সম্প্রীতি মোল্লা, আসানসোল, আপনজন: বহু চর্চিত কয়লা পাচার মামলায় চার্জশিট দাখিল হয়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল সিবিআই এজলাসে। এই মামলার তদন্ত শুরু হয় ২০২০ সালের শেষ দিক থেকে ।মঙ্গলবার কয়লা পাচার কান্ডের প্রথম চার্জসিট জমা দিল সিবিআই। আসানসোলের বিশেষ আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে চার্জসিট। এই চার্জসিটে ৪১ জনের নাম রয়েছে বলে জানা গেছে । রয়েছে অনুপ মাজি (লালা), বিনয় মিশ্র, বিকাশ মিশ্র, গুরুপদ মাজির নাম। এদিন আসানসোলের বিশেষ আদালতে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীর এজলাসে কয়লা কান্ডের প্রথম চার্জসিট জমা করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। এই চার্জসিটে অনুপ মাজি (লালা)এর নাম যেমন রয়েছে, তেমনি নাম রয়েছে তার কয়েকজন সহযোগীর। যারা হলেন বিনয় মিশ্র, বিকাশ মিশ্র, জয়দেব মন্ডল, গুরুপদ মাজি, নিরোধ মণ্ডল। আবার, ৮ জন ইসিএল আধিকারিকের নামও রয়েছে বলে জানা গেছে ।চার্জসিটে একাধিক কয়লা মাফিয়ার নাম রয়েছে। তারা সকলেই জামিনে মুক্ত যেমন জয়দেব মন্ডল, গুরুপদ মাঝি, নীরদ মণ্ডল, নারায়ণ নন্দা। চার্জশিটে নাম থাকা যে সমস্ত ব্যক্তিরা জেলের বাইরে রয়েছেন। তাদের কাছে এবার থেকে সমন পাঠাবে সিবিআই। তাদেরকে আবার ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে সিবিআই সুত্রে প্রকাশ । জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে অন্য কাউকে জেরা করার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ।সম্প্রতি বিনয় মিশ্র সহ একাধিক অভিযুক্তের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার দাবী জানিয়ে আদালতে বিশেষ রিপোর্ট জমা দিয়েছিল সিবিআই। যারা হলেন বিনয় মিশ্র রত্নেশ্বর শর্মা, নীরজ সিং, অমিত সিং। এদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। প্রথম চার্জশিটে ৪১ জনের নাম রয়েছে। পরবর্তীকালে আরো কয়েকজনের নাম যুক্ত হবার সম্ভাবনা আছে। কয়লা পাচার কাণ্ডে প্রথম চার্জশিট জমা দিল সিবিআই । মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার একটি দল আসানসোলের সিবিআই আদালতে চার্জশিট জমা করে। সেই চার্জশিটে মোট ৪১ জনের নাম রয়েছে বলে সূত্রে প্রকাশ । রয়েছে একাধিক বেসরকারি সংস্থা, তাদের ডিরেক্টর এবং কয়লা খাদানের নামও।সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, চার্জশিটে কয়লা মাফিয়া অনুপ মাজি ওরফে লালা-সহ তার সহযোগীদের নাম রয়েছে। রয়েছে বিনয় মিশ্র, বিকাশ মিশ্র, জয়দেব মণ্ডল, গুরুপদ মাজি, নিরোদ মণ্ডল, নারায়ণ নন্দা-সহ ধৃত ৮ ইসিএল আধিকারিকের নাম।
এছাড়াও রয়েছে, আসানসোল-দুর্গাপুরের ১০ বেসরকারি কারখানার ডিরেক্টরদের নাম, যারা বেআইনি কয়লা কেনাবেচা করত। এছাড়াও রয়েছে অবৈধভাবে কয়লা খনন করত এমন ১৫ জন মাফিয়ার নাম।সূত্রে প্রকাশ , সিবিআইয়ের চার্জশিটে নাম রয়েছে অনুুপ মাজির এজেন্ট রতনেশ্বর ভার্মার নাম। অভিযোগ, তিনি ইসিএলের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। কয়লা পাচারের পথ মসৃণ করতে তাদের সঙ্গে টাকা লেনদেনের দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে। নাম রয়েছে বিনয় মিশ্রর দুই এজেন্ট অমিত সিং এবং নীরজ সিংয়ের। হুগলির উত্তরপাড়ার বাসিন্দা। বড়বাজারে শাড়ির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তারা। অভিযোগ, পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে শাড়ির মাঝে কাঁচা টাকা পাচার করত এই দুই অভিযুক্ত।ইতিমধ্যেই অনুপ মাজি ওরফে লালার সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ রক্ষাকবচ রয়েছে। বিনয় মিশ্র পলাতক। বিকাশ মিশ্র রয়েছে জেলে। এছাড়াও জয়দেব, গুরুপদ, নিরোদ ও নারায়ণ সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তারের পর জামিনে মুক্ত হয়েছে। ধৃত ৮ ইসিএল আধিকারিকও জেল হেফাজতে রয়েছেন।,উল্লেখ্য, ইসিএলের প্রাক্তন ও বর্তমান জিএম-সহ নিরাপত্তারক্ষীরা আগামী ১ আগস্ট পর্যন্ত জেল হেফাজতে থাকতে হবে ধৃতদের। তাদের জেরা করে একাধিক নতুন তথ্য পেয়েছে সিবিআই। গত সোমবার বিশেষ আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবীরা এজলাসে দাবি করেন, -' বেশ কিছু হাতে লেখা ভাউচার পাওয়া গিয়েছে। সেই ভাউচারে রয়েছে অনুপ মাজি ওরফে লালা কোথায়, কখন, কাকে, কত টাকা দিয়েছিল। ভাউচারে রয়েছে ইসিএল কর্তাদের নামে কোডিং ডিকোডিং তথ্য। রয়েছে সাংকেতিক চিহ্নও। মনে করা হচ্ছে, সেই সাংকেতিক চিহ্নের মাধ্যমেই টাকা লেনদেন হত। তাই বিচারকের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে যাতে জেল হেফাজত থাকাকালীন জিজ্ঞাসাবাদ করা যায় অভিযুক্তদের। বিচারক সিবিআই আইনজীবীর আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর মঙ্গলবার চার্জশিট জমা করল সিবিআই।ইতিমধ্যে কয়লা পাচার মামলায় আলাদাভাবে তদন্ত চালাচ্ছে আরেক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। বেশ কয়েক জন পুলিশ অফিসারের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct