দুই পৃথিবী
শংকর সাহা
ছোটোবেলায় একবার পাড়ার অচিন্ত্য মাস্টার মশাই হিয়াকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন ,” সে বড় হয়ে কি হবে?” হিয়া হেসে বলে বলে,”বাবা বলতেন,জীবনে বড় হয়ে একজন ভালো মানুষ হই।“আজ ছোটো বেলার সেই কথাগুলো হিয়ার প্রায় মনে পড়ে। হিয়া নিবারণবাবুর প্রথমপক্ষের একমাত্র সন্তান। প্রথমপক্ষের স্ত্রী ক্যান্সারে মারা যাবার পরে নিজের অমতেই বাড়ির সকলের কথা রাখতে ছোট্ট হিয়াকে মানুষ করতে দ্বিতীয় বিবাহ করেন। নিবারণবাবু সব সময় চাইতেই হিয়া ও দিয়া যেন একভাবেই মানুষ হন। তবে মা হারার কষ্ট যেন হিয়াই শুধু বোঝে। আজও মায়ের অভাবটুকু যেন তার অপূর্ণই থেকে গেল। দিয়া নিবারণবাবুর দ্বিতীয় পক্ষের সন্তান। ছোট বেলা থেকেই দিয়া একটু অন্যরকম। অসম্ভব জেদ তার। সেবারের পুজোয় তো হিয়ার জন্যে যে জামাটি নিবারণবাবু কিনেছিলেন সেটি দিয়া করে নিয়েই ছিলো। পাড়ার সকলে দুই বোনকে দেখে বলেন,”সম্পূর্ণ যেন দুই পৃথিবী। সম্পূর্ণ ভিন গ্রহের প্রাণী দুই বোন।“ পাড়ার সকলে যেন হিয়াকেই বেশি ভালোবাসে। দিয়া বি.টেক পড়ছে। পড়ার চেয়ে তার বেশি টান অন্য নেশায়। কলেজের ছেলেদের সাথে আড্ডা দেওয়া,রাত জেগে বাড়ি ফেরা যেন আজ তার অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। নিবারণবাবুর শত বারণ সত্বেও সে যেন কথায় কর্ণপাত করেনা। দিয়াকে নিয়ে চিন্তায় থাকলেও তিনি যখন হিয়ার কথা ভাবেন তখন গর্বে তার যেন বুক ফুলে যায়। যেমন শিক্ষাদিক্ষা তেমনই আচার সংস্কৃতিতে হিয়া যেন ঠিক মায়ের মতই হয়েছে।
সেদিন ছিল পাড়ায় অনুষ্ঠান। হিন্দি সিনেমার কোনো এক গায়ক যেন শো করতে এসেছেন। অনেক রাত করে সেদিন দিয়া বাড়ি ফেরে। পরের দিন সকাল তখন প্রায় আটটা। কলিং এর শব্দ পেয়ে দরজা খুলতেই হিয়া চকে ওঠে, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে প্রায় জনা দশেক পুলিশ। হিয়া বাড়ির ভেতরে এসে সবাইকে ডাকতে থাকে। সাথে সাথে তিনজন পুলিশ অফিসার ঘর থেকে দিয়াকে টেনে বের করে নিয়ে আসেন। সকলে জানতে পারে,মাদক পাচার চক্রে দিয়ার নাম জড়িত। কলেজ ক্যান্টিনে সেইই মাদক পাচার করত। তাই ট্রাইবুনালে তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সকলে স্তম্ভিত হয়ে যায়। দিয়াকে নিয়ে পুলিশের গাড়ি বেরিয়ে যায়। মেয়ের এই খবর শুনে নিবারণবাবু অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন প্রায় বিকেল হয়ে এসেছে। সারাদিনে কারো পেটে জলটুকুও পড়েনি। হিয়া বাবার কাঁধে হাত দিয়ে বলে,” বাবা,চলো।কিছু মুখে দেবে। একটি যে উকিল ঠিক করতে হবে। দিয়া যে বড়ই কষ্ট পাচ্ছে ওখানে” অবাক বিস্ময়ে নিবারণবাবু হিয়ার দিকে চেয়ে বলে, “ মারে... এতো ভাবিস তুই!!” “ বা!রে..ও যে আমারই ছোটো বোন”
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct