আমাদের সেনাবাহিনীকে আগের চেয়ে আরও তরুণ ও শক্তিশালী করতে অগ্নিপথ প্রকল্প আনা হয়েছে। অথচ বয়স একটা অজুহাত মাত্র, আসল কথা খরচ কমানো। আমাদের সেনাবাহিনীতে বুড়োরা কখনই ছিল না, তা সব সময় জোয়ানদেরই থেকেছে। সেই কারণে মাত্র পনেরো বছর চাকরি করার পর ৩২ থেকে ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে সেনাদের অবসর হয়ে যায়। এর মধ্যেই, প্রতি বছর তার শক্তি, তৎপরতা এবং সহনশীলতার পরীক্ষা নেওয়া হয়। ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন যোগেন্দ্র যাদব। আজ প্রথম কিস্তি।
প্রথম মিথ্যা: আমাদের সেনাবাহিনীকে আগের চেয়ে আরও তরুণ ও শক্তিশালী করতে অগ্নিপথ প্রকল্প আনা হয়েছে।
সত্য: বয়স একটা অজুহাত মাত্র, আসল কথা খরচ কমানো। আমাদের সেনাবাহিনীতে বুড়োরা কখনই ছিল না, তা সব সময় জোয়ানদেরই থেকেছে। সেই কারণে মাত্র পনেরো বছর চাকরি করার পর ৩২ থেকে ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে সেনাদের অবসর হয়ে যায়। এর মধ্যেই, প্রতি বছর তার শক্তি, তৎপরতা এবং সহনশীলতার পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই সেনাপ্রধান রাওয়াত অবসরের বয়স বাড়ানোর কথা বলেছিলেন, এখন হঠাৎ করে বয়স কমানো হচ্ছে কী করে? আর গড় বয়স কমানোর বিষয়টাই যদি ধরতে হয়, তাহলে স্থায়ী চাকরির মেয়াদ দুই-তিন বছর কমানো যেতে পারত। হঠাৎ তাকে মাত্র চার বছরের কাঁচা চাকরিতে পরিণত করার কী দরকার ছিল?
দ্বিতীয় মিথ্যা: অগ্নিপথ প্রকল্প সেনাবাহিনীর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াবে।
সত্য: প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ হতে হলে দীর্ঘ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। মাত্র চার বছরের জন্য দশম শ্রেণী পাস সেনা নিয়োগ করলে প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়বে কী করে? এই সময়ের মধ্যে, অগ্নিবীরেরা রাইফেল চালানো শিখবে, কিন্তু আধুনিক আর্টিলারি এবং মিসাইল ফায়ারিং, ট্যাঙ্ক বা নৌ এবং বিমানবাহিনীর মেশিনগুলি কীভাবে আয়ত্ত করবে?
তৃতীয় মিথ্যা: এই প্রকল্পে যুবকদের বড় মাত্রায় কর্মসংস্থান হবে।
সত্য: আসলে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাবে। এখনও পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে প্রতি বছর ৫০ থেকে ৮০ হাজার সরাসরি নিয়োগ হয়। অগ্নিপথ প্রকল্প দিয়ে সেই নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হল। এখন থেকে সেনাবাহিনীতে সরাসরি স্থায়ী ভাবে কোনো নিয়োগ হবে না। গত দু বছরে যেসব নিয়োগ বাকি পড়েছে, সেগুলোও বাতিল করা হয়েছে। এর বদলে প্রতি বছর ৪৫ থেকে ৫০ হাজার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হবে। তাদের এক-চতুর্থাংশ অর্থাৎ প্রায় ১২ হাজার সেনা প্রতি বছর স্থায়ী চাকরি পাবে। এমনকি যদি প্রতি বছর এক লক্ষ অগ্নিবীরও নিয়োগ করা হয়, তবে আগামী পনের বছরে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে স্থায়ী সেনার সংখ্যা ১২ লাখ থেকে কমে ৪ লাখ বা তারও কমে নেমে আসবে।
চতুর্থ মিথ্যা: এই প্রকল্পে নিয়োগ হওয়া অগ্নিবীররা অনেক সুবিধা পাবেন - বেতন, সঞ্চয় এবং স্থায়ী চাকরির সুযোগ।
সত্য: চার বছরের যেকোনো চাকরি অবশ্যই কিছু সুবিধা দেবে। প্রশ্ন হলো, স্থায়ী চাকরিতে যে বেতন, ভাতা, পেনশন, গ্র্যাচুইটি এবং প্রশিক্ষণ পাওয়া যায় তার থেকে কি চার বছরের কাঁচা চাকরি ভালো হবে? চার বছর পর নিশ্চিত সরকারি বা বেসরকারি চাকরির সব কথাই ভাঁওতাবাজি। বাস্তবটা হল যে, সরকার ১৫-২০ বছর ধরে চাকরি করা প্রাক্তন সেনাদেরই চাকরি দিয়ে উঠতে পারেনি। মোট ৫,৬৯,৪০৪ প্রাক্তন সেনা চাকরির জন্য নাম নিবন্ধন করেছিলেন, যার মধ্যে মাত্র ১৪,১৫৫ জন প্রাক্তন সেনা (অর্থাৎ মাত্র ২.৫%) সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি খাতে চাকরি পেয়েছেন। এমতাবস্থায়, অগ্নিবীরদের চাকরি পাওয়ার কথা শুধুই ভাঁওতাবাজি।
পঞ্চম মিথ্যা: এই প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের প্রায় সকল যুবক-যুবতী দেশসেবা করার সুযোগ পাবে, প্রত্যেকের মধ্যে দেশপ্রেমের অনুভূতি জাগ্রত হবে।
সত্য: ছোট দেশগুলির সাথে আমাদের তুলনা করা ঠিক হবেনা। আমাদের দেশে ১৭ থেকে ২১ বছর বয়সী প্রায় ১২ কোটি যুবক রয়েছে। প্রতি বছর ২.৫ কোটি যুবক - যুবতী (১.২৫ কোটি পুরুষ) অগ্নিবীরের বয়সের সীমায় প্রবেশ করবে। স্পষ্টতই তাদের এক শতাংশও অগ্নিবীর হওয়ার সুযোগ পাবে না।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct