সম্প্রীতি মোল্লা , কলকাতা, আপনজন: বুধবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধুরীর এজলাসে কড়া সমালোচনার মুখে পড়লো রাজ্য।‘ শাসক দল হয়ে গেলেই কি সব মাফ? বিধানসভার ভিতরে চেয়ার ভাঙার ঘটনার কী অবস্থা?’ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাখিল করা একটি মামলায় এই ভাষাতেই রাজ্য সরকারকে ভর্ত্সনা করলেন বিচারপতি বিবেক চৌধুরী। বিধানসভার অন্দরে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এফআইআর হয়েছিল শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে।সেই মামলা খারিজ করার আর্জি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী । বুধবার ছিল এই মামলার শুনানি। এদিন শুনানি পর্বতে ২০০৬-এর ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিলেন বিচারপতি। সেই সময় বিরোধী আসনে থাকা তৃণমূলের বিধায়কেরা ভাঙচুর চালিয়েছিলেন বিধানসভায়। সেই ঘটনায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়েছিল কি না? সেটাই রাজ্যের আইনজীবীর কাছে জানতে চাইলেন বিচারপতি।উল্লেখ্য, একটি মামলায় শীর্ষ আদালতের তরফে রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছিল শুভেন্দুকে। সেই প্রসঙ্গ এ দিন শুনানিতে উল্লেখ করেন শুভেন্দুর আইনজীবী। এরপরই রাজ্যের তরফে আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, -' সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বতী নির্দেশ কেন দেখাচ্ছেন শুভেন্দু'? এতেই ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি। তখন তিনি বলেন, ‘রুলিং পার্টি হলেই কি অগ্রাধিকার? বিধানসভার ভিতরের ঘটনা কেন আদালত দেখবে? রুলিং পার্টি হয়ে গেলেই কি সব মাফ? বিধানসভার ভিতরে চেয়ার ভাঙার কী অবস্থা? তখন আপনারা বিরোধী ছিলেন।’ পাশাপাশি বিচারপতি উল্লেখ করেন, বিধানসভার চেয়ার মানে সেটাও হেরিটেজের অংশ। সে ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। তিনি জানতে চান, তদন্ত হয়েছে কি না। বিচারপতি বলেন, ‘পুলিশ কমিশনারকে ডাকুন। ওনার কাছ থেকে ওই কেসের বর্তমান অবস্থা জেনে নেব।’বিধানসভার হয়ে সওয়াল করছিলেন অয়ন ভট্টাচার্য। তাঁকেই এ দিন এ কথাগুলো বলেন বিচারপতি। রাজ্যের আইনজীবী কে বিচারপতি বলেন, ‘বিচারপতি হিসেবে নয় সাধারণ মানুষ হিসেবে জানতে চাই কী হল সেই কেসের।’ উল্লেখ্য, বিধানসভা অধিবেশনে বিধানসভায় বিধায়ক বিশ্বজিত্ দাস, সৌমেন রায়, কৃষ্ণ কল্যাণী সহ একাধিক নেতাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে।বিধানসভা সেক্রেটারির পক্ষের আইনজীবী অয়ন ভট্রাচার্য মামলায় কোনও রকম স্থগিতাদেশ না দেওয়ার আর্জি জানান। তবে বিচারপতি বিবেক চৌধুরী সেক্রেটারি পক্ষের আইনজীবীকে বলেন, -' কেন বিধানসভার ম্যাটার হাইকোর্টে আনছেন? বিধানসভার সুদীর্ঘ কালের ফার্নিচার বাম আমলে ভাঙার বিষয়ে পুলিস কী ব্যবস্থা নিয়েছিল?' আগে সেই রিপোর্ট আনার কথা বলে আদালত। বিচারপতি বলেন, তারপর এই মামলার তদন্তের উপর তিনি কোনও স্থগিতাদেশ দেবেন কিনা ভেবে দেখবেন।প্রসঙ্গত, গত ১৬ মার্চ বিধানসভা চলাকালীন বিশ্বজিত্ দাস, কৃষ্ণ কল্যাণী এবং সৌমেন রায়কে শুভেন্দু অধিকারী শাসিয়েছেন বলে অভিযোগ। ৫ জন বিধায়ক শুভেন্দুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। অভিযোগ করে হেয়ার স্ট্রিট থানায় ১৭ মার্চ এফআইআর দায়ের হয়। আইনের সম্পূর্ণ অপব্যবহার করার অভিযোগে ৩৪১ ধারা দেওয়া হয়েছে। আগামী ২ অগাস্ট এই মামলার ফের শুনানি রয়েছে ।বিধানসভার অভ্যন্তরে শাসকদলের বিধায়কদের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে শুভেন্দুবাবুর বিরুদ্ধে হেয়ার স্ট্রিট থানায় দায়ের হয়েছিল অভিযোগ। গত মার্চে দায়ের সেই অভিযোগ খারিজের দাবিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী ।২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর বিধানসভার আসবাবপত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলের বিধায়করা। ওই দিন সিঙুরে যাওয়ার পথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাধা দেয় পুলিশ। কলকাতায় ফিরে সরাসরি সংবিধান হাতে বিধানসভায় চলে গিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভার লবিতে ত চিত্কার করতে থাকেন তিনি। মমতার চিত্কার শুনে বিধানসভা কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন তৃণমূল বিধায়করা। এর পর তত্কালীন রেলমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই বিধানসভার অন্দরে অমূল্য সব আসবাব ভাঙচুর করেন তারা।সেই পুরাতন ঘটনা এদিন উঠে এলো কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধুরীর এজলাসে শুনানি পর্ব।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct