্যাকসিন অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে আবিষ্কৃত হয়েছে বটে, কিন্তু এ টিকায় পুরোপুরি মুক্তি মিলেনি, ভয়াবহতা কমেছে মাত্র। মানুষ ধরেই নিয়েছে করোনার সঙ্গেই বসবাস করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছেন ফনিন্দ্র সরকার।
ভয়াবহ দাবদাহের কবলে বিশ্ব। এমনিতেই প্রায় তিন বছর যাবৎ করোনা অভিঘাতে গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে মানবজাতি দিন অতিবাহিত করছে। করোনাযুদ্ধে মানবজাতি জয়ের দ্বারপ্রান্তে আসলেও এখনো এর পরিসমাপ্তি ঘটেনি। করোনা ভ্যাকসিন অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে আবিষ্কৃত হয়েছে বটে, কিন্তু এ টিকায় পুরোপুরি মুক্তি মিলেনি, ভয়াবহতা কমেছে মাত্র। মানুষ ধরেই নিয়েছে করোনার সঙ্গেই বসবাস করতে হবে। পৃথিবীতে যে কোনো ব্যাধি একবার সঞ্চারিত হলে তা চিরতরে চলে যায় না। প্রকৃতির এটাই নিয়ম। এ নিয়মকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা কারো নেই। যাহোক, এর মধ্যেই আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিয়েছে। তবে মানুষের দ্বারা প্রকৃতির ওপর খবরদারি করার খেসারত দিতে হচ্ছে সব মানুষকে। ধনী বিশ্বের ভোগ-বিলাসিতার মাত্রা অতিরিক্ত পর্যায়ে নিতে গিয়ে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে, যার ফলে জলবায়ু পরিবর্তন ঘটে চলেছে সারা বিশ্বে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে মানবজাতি। জলবায়ুর স্বাভাবিক প্রবাহে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়াতে প্রকৃতি দিনে দিনে আগ্রাসি হয়ে উঠছে। কখনো অতি খরা, অতি বৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝাকবলিত হচ্ছে জনপদ। বহুমাত্রিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানবজীবন বিপদগ্রস্ত। বিশ্ব জুড়ে দানবীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে দাবানল। বছরের বেশির ভাগ সময় যেসব দেশে শীত থাকে সেসব দেশেও দাবদাহের আঘাত আছড়ে পড়ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাপপ্রবাহের অতি উচ্চ রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। সারা আফ্রিকা, ইউরোপ জুড়ে ভয়ানক তাপপ্রবাহ বিস্মিত করেছে বিজ্ঞানীদের।
যুক্তরাষ্ট্রেরও কোনো কোনো অঞ্চলে ভয়ানক তাপপ্রবাহ বইছে। এ অতিমাত্রার তাপপ্রবাহের ফলে দাবানলের লেলিহান শিখার কড়াল গ্রাসে বিভিন্ন দেশের বনাঞ্চল পুড়ে ছাই হচ্ছে। মানুষের মৃত্যুও ঘটছে দাবানলে। এসব দেখে রাষ্ট্রসংঘ রীতিমতো উদ্বিগ্ন। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তেনিওও গুতেরেস দাবানল ও তাপপ্রবাহ থেকে মানবজাতিকে বাঁচাতে ৪০টি দেশের রাজনৈতিক নেতা ও মন্ত্রীদের নিয়ে শলাপরামর্শ করেছেন। বিশ্বনেতাদের তিনি সতর্ক করেছেন এই মর্মে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মানবজাতি অস্তিত্বের সংকটে পড়তে পারে, তাই সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এর মোকাবিলা করতে হবে। বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ এখন নিজ নিজ দেশের মানুষ বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবে বন্যা, খরা, ঝড় এবং দাবানলের কারণে বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ মানুষ বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে জীবন যাপন করছে। একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, কোনো জাতিই পুরোপুরি রোগমুক্ত নয়, তবু জীবাশ্ম জ্বালানির মোহ কাটাতে পারছে না। এই মোহ ধীরে ধীরে আত্মহননের পথকেই প্রশস্ত করবে। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতি তা মোকাবিলায় করণীয় প্রসঙ্গে সম্প্রতি পিটার্সবার্গ জলবায়ু সম্মেলন হয়েছে। এই সম্মেলন পিটার্সবার্গ ক্লাইমেট ডায়লগ নামে অভিহিত। জার্মান সরকার কতৃর্ক বার্লিনে অনুষ্ঠিত ঐ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা অংশগ্রহণ করেন। বিগত ১৩ বছর যাবত সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আসছে নভেম্বর ২০২২ কপ-২৭ নামে রাষ্ট্রসংঘ কতৃর্ক আয়োজিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের আগে উল্লিখিত ডায়লগ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বার্লিন ডায়লগে চরম আবহাওয়া, জীবাশ্ম জ্বালানি ও খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি সেই সঙ্গে জলবায়ুর প্রভাবে সংকটাপন্ন মানবজাতিকে কীভাবে উদ্ধার করা যায় তার কর্মকৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রায় আট মাস যাবত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধে অসংখ্য নিরীহ, সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। যে ইস্যুতে যুদ্ধ বেধেছে তা যুদ্ধ করার মতো ইস্যু নয়। কিন্তু যারা যুদ্ধবাজ রক্তমাংসে যুদ্ধের ভাব তারা কি যুদ্ধ ছাড়া থাকতে পারে? বিশ্বের অন্যতম ধনী, শক্তিশালী ও প্রভাবশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্র শক্তির ইন্ধনে ও সহযোগিতায় ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি প্রভাবিত ও সাহসী হয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে, এ কথা এখন ওপেনসিক্রেট। একসময় ইউক্রেন রাশিয়ারই একটি অংশ ছিল। সেই সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে অনেকগুলো স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। কিন্তু মূল শক্তির কেন্দ্রবিন্দু ছিল রাশিয়া। সেই রাশিয়ার পরাক্রমশালী রাষ্ট্রপতি পুতিন যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মত্ত হয়ে গোটা বিশ্বকে অর্থনৈতিক চাপের মুখে ফেলে দিয়েছে। এই চাপ সহ্য করা খুবই কষ্টসাধ্য হচ্ছে অনেকের। তা থেকে আমাদের মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করতেই হবে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘সভ্যতা গড়ে উঠে কোন নদীর অববাহিকায়, সেই সভ্যতার অনল ঠেকাতে দরকার নদীর স্বচ্ছ জল।’ কিন্তু সেই জল কোথায়?
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct