আপনজন ডেস্ক: সিরিয়াল কিলারদের একেকজনের মধ্যেও আছে রকমফের। কেউ ঠান্ডা মাথার খুনি আবার কেউ রাগে খুনের নেশায় আসক্ত। ঠিক তেমনই এক সিরিয়াল কিলার হলেন চার্লস শোভরাজ। তিনি ‘বিকিনি কিলার' নামেই বিশ্বজুড়ে পরিচিত। বর্তমানে তিনি নেপালের জেলে বন্দি আছে। বয়স ৮০ এর কোঠায়। সুদর্শন ও শান্ত চেহারার মানুষ চার্লস শোভরাজকে দেখলে কারও আন্দাজ হবে না যে তিনি একজন সিরিয়াল কিলার। অনেকের প্রশ্ন, কেন তিনি এমন দুর্ধর্ষ হয়ে উঠেছিলেন? আসলে অনেক অপরাধীর মতো তারও ছিল বিপন্ন শৈশব। ভিয়েতনামের সবচেয়ে বড় শহর সাইগন, যার বর্তমান নাম হো চি মিন সিটি, সেখানে জন্ম চার্লসের। তার বাবা ছিলেন ভারতীয় ও মা ভিয়েতনামের নাগরিক। ভালোবাসার সম্পর্কে থাকাকালীনই চার্লসের মা গর্ভধারণ করেন। পরে ওই ব্যক্তি চার্লসকে নিজের ছেলে বলে স্বীকৃতি দিতে চাননি। এর মধ্যেই ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় দু’জনের। চার্লসের পরে বিয়ে করে ফ্রান্সের এক সেনানায়ককে। তিনি চার্লসকে দত্তক নিতে রাজি হলেও কিশোর চার্লসের মনে মনে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে নিজের পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যেতে থাকে চার্লস। ততদিনে তার মনের মধ্যে অপরাধ কর্ম করার ইচ্ছা জাগতে শুরু করে।
স্কুলের বোর্ডিং থেকে দুবার পালিয়েছিল চালস। ফ্রান্স থেকে সাইগনে ফিরে যাওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। ধীরে ধীরে ডাকাতি, ড্রাগ কিংবা হিরের চোরাচালানের মতো অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন চার্লস। ১৯ বছর বয়সে প্রথম জেল খাটে সে। তবে তার ব্যবহার মুগ্ধ করেছিল জেলকর্তাদের। তার ব্যবহার এতোটাই মনোমুগ্ধকর ছিল যে, সবাই তাকে সহজেই বিশ্বাস করে ফেলত। আর ওই সুযোগটিই কাজে লাগাতেন চার্লস। এরপর জেল থেকে পালিয়ে একের পর এক খুল সংঘটিত করেন তিনি। সারা জীবনে অসংখ্য খুন করেছে চার্লস। সাত থেকে আটের দশকে ১২-২৪টি খুনের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। গোয়েন্দাদের হিসাব বলছে, সিয়াটলের এক তরুণীই ছিল চার্লসের প্রথম শিকার। খুন করে যাকে থাইল্যান্ডের এক সমুদ্রখাঁড়িতে ভাসিয়ে দিয়েছিল সে। এরপর নেপাল, থাইল্যান্ড ও ভারতে একের পর এক অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যায় চার্লস শোভরাজের নাম। তার ব্যক্তিত্ব যে কাউকে সহজেই আকর্ষণ করতো। বিশেষ করে সুদর্শন ও স্মার্ট চার্লসকে দেখে নারীরা সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়তেন। আসলে ভালো ব্যবহারের আড়ালে শিকার ধরার ফাঁদ পেতে রাখতেন তিনি। তিনি এমনভাবে নারীদের সঙ্গে মিশতেন যে ওই নারীর কোনো সন্দেহই হতো না। তারপর সুযোগ বুঝে ওই মহিলাদেরকে ওষুধ দিয়ে অজ্ঞান করতো। তারপর ধর্ষণ করার পর তাদেরকে খুন করে কেটে পড়তেন চার্লস। তাকে ‘বিকিনি মার্ডারার' বলা হত, কারণে চার্লস টুরিস্ট নারীদেরকে টার্গেট করেই খুন করতেন। তিনি যতগুলো খুন করেছেন বেশিরভাগ মৃত নারীদেরকেই বিকিনি পরা অবস্থায় পাওয়া গেছে। এ কারণে অনেকেই ধারণা করেন, বিকিনি পরা নারীদের দেখলেই হয়তো তার মাথায় খুনের নেশা চেপে বসতো। তবে এ বিষয়ে চার্লস কোনো মন্তব্য করেননি। বিহারের তিহাড় জেলে একটানা ১০ বছর জেল খাটেন তিনি। ১৯৮৬ সালের তার ওই জেলে ১০ বছর পূর্তি হয়। তার ব্যবহারে মুগ্ধ পুলিশকর্তারাও। ওই সুযোগে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বেহুঁশ করে জেল থেকে পালায় সে। সারা জীবনে প্রায় ৩৫ বছরই জেলে কাটিয়েছেন তিনি। আফগানিস্তান, গ্রিসসহ নানা দেশের জেল থেকেই পালিয়েছেন তিনি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct