সুলেখা নাজনিন, কলকাতা, আপনজন: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারে বারে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এ রাজ্যকে বঞ্চনার অভিযোগ করে আসছেন। বিশেষ করে একেশা দিনের কাজে বকেয়া আদায়ের জন্য মুখ্যমন্ত্রী বহুবার চিঠি লিখেছেন কেন্দ্রকে। এবার পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চনার আরও খবর সামনে এল। রাস্তার ব্যবসায়ীদের আর্থিক সাহায্যের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী স্ট্রিট ভেন্ডর আত্মনির্ভরনিধি’ প্রকল্পে ঋণের জন্য ২০২০-২১ বর্ষে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৭৪জন সংখ্যালঘু আবেদন করেছিলেন। আর দেশের মধ্যে ২০২০-২১ বর্ষে প্রথম ও দ্বিতীয় দফা মিলিয়ে মোট ৬০৭জন সংখ্যালঘু আবেদনকারীর মধ্যে ৩৩১ জনের আবেদন মঞ্জুর করা হলেও পশ্চিমবঙ্গ থেকে একজনকেও এই ঋণ বরাদ্দ করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এই প্রকল্পে তফশিলি জাতি, তফিশিলি উপজাতি এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঋণ প্রাপ্তি নিয়ে তথ্য জানার অধিকার আইনে জানতে চেয়েছিলেন তথ্য আরটিআই কর্মী তথা কমওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ-এর অন্যতম সদস্য ভেঙ্কটেশ নায়েক। কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রক গত ১০ জুন ভেঙ্কটেশ নায়েককে আরটিআইয়ের যে জবাব দিয়েছে তা থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২০ সালের জুন মাসে রাস্তায় ব্যবসা করা গরিব মানুষদের সহায়তায় ঘোষণা করেছিলেন ‘প্রধানমন্ত্রী স্ট্রিট ভেন্ডর আত্মনির্ভরনিধি’ প্রকল্প। এরপর কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রক (এমওএইচইউএ) এই প্রকল্পটি ২০২০ সালে ২৪ মার্চ থেকে বাস্তাবয়িত হতে শুরু করে। এর অগ্রগতি নিয়ে গত ৭ জুলাই সংসদের রিপোর্ট পেশও করা হয়। এই প্রকল্পে রাস্তার ব্যবসায়ীরা প্রথম দফায় ১০ হাজার টাকা ঋণ পাওয়ার সুযোগ পান। সেই টাকা পরিশোধ করলে দ্বিতীয় দফায় ২০ হাজার টাকা পান। আর তা পরিশোধ করলে তৃতীয় দফায় পাবেন ৫০ হাজার টাকা। তবে, ঋণ পরিশোধ কালে সাত শতাংশ টাকা ভরতুকি হিসেবে আবেদনকারীদের পাওয়ার কথা।
আরটিআইয়ের জবাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক জানিয়েছে, ২০২০-২১ ‘প্রধানমন্ত্রী স্ট্রিট ভেন্ডর আত্মনির্ভরনিধি’ প্রকল্পে দেশের মধ্যে ২০২০-২১ বর্ষে প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় ঋণের জন্য মোট ৪৮.৭০ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৬০৭টি আবেদন জমা পড়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। এই সংখ্যালঘুদের মধ্যে মুসলিম ছাড়াও শিখ, জৈন, খ্রিস্টানরাও রয়েছেন। যদিও তফশিলি উপজাতিদের মধ্যে আবেদনের হার ৩.৩৫ শতাংশ। সংখ্যালঘুদের ঋণের বিষয়ে শুধু ২০২০-২১ বর্ষের তথ্য দেওয়া হয়েছে। তাতে আরও জানা গেছে, প্রথম পর্বে ঋণের জন্য মাত্র ৫২৯জন সংখ্যালঘু ও দ্বিতীয় দফায় মাত্র ৭৭জন। সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘুর আবেদন এসেছে মহারাষ্ট্র আর কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল থেকে, যার সংখ্যা ২৮৭। দ্বিতীয় দিল্লি ১১০টি। সব মিলিয়ে ৩২.২৬ লক্ষ মানুষকে এই প্রকল্পে প্রথম দফার ঋণ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে সংখ্যালঘুর সংখ্যা মাত্র ৩৩১। উত্তরপ্রদেশ থেকে ৭ লাখ ৭০ হাজার আবেদনের মধ্যে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা মাত্র ১২। তারা সবাই ঋণ পেয়েছেন। এছাড়া মহারাষ্ট্রে সংখ্যালঘু ঋণ প্রাপকদের সংখ্যা ১৬২, দিল্লি ১১০, তেলেঙ্গানা ২২, গুজরাট ১২, ওড়িশা ৮, অন্ধ্রপ্রদেশ তিনটি ও রাজস্থান দুটি। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৭৪টি আবেদন পড়লেও একজন সংখ্যালঘুকে কোনও ঋণ দেওয়া হয়নি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct