বিশ শতকের শেষদিকে বিজ্ঞানীরা বিশ্বের অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ খোঁজা শুরু করেন। তখন তারা গ্রিনহাউজ গ্যাস, সৌরশক্তি, ওশান সার্কুলেশন ও ভলকানিক অ্যাক্টিভিটির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। গ্রিনহাউজ গ্যাস যা তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রধান কারণ। সেটা পৃথিবী থেকে তাপ বিকিরণ করে। এই তাপ, ইনফ্রারেড বিকিরণ রূপে, গ্রহের বায়ুমণ্ডলের গ্যাসগুলি দ্বারা শোষিত এবং নির্গত হয় ফলে নিম্ন বায়ুমণ্ডল এবং পৃষ্ঠকে উষ্ণ করে। মানুষের অবিবেচক কর্মকাণ্ডের কারণে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া বৈশ্বিক উষ্ণতার একটি অন্যতম বড় কারণ। ইতিমধ্যে ব্রিটেনে রেড আ্যালার্ট জারি করা হয়েছে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণেঅ। সাম্প্রতিক এই বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন শেখ শাহরিয়ার হোসেন।
ভূমণ্ডলীয় স্বাভাবিক পরিবেশের উষ্ণতা বৃদ্ধিই মূলত বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। মানুষের কর্মকাণ্ড বদলে দিচ্ছে প্রকৃতিকে, তাতে বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা, বদলে যাচ্ছে জলবায়ু। বিশ্বব্যাপী অপরিকল্পিত শিল্পায়নের ফলে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। তাছাড়া বছর জুড়ে এমন অসহ্য উত্তাপের কারণে জীবনমানও প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে। বিশ শতকের শেষদিকে বিজ্ঞানীরা বিশ্বের অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ খোঁজা শুরু করেন। তখন তারা গ্রিনহাউজ গ্যাস, সৌরশক্তি, ওশান সার্কুলেশন ও ভলকানিক অ্যাক্টিভিটির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। গ্রিনহাউজ গ্যাস যা তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রধান কারণ। সেটা পৃথিবী থেকে তাপ বিকিরণ করে। এই তাপ, ইনফ্রারেড বিকিরণ রূপে, গ্রহের বায়ুমণ্ডলের গ্যাসগুলি দ্বারা শোষিত এবং নির্গত হয় ফলে নিম্ন বায়ুমণ্ডল এবং পৃষ্ঠকে উষ্ণ করে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ডাব্লিউএমওর ‘গ্লোবাল ক্লাইমেট ২০২০’ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ সালের গড় তাপমাত্রা শিল্পপূর্ব পাঁচ দশকের তুলনায় দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। মানুষের অবিবেচক কর্মকাণ্ডের কারণে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া বৈশ্বিক উষ্ণতার একটি অন্যতম বড় কারণ। জাতিসংঘের বৈশ্বিক উষ্ণতাবিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) গবেষণায় দেখা যায়, আমাদের গ্রহটি ১২ বছরের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির চূড়ান্ত সীমা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে। যেটা কিনা প্রাক-শিল্প যুগের মাত্রার থেকেও বেশি। মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে রেড অ্যালার্ট জারির করা হয়। এর কিছুদিন পরেই দেশটিতে প্রথমবার জারি করা হয় জাতীয় জরুরি অবস্থা। দেশটির তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি অতিক্রম করেছে। ফলে অসহনীয় হয়ে পড়েছে তাপমাত্রা। মক্কায় তীব্র দাবদাহ এত পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে যে হাজিদের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এয়ার কুলিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়। এবারের গ্রীষ্মে বাংলাদেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ পানিতে ডুবে ছিল। সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির কারণে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার বড় একটি অংশে বন্যা হয়েছে। সাম্প্রতিক এসব ঘটনা দেখলেই বোঝা যায়, পৃথিবীতে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব কতটা বেশি হতে পারে। এভাবে চলতে থাকলে হিট স্ট্রোকের মতো সমস্যার কারণে বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ গরমে বিপজ্জনক অবস্থায় পতিত হবে।
এই উষ্ণায়নের জন্য যে মানুষই দায়ী তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। জীবাশ্ম জ্বালানি ও শিল্পায়নের কারণে সৃষ্ট গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনই উষ্ণায়নের প্রধান কারণ। তাই বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রতিরোধ করতে মানুষের সদিচ্ছার একান্ত প্রয়োজন। এই বৈশ্বিক সমস্যার সমাধানে শক্তির অপচয় কমাতে হবে সর্বাগ্রে। কারণ শক্তির অপব্যবহারের ফলে পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এসব প্রেক্ষিতে শক্তির পরিমিত ব্যবহারে মনোযোগী হতে হবে—এসি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে, শীতকালে ঘর গরম করতে হিটারের তাপমাত্রা কমিয়ে ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া সেসব বৈদ্যুতিক দ্রব্য ক্রয় করতে হবে, যা শক্তি সঞ্চয় করতে পারে এবং স্বল্পমাত্রায় সিএফসি নির্গমন করে। মানুষের ব্যবহার্য প্রতিটি জিনিস উৎপাদনে প্রচুর পরিমাণে শক্তির প্রয়োজন হয়। আমরা যদি দ্রব্যের রিসাইকল করে পুনর্ব্যবহার করি তাহলে নতুনভাবে উৎপাদনের থেকে কম শক্তির প্রয়োজন হবে। গাড়ির ধোঁয়া, কারখানার ধোঁয়া ইত্যাদি রোধ করাও ভীষণভাবে জরুরি। তাই যত্রতত্র কারখানা ও ইটভাটা নির্মাণ বন্ধ করতে হবে এবং নিজস্ব পরিবহনে যাতায়াত কমিয়ে গণপরিবহন ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো, বর্তমানে সহজলভ্য কৃষি প্রযুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে সহায়ক কার্বন ব্যবহৃত হয়। কৃষিক্ষেত্রে কার্বন নির্গমন কমানোর কোনো সর্বজনীন স্বীকৃত পদ্ধতি নেই। তাই কার্বন নিঃসারণ কমাতে জমি ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী, আলাদা আলাদা করে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। উৎপাদিত শস্যের ব্যবহার ও গবাদি পশু চারণের জমির মানোন্নয়ন করতে হবে। কৃষি-ভিত্তিক বন তৈরি, উন্নত গৃহপালিত পশু, জমিতে সার দেওয়ার পদ্ধতির মানোন্নয়ন, নির্গমন কমানোর কাজে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া সাধারণ মানুষের ভেতরে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে যেন বৈশ্বিক উষ্ণতার ভয়াবহতা সম্পর্কে তারা বুঝতে পারে। এভাবেই ক্রমবর্ধমান এই বৈশ্বিক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct