এটা প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, যুদ্ধে কেউ জয়ী হয় না; কেবল কেউ কেউ অন্যদের চেয়ে কম হারে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধেও এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না। এই যুদ্ধে স্পষ্টতই যে হারছে সে হলো পৃথিবী নামক এই গ্রহ। যুদ্ধ দিন দিন রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক এবং এমনকি জনসাধারণের জন্য আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকারের বিষয় হয়ে উঠেছে। বলপ্রয়োগ করে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পরিবর্তনের ওপর বিদ্যমান বিশ্বজনীন নিষেধাজ্ঞাকে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার একটি স্তম্ভ মনে করা হয়। এ নিয়ে লিখেছেন রিচার্ড হাস।
এটা প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, যুদ্ধে কেউ জয়ী হয় না; কেবল কেউ কেউ অন্যদের চেয়ে কম হারে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধেও এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না। এই যুদ্ধে স্পষ্টতই যে হারছে সে হলো পৃথিবী নামক এই গ্রহ। যুদ্ধ দিন দিন রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক এবং এমনকি জনসাধারণের জন্য আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকারের বিষয় হয়ে উঠেছে। বলপ্রয়োগ করে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পরিবর্তনের ওপর বিদ্যমান বিশ্বজনীন নিষেধাজ্ঞাকে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার একটি স্তম্ভ মনে করা হয়। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রাসন সেই স্তম্ভকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। এই যুদ্ধের কারণে রাশিয়া জ্বালানি রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ও তার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়াও সরবরাহ সংকোচন করেছে। জ্বালানির অপর্যাপ্ত সরবরাহে বিশ্ব প্রবল ঝাঁকুনি খেয়েছে। কিন্তু পুতিন তাঁর যুদ্ধ শুরু করার আগেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিশ্ব হেরে যাচ্ছিল। যে সমস্যাটিকে বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে বাস্তব সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার গুরুত্ব সম্পর্কে সবার মধ্যে তাড়নার অনুভূতি তৈরি করা কঠিন হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটিকে ভবিষ্যতে মোকাবিলা করার বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইউরোপ এবং অন্যান্য জায়গায় রেকর্ড পরিমাণ উচ্চ তাপমাত্রা, খরা, দাবানল, অধিকতর তীব্র ঝড় এবং ক্রমবর্ধমান অভিবাসন এই উদাসীনতাপূর্ণ ধারণাটির পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এখনো পর্যন্ত বিশ্ববাসী সেই তাড়া অনুভব করতে পারছে না।
এটি এমন এক সমস্যা, যা কোনো সরকার একা কাজ করে তার সমাধান করতে পারবে না। ঠিক এই ধারণাটির ওপর দাঁড়িয়ে অনেক দেশ ভাবছে, আমরা একারা সঠিক কাজ করলে তো কোনো ফল আসবে না। কারণ, বাকিরা ভুল কাজ করতেই থাকবে। এই ধারণার কারণে কেউই সঠিক পদক্ষেপের দিকে এগিয়ে আসবে না এবং ফল হিসেবে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উন্নয়নশীল বিশ্বে প্রায়ই শোনা যায়, ‘আমরা যখন সমস্যাটি সৃষ্টি করিনি, তখন কেন আমাদের নিজেদের ক্ষতি স্বীকার করে সঠিক কাজটি করতে হবে?’ উন্নত ও শিল্পনির্ভর যে দেশগুলো ব্যাপক মাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করছে, সেই দেশগুলোই নিজেরা নিঃসরণ না কমিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে ভূমিকা রাখতে বলছে। এসব উন্নত দেশের দ্বৈত ভূমিকার কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমে ভূমিকা রাখতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের গতি কমানোর আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাগুলো পারমাণবিক জ্বালানির ওপর অধিকতর নির্ভরতার বিরোধিতার দ্বারা সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে; যদিও পারমাণবিক জ্বালানি বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত করে না। জাপানে ২০১১ সালের ফুকুশিমা দুর্ঘটনার পর থেকে বিদ্যমান পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুল্লি পরিচালনা করা বা নতুন ও নিরাপদ প্ল্যান্ট তৈরি করার বিষয়টি রাজনৈতিক যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছেঁটে ফেলার বিনিময়েই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করা যাবে—এমন ভাবনাও জলবায়ু পরিবর্তনের গতি কমানোর চেষ্টাকে ব্যাহত করছে। এসব কারণে উষ্ণায়নের গতি কমানোর জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা সামান্যই সফলতা পেয়েছে।
বিশ্বনেতারা এই নভেম্বরে (মিসরে) পরবর্তী জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে (কপ ২৭) বসবেন। তবে আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ নেই যে এই সম্মেলন এর আগের অর্থাৎ ২৬তম সম্মেলনের চেয়ে অনেক বেশি কিছু অর্জন করবে। পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রাক্-শিল্প স্তরের চেয়ে আনুমানিক ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠে এসেছে। আমাদের পূর্ববর্তী কার্যকলাপের কারণে এই উষ্ণতা আরও বাড়বে। এমনকি যদি পৃথিবী আজ থেকেই গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করা বন্ধ করে দেয় (যা স্পষ্টতই হবে না), তারপরও উষ্ণতা বাড়তে থাকবে। এর ফল হিসেবে অনেক বেশি উষ্ণ জলবায়ুর দিকে আমরা ধাবিত হচ্ছি, যা মেরু অঞ্চলের বরফের চাদর, রেইনফরেস্ট এবং তুন্দ্রাকে প্রভাবিত করছে। জলবায়ুর চলমান চক্রটি আসলে দুষ্টচক্র। এর খারাপ অবস্থা আরও খারাপের দিকে নিয়ে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনে এগিয়ে যাওয়ার সর্বোত্তম আশা প্রযুক্তি থেকে আসতে পারে। যে প্রযুক্তি আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনকে থামাতে বা এমনকি বিপরীত করতে সক্ষম করে, কিছু বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন অপসারণ করতে সমর্থ হয়—সেই প্রযুক্তির উদ্ভাবন আমাদের আশার কারণ হতে পারে। এ ধরনের প্রযুক্তির উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct