এহসানুল হক, বসিরহাট, আপনজন: পথশিশুরা জীবনের শুরু থেকে কেটেছে এই পথের উপরে, তেমনভাবে এরা সমাজের বুকে গড়ে উঠতে পারেনি একটাই অভাব অভিভাবকের। কেউবা এরা মা হারা কেউবা এরা বাবা হারা কেউবা মা-বাবা দুজনেই হারা। এদের ঘর বলতেই রাস্তার ফুটপাত কখনো চায়ের দোকান কখনো বা বাজারে। কিছু পয়সার বিনিময়ে ছোট থেকেই লোকের দুয়ারে কাজ। কখনো বা বাসন ধরে জীবন চলার জন্য মানুষের কাছে হাত পাতা। সেই রকম পথ শিশুদের নিয়ে জীবন গড়ার ডাক দিল একটি স্বেচ্ছাসেবী আলোর দিশারী সংগঠন। মঙ্গলবার, উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার টাকিতে থুবা ব্যায়াম সমিতির মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল আলোর দিশারী পরিবারের তৃতীয় বর্ষ উদযাপন। আজ থেকে তিন বছর আগে এই দিনে ২০১৯ সালে ১৯ জুলাই আলোর দিশারী পরিবারের পথ চলার শুরু। বেশ কয়েকজন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা মিলে প্রথম পথচলা শুরু। নিজেদের পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা মনে করে এগিয়ে এসেছে। বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা যুবক যুবতীরা। যে সময়টা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এ আড্ডা দেওয়ার কথা ঠিক সেই সময়ে তাদের এই চিন্তা ভাবনা আগামী প্রজন্মের কাছে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আশাবাদী।তাদের পথ শিশুদের শিক্ষার আঙিনায় ফিরিয়ে আনাই আসল লক্ষ্য। কলকাতার ফুটপাথে জীবন যাপন করা শিশুদের কথা ভেবে , তাদের হাতে ভিক্ষার থালা দেখাটা বড্ড কষ্টকর। যেখানে শিশুদের কাঁধে স্কুল ব্যাগ তুলে দেওয়ার কথা। সেটা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ গুলো পয়সা দিয়ে থাকে। এগুলো তাদের চোখে কষ্টের মনে হয়েছে। তাই তারা অঙ্গীকারবদ্ধ ফুটপাতে জীবন যাপন করা শিশুদের শিক্ষার আঙিনায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সেখ রাহানাতুল্লা(রানার) ঐক্রান্তিক পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় বিগত তিন বছর ধরে কলকাতার মৌলালী মল্লিক বাজার, কলেজ স্ট্রিট সহ সল্টলেক প্রভৃতি জায়গাগুলিতে গড়ে উঠেছে আলোর দিশার এক একটি স্তম্ভ। যাদেরকে পথশিশু নামে আমরা সাধারন মানুষ, নামাঙ্কিত করে থাকি তাদেরকে সুশিক্ষা এবং সার্বিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিয়ে রানা এবং তার সহকর্মীরা এগিয়ে এসেছে এক মহান কর্মকাণ্ডকে সামনে রেখে। বর্তমানে আলোর দিশারী পরিবারের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। আর আজ সেই ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে উদযাপন করা হলো তৃতীয় বর্ষের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। সেই সঙ্গে অনুষ্ঠানে বিতরণ করা হলো ব্যাগ, পেন্সিল বক্স প্রভৃতি এবং সঙ্গে ছিল ভ্রমণ ও বনভোজনের সুব্যবস্থা। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টাকি পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক গাজী, রাজারহাট এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষক ও সমাজসেবী শ্রী রণজিৎ কুমার মন্ডল, লেখক-কবি, সাংবাদিক ও প্রচেষ্টা হিউম্যান সোসাইটি ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক শ্রী রাজীব দত্ত, টাকি তথা পার্শ্ববর্তী এলাকার সুপরিচিত সমাজসেবী শফিকুল ইসলাম সাহেব, বাংলা চলচ্চিত্র জগতের খলনায়কের ভূমিকায় পরিচিত মুখ অচ্ছুত গাঙ্গুলী, ডাঃ রেহানা সুলতানা, সমাজসেবী সোনালী মিস্ত্রি, বিশিষ্ট শিক্ষিকা অনিন্দিতা মহাপাত্র, বিশিষ্ট সমাজসেবক সিদ্দিক মোল্লা, সুপরিচিত সমাজসেবী মাতিন মুফতি সাহেব, সমাজসেবী সোনালী মিস্ত্রি, সঙ্গীত শিল্পী শ্রাবনী খাতুন প্রমুখ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct