বিশ্লেষকরা ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করেন যে, ইরানের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, যা অপ্রকাশিত। তারা কোনোমতেই ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দিতে চান না। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের গুপ্তহত্যা এবং ইরানে স্থাপনা নাশকতার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে ইরান। এই পরিস্থিতির মধ্যেই বাইডেন এই অঞ্চলে তথা মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের ‘একীকরণ’ করতে চান। অর্থাৎ আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনে সহায়তা করতে চান। বিশ্লেষণ করেছেন ল্যারি কাপলো। আজ শেষ কিস্তি।
সৌদি আরব এবং অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলিকে তেল উত্পাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইয়েমেন যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার জন্য সৌদি রাজতন্ত্রের প্রশংসা করছে বাইডেন প্রশাসন। কেননা, বাইডেনের শীর্ষ পররাষ্ট্রনীতির একটি অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল ‘যুদ্ধ শেষ করা’। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই মিটিং মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্যও একটি বড় পাওয়া। এর মাধ্যমে তিনি তার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা এবং পশ্চিমা বিনিয়োগ আকর্ষণ করার প্রচেষ্টা সফল করতে চেষ্টা চালাবেন। এটা সৌদি আরবকে তেল বিক্রির ওপর থেকে নির্ভরতা কমাবে। আরেকটি বিষয়, সালমান সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কিছু অস্ত্র বিক্রির কথাও বলতে পারেন, যা ইয়েমেন যুদ্ধের কারণে বাইডেন স্থগিত করেছেন। মোটা দাগে আরেকটি বিষয় হলো, বাইডেনের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও যদিও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্মুক্ত করতে চাইবে না সৌদি আরব, তবে তারা নিরাপত্তা ইসু্যতে সহযোগিতাসহ ইসরাইলের জন্য ‘ফ্লাইওভার রাইটস’ সংক্রান্ত কিছু চুক্তিতে রাজি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এটি নিশ্চিত করতে চেষ্টা করবে যে, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে চলমান সম্পর্ক জোরদার করবে না সৌদি আরব। কেননা, চীন মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব বিস্তার করতে চায় এবং প্রচুর তেল কেনে। অন্যদিকে রাশিয়া তেল রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল এবং দেশটি এখন ইউক্রেন যুদ্ধের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাধাগ্রস্ত। এমতাবস্থায় রাশিয়া চাইবে সৌদি আরব তেল সরবরাহ কড়াকড়ি রাখুক, যাতে পশ্চিমা দেশগুলিকে বেকায়দায় ফেলা যায়।
তবে মনে রাখতে হবে, বাইডেন এমন একটি দেশের সুনাম পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করতে যাচ্ছেন, যেটি ভিন্নমতকে চূর্ণ করেছে এবং ইয়েমেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে জোরকদমে। এইসব কারণে ৎ মানবাধিকার আইনজীবীরা চান যে, বাইডেন সৌদির ওপর চাপ সৃষ্টি করে এই বিষয়গুলি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলুক। যদিও বাইডেন তা শুনতে বাধ্য নন। বরং তিনি বিতর্ক সম্পর্কে সচেতন। গত সপ্তাহে তিনি বলেছিলেন, মানবাধিকারকে এজেন্ডায় রাখবেন তিনি।পশ্চিম তীরে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বাইডেনের দেখা করার বিষয়ে হোয়াইট হাউজ বলেছে যে, ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে চ্যানেলগুলিকে আরো গভীর করতে কাজ করা হবে। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করার জন্য বাইডেন প্যালেস্টাইনি হাসপাতালের জন্য মার্কিন তহবিল ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে, যা ট্রাম্প বন্ধ করে দিয়েছিল। তাছাড়া ইসরাইলের সঙ্গে শান্তির জন্য দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান এবং পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য মার্কিন সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করবেন বাইডেন—এমন আশাও করা হচ্ছে। হোয়াইট হাউজ বলেছে, তারা ক্রমাগত নতুন শান্তি আলোচনার জন্য একটি ভিত্তি তৈরি করার উপায় খুঁজছে। আরেকটি ইস্যু যা বাইডেন তুলতে পারেন, তা হলো, মে মাসে আমেরিকান সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে হত্যা করা, যখন তিনি একটি ইসরাইলি সামরিক অভিযান কভার করছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে, যে বুলেটটিতে তার মৃতু্য হয়েছে তা সম্ভবত ইসরাইলি সৈন্যদের কাছ থেকে এসেছে। যদিও ইসরাইল বলেছে, গুলিটি তার সেনা নাকি জঙ্গিদের—ঠিক কার কাছ থেকে এসেছে তা এখনো তদন্ত করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রায় ৫০ বছর আগে প্রথম ইসরাইলে গিয়েছিলেন এবং নিজেকে ইহুদি রাষ্ট্রের শক্তিশালী সমর্থক হিসেবে প্রকাশ করেছিলেন। বেশির ভাগ ইসরাইলি বাইডেনের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছে। যদিও তারা ২০১৯ সালে ট্রাম্পকে বাইডেনের চেয়ে উচ্চতর রেটিং দিয়েছে। ট্রাম্প ইসরাইলের পক্ষ নেওয়ার জন্য বাহ্যিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন; যেমন—জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নিয়ে তার দাবিকে সমর্থন করা। মনে রাখতে হবে, ইসরাইল একটি দীর্ঘ রাজনৈতিক উত্থানের মধ্যে রয়েছে। নভেম্বরে মাত্র তিন বছরের মধ্যে দেশটিতে পঞ্চম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাইডেন তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী ইয়ার ল্যাপিডের সঙ্গে দেখা করেছেন। ল্যাপিড স্বভাবতই ইসরাইলকে আপ টু ডেট রাখা এবং ইরানের পারমাণবিক চুক্তির সম্ভাব্য পুনরুজ্জীবনের বিষয়ে কথা বলতে চেষ্টা চালিয়েছেন। ইরানের নেতারা ইসরাইলের অস্তিত্ব অস্বীকার করে এবং পর্যায়ক্রমে ইসরাইলকে আক্রমণ করার হুমকি দেয়। ইসরাইলের বিশ্লেষকরা ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করে যে, ইরানের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, যা অপ্রকাশিত। তারা কোনোমতেই ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দিতে চায় না। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের গুপ্তহত্যা এবং ইরানে স্থাপনা নাশকতার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে ইরান। এই সমস্ত পরিস্থিতির মধ্যেই বাইডেন এই অঞ্চলে তথা মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের ‘একীকরণ’ করতে চান। অর্থাত্ আরব দেশগুলির সঙ্গে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনে সহায়তা করতে চান। এমতাবস্থায়, যখন তিনি ইসরাইলি নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন এবং হলোকাস্ট স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করেন, তখন ইসরাইলি এবং আমেরিকান কিংবা এই অঞ্চলের নিরাপত্তার প্রতি বহু আগে দেওয়া তার প্রতিশ্রুতির কথা কতটুকু মনে পড়েছে—এটিই ভাববার বিষয়!
(সমাপ্ত...)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct