আপনজন ডেস্ক: উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের লোনিতে মাদ্রাসা জামিয়া রশিদিয়া ১৯৯৯ সালে মাত্র ৫৯ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্র মুসলিম শিশুদের শিক্ষিত করা। দিল্লি থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মাদ্রাসায় এখন ৮০০০রও বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে, যার মধ্যে ২২ জন শিক্ষক রয়েছেন।মাদ্রাসায় কুরআন শিক্ষার পাশাপাশি হিন্দি ও ইংরেজি ভাষাও পড়ানো হয়। ১৯৯৪ সালে পিভি নরসিমা রাও-এর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিকীকরণ প্রকল্পের অধীনে গণিত, সামাজিক অধ্যয়ন এবং বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলির প্রবর্তন শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক প্রবেশিকা পরীক্ষা এবং চাকরির জন্য প্রস্তুত করতে সহায়তা করেছে।
মাদ্রাসা আধুনিকীকরণ প্রকল্পে নিযুক্ত হওয়ার পর গত ১৫ বছর ধরে ওই মাদ্রাসায় হিন্দি পড়াচ্ছেন রাম খিলাড়ি। তিনিই এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। মাদ্রাসায় ঢোকার মুখেই ২০১৯-এর সেরাদের ছবি-সহ বড় বড় পোস্টার—সবাই মেয়ে। রাম খিলাড়ির মতো শিক্ষকরা বলছেন, প্রান্তিক ও দরিদ্র পটভূমির মুসলিম শিশুদের জন্য, বেসরকারি বিদ্যালয়গুলি নাগালের বাইরে থাকায়, মাদ্রাসাগুলি প্রায়শই শিক্ষার একমাত্র উৎস। রাম খিলাড়ি ও স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকরা বলছেন, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন শিক্ষার্থীসহ যারা পুলিশের চাকরি করছেন, যারা ডাক্তার হয়েছেন সেই সব প্রাক্তনীদের কথা। রাম খিলাড়ি বলেন, মাদ্রাসায় শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো ভুল নেই এবং আমি তার একটি উদাহরণ। আমরা একটি মাদ্রাসায় একই শিক্ষা দিই যা আপনি অন্য স্কুলে দেন। আমাদের এখানে বাচ্চারা নিকাব পরে, আমরা একটি প্রার্থনা বা কালেমা আবৃত্তি করি। প্রতিটি স্কুলের যেমন নির্দিষ্ট নিয়ম থাকে, তেমনি আমাদের মাদ্রাসাতেও কিছু নিয়ম আছে। এখানে আলাদাই বা কী আছে। ১৯৯৯ সাল থেকে চলে আসা মাদ্রাসা জামিয়া রশিদিয়ার প্রগতিশীল যাত্রা সম্পর্কে বলতে গিয়ে মাদ্রাসার প্রধান ইমাম নবাব আলী বলেন, এর আগে, বাবা-মা তাদের সন্তানদের পাঠাতে দ্বিধায় ছিলেন, মাওলানার কতটা শিক্ষার আলো জ্বালাতে পারেন। কিন্তু এখন ক্লাস পুরোপুরি ভর্তি এবং আমরা নতুন ভর্তির জন্য জায়গা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। সেই মাদ্রাসারই প্রিন্সিপালের দায়িত্বে রাম খিলাড়ি। গত ২৫ বছর ধরে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। খিলাড়ি, যাকে মাদ্রাসার ছাত্ররা আদর করে ‘পণ্ডিত প্রিন্সিপাল স্যার’ বলে ডাকে, তিনি বলেন যে তিনি কখনও কোনও ধর্মীয় পার্থক্য বা বাধা অনুভব করেননি। তিনি বলেন, মাদ্রাসা ও তার কর্মীরা একটি পরিবারের মতো। তবে মাদ্রাসা আধুনিকীকরণ প্রকল্পের অধীনে নিযুক্ত রাম খিলাড়ি ও অন্যান্য শিক্ষকদের কেন্দ্রীয় সরকার গত পাঁচ বছরে বেতন দেয়নি। তিনি রাজ্য সরকারের দেওয়া মাত্র ৩,০০০ টাকায় বেঁচে বর্তে আছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা বকেয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। খিলাড়ির দুটি সন্তানই সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত এই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে। তবে কেন্দ্র বেতন না দেওয়ায় এই বেতনে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে রাম খিলাড়ি দুঃখপ্রকাশ করেন। তবে মুখে হাসি নিয়ে রাম খিলাড়ি বলছেন, আশপাশের মানুষের ভালোবাসায় বেঁচে আছেন তিনি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct