মঞ্জুর মোল্লা, নদিয়া, আপনজন: অনাহারে থাকা প্রয়াত অধ্যাপকের পরিবারের তিন সদস্য স্বেচ্ছামৃত্যুর চেষ্টা বিফল হওয়ার পর একমাত্র সম্বল বাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিল। শান্তিপুর শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ডাবরে পাড়া এলাকার অধ্যাপক পরিবারে দুয়ার পেরিয়ে অভাব প্রবেশ করেছে বহু বছর আগে। প্রয়াত অধ্যাপক পরমানন্দ মুখার্জির দুই মেয়ের মৃত্যুর পরে, বর্তমান রয়েছেন তিন অবিহিত ভাই বোন। দিদি নমিতা মুখার্জির বয়স ৭২ বছর মাধ্যমিক পাস, এক ভাই দেবাশীষ মুখার্জির বয়স ৭০ তিনি বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক। ছোট ভাই বিশ্বজিৎ মুখার্জির বয়স ৬৫ বছর পাস করেছিলেন বিকম। অধ্যাপক পরিবারে দেবী সরস্বতী সুপ্রসন্ন থাকলেও, লক্ষী উঁকি মেরে দেখেননি কোনদিনই। অধ্যাপক পরমানন্দ বাবুর ছাত্র ছিলেন শান্তিপুরের দীর্ঘদিনের পৌরপতি ও বিধায়ক প্রয়াত অজয় দে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অধ্যাপকের মৃত্যুর পর তার ছেলে মেয়েরা উচ্চশিক্ষিত হলেও পায়নি কোনো চাকরি বা কাজের সুযোগ, মেলেনি হকের পেনশনও। শান্তিপুর পৌরসভা ,রানাঘাট মহকুমা শাসকের অফিস, বিকাশ ভবন হন্যে হয়ে ঘুরেও বাবার প্রাপ্য পেনশনের সুরাহা করে দিতে পারেননি সেকাল বা একালের কোনো জনপ্রতিনিধিই। ছোট ভাই বিশ্বজিৎ মুখার্জির কথায়, ব্যাক ডোর দিয়ে চাকরি হওয়ার কারণে যোগ্যতার প্রমাণ দেখানোর সুযোগ মেলেনি। বড় ভাই দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় অবশ্য এক ডাক্তারের কেমিস্ট কাজ করে সামান্য অর্থ দিয়ে ভাই-বোনদের দুবেলা দুমুঠো খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারতেন সে সময়। তবে বর্তমানে বয়সজনিত কারণে এবং শারিরিক
প্রতিবন্ধকতার কারণে, ছোট ভাই ছাড়া নড়াচড়া করতে পারেন না কেউই। দিদি এবং তার বার্ধক্য ভাতার দু হাজার টাকা গ্যাস এবং ইলেকট্রিকের বিল দিতেই লেগে যায়, তাই ১০-১২ টাকা কেজি দরে খুদের চাল গূঁড়ো করে, ঘন ফ্যান নুন দিয়ে খান এক বেলা। দিদারিদ্রতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সম্প্রতি তিন ভাই বোন একসাথে বিষ খেলেও , কপালে দুর্ভাগ্য পোহানোর কারণেই হয়তো মৃত্যু হয়নি কারোরই। বর্তমানে তারা কোনো এক সহৃদয় ব্যক্তির প্রতীক্ষায় রয়েছেন, শেষসম্বল বাড়িটুকু নিয়ে তাদের বাকি জীবনটুকু তিনটি পেট একবেলা কোনোমতে দুটো খেতে দিয়ে বাঁচিয়ে রাখেন সেই আশায়। তবে লকডাউনের মধ্যে সহযোগীতা করতে আসা দুটি এনজিও দু প্যাকেট বিস্কুট দিয়ে চারটি ছবি তুলে পাবলিসিটি বাড়িয়ে আর আসেননি কখনো। দিদি নমিতা মুখার্জি বলেন, শুনেছিলাম করোনা থেকে দেশ ও রাজ্য বাসীকে বাঁচানোর জন্য তিনবার বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, তবে আমাদের তিনজনের জন্য ভাবেনি কোনো সরকারই। স্বাস্থ্য সাথীর কার্ড থাকলেও কিছুটা দুশ্চিন্তা মুক্ত হতাম চিকিৎসার ক্ষেত্রে, তাও জুটলো না কপালে। এ প্রসঙ্গে প্রতিবেশী মিতা প্রামাণিক বলেন একসময় সম্ভ্রান্ত এবং শিক্ষিত পরিবারের এই দুর্দশা দেখে খুব কষ্ট লাগে, নিজেদের সামান্য রোজগার থেকে কিছুটা সহযোগিতার চেষ্টা করি। স্থানীয় কাউন্সিলর দীপঙ্কর সাহা বলেন, অতীতে দুটো বার্ধক্য ভাতা করে দেওয়া হয়েছে, অপর একজনের কাগজপত্র জমা রাখা রয়েছে, শীঘ্রই তা চালু হবে। বা স্বাস্থ্য সাথী না যাওয়ার কারণে পাননি হয়তো, বাড়ি বাড়ি চালু হলে নিশ্চয়ই করে দেওয়া হবে। বিজেপি জেলা নেতৃত্ব ড: সোমনাথ কর বলেন, অতীতে সিপিএমের আমলাশোল দেখেছি, বর্তমানে তৃণমূলের দুয়ারে অভাব।বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামী বলেন, সদ্যমাত্র বিধায়ক হয়েছি, সাধ্যমত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি এক্ষেত্রেও থাকবো ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct