আপনজন ডেস্ক: অন্যতম বৃহৎ মুসলিম সংগঠন জমিয়তে উলামা-ই-হিন্দের কার্যনির্বাহী কমিটির দুই দিনের বৈঠক শুক্রবার অনুষ্ঠিত হল নতুন দিল্লির আইটিও মুফতি কিফায়াতুল্লাহ হলে। শুক্রবার নয়া দিল্লিতে মাওলানা মাহমুদ মাদানির নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের দুই দিনব্যাপী বৈঠক শেষে দল দু’টি এক হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়। এর আগে গত মাসে আল্লামা আরশাদ মাদানির নেতৃত্বাধীন জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের ওয়ার্কিং কমিটি একীভূতকরণের জন্য সম্মতি দেয়ার পর দুই জমিয়ত এক হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। শুক্রবারের বৈঠকে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর জন্য একটি প্রস্তাবও পাস করা হয়। বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয় যে, জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের ওয়ার্কিং কমিটি সংগঠনের সাম্প্রতিক পুনর্মিলন প্রক্রিয়া শুরু করবে। উপস্থিত ওলামায়ে কেরাম পুনর্মিলনের প্রক্রিয়ার প্রশংসা করেন ও স্বাগত জানান। উভয় জমিয়ত নিজেদের চিন্তার পার্থক্য ভুলে গিয়ে দেশ ও জাতির জন্য একসাথে কাজ করার উদ্দেশে ফের মিলিত হচ্ছে। ঈদের পর দিল্লির হেড অফিসে জমিয়তের (দু’দলেরই) নেতৃবৃন্দ বৈঠকে মিলিত হয়ে পরস্পরের মতপার্থক্য দূর করার কথা বলেছিলেন। এদিন তাই দুই জমিয়ত এক হওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে মাওলানা আরশাদ মাদানি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশেষত মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যে চক্রান্ত চলছে, দেশের তরে অসীম আত্মত্যাগের ইতিহাসের ধারক। মাদানি আরও বলেন, মুসলমানদের এক শতবর্ষী মহৎ সংগঠন হিসেবে এই সঙ্কট মোকাবেলায় জমিয়তের উচিত একসাথে কাজ করা।
একীভূত হওয়ার এই উদ্যোগকে একটি গণদাবি উল্লেখ করে মাদানি বলেন, ভারতের পরিস্থিতির কারণেই কেবল এই উদ্যোগ নয়, বরং এই ঐক্য আজ সকলের প্রাণের দাবি। আশা করি আগামী কিছুদিনের ভেতরই আল্লাহ তায়ালা এই একীভূত হওয়ার এমন পথ ও পন্থা তৈরি করে দেবেন, যা সকলের জন্যই ইনশাআল্লাহ প্রশান্তিময় হবে। মাওলানা মাহমুদ মাদানি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের সব ধরনের চেষ্টা করতে হবে। জমিয়তে উলামা-ই-হিন্দ এ বিষয়ে সাংবিধানিক ও সামাজিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি একটি আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি কর্মসূচি পরিচালনা করছে। ঘৃণ্য অপরাধের ঘটনাগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে তিনি বলেন, সরকার কর্তৃক সঠিক নীতি গ্রহণ না করে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে না। এ সময় মওলানা মাদানি অনগ্রসর শ্রেণির সমস্যা সমাধানে সমন্বিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানান, কারণ এটাই সময়ের দাবি। এই বৈঠকের পর জমিয়তে উলামা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চলমান সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি, ঘৃণ্য অপরাধ, সংবিধানের সুরক্ষা এবং দেশ ও সম্প্রদায়ের সামনে থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ বিভক্ত হয়ে যায়। একটি গোষ্ঠী পরিচালনা করেন তৎকালীন সভাপতি মাওলানা আরশাদ মাদানি ও অন্যটি তার ভাইপো মাওলানা মাহমুদ মাদানি। যেভাবে এর কার্যক্রম পরিচালনা করেছিলেন তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল এবং তিনি তার নিজস্ব দল গঠন করেছিলেন। সেই বিভক্তির ১৪ বছর পর আবারো এক হচ্ছে ভারতের মুসলিমদের অন্যতম বৃহৎ সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ। জমিয়তের দাবি দেশজুড়ে ১.৫ কোটি সদস্য ও অনুসারী রয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct