মধ্যপ্রাচ্যে ন্যাটো ধরনের আরব প্রতিরক্ষা জোট গঠনের বিষয় হঠাৎ করে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। জর্দানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ গত শুক্রবার বলেছেন, তিনি পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর মতো মধ্যপ্রাচ্যে একটি সামরিক জোটকে সমর্থন করেন। সিএনবিসির সাথে কথা বলার সময়, বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেছেন, এ জাতীয় জোটের সনদ খুব স্পষ্ট হওয়া দরকার। যারা মধ্যপ্রাচ্যে ন্যাটোকে সমর্থন করবে, তবে বাকি বিশ্বের সাথে সংযোগ রাখবে তা খুব স্পষ্ট হতে হবে। এ লিখেছেন মাসুম খলিলী। আজ তৃতীয় কিস্তি।
বর্তমানে বিশ্বে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিবর্তন এবং প্রত্যাশিত ভবিষ্যৎ জোটের সাথে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও সামরিক সিদ্ধান্ত নেয়া অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রভাব, মস্কোর বিরুদ্ধে একীভূত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং ইরানের সাথে একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা অবশ্যই এই অঞ্চলে আসন্ন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের পরিধি এবং গুরুতর অবস্থাকে ঘনীভূত করবে। প্রশ্ন হল, সামরিক জোট গঠন কি এর সমাধান হবে এবং যদি হয়, তাহলে কি এমন একটি শক্তিশালী জোট গঠন করা সম্ভব হবে? মধ্যপ্রাচ্য নিরাপত্তা জোটের ধারণা নতুন নয়। এটা ১৯৫০ সাল থেকে মাঝে মধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছে। ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি বাগদাদ চুক্তি হয়েছিল তুরস্ক, ইরান, পাকিস্তান ও যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি একমাত্র আরব সদস্য ইরাককে নিয়ে। এর পর থেকে প্রায় দুই দশক ধরে এটি সক্রিয় ছিল।মধ্যপ্রাচ্যে এখন নানা ঘটনার কল্পনা করা হয়। যদি ইরান এই অঞ্চলে আরো সামরিক আক্রমণের জন্য একটি স্প্রিংবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করার জন্য কিছু ইরাকি বা সিরিয়ার অঞ্চল আক্রমণ এবং দখল করার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে কী হবে? যদি তুরস্ক উত্তর ইরাকের কিছু এলাকা দখল করে নেয় অথবা ইয়েমেনে শান্তিপূর্ণ সমাধান যদি না হয় তাহলে কী হবে? যদি ইরানি শাসনের সাথে যুক্ত একটি ইরাকি সরকার আবার কুয়েত আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয় তবে কী দাঁড়াবে? যদি হাসান নাসরুল্লাহ লেবানন-ইসরাইল সীমান্তে একটি ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা স্থাপন করেন তার প্রতিক্রিয়া কী হবে? আর রাশিয়া যদি উত্তর আফ্রিকায় হাত বাড়িয়ে দেয় তখন কী হবে?
এসব নানা জল্পনার মধ্যে বলা হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জন্য সময় এসেছে শুধু নিজেদের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতা অর্জন করার এবং তাদের পথে আসা যেকোনো হুমকিকে প্রতিরোধ করার জন্য যৌথ সক্ষমতা গড়ে তোলার। আর যৌথ প্রতিরক্ষা বলয় গড়ার জন্য এই যুক্তি সামনে এসেছে। যতদূর জানা যায়, আগের কোনো জোটের মতো হবে না এই সামরিক জোট। আর এটি ন্যাটোর কোনো সহযোগী সামরিক জোটও হবে না, যেটি কেবলই আমেরিকা ও তার মিত্রদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করবে। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির একজন পর্যবেক্ষকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, নতুন এই সামরিক জোট কেবল আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সীমিত থাকবে না। এটি আরবের বাইরে পাকিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। এর সদস্য হতে পারে সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ উপসাগরীয় দেশগুলো আর সেই সাথে মিশর, তুরস্ক ও পাকিস্তান। সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটে বাংলাদেশও সদস্য ছিল। জাকার্তা, কুয়ালালামপুর বা ঢাকা চাইলে নতুন এই জোটেরও সদস্য হতে পারে। তবে এই সামরিক জোটের সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই ইসরাইলের। ইরান ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও এর সদস্য হবে না। যতদূর জানা জানা যায়, বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য ও সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ভৌগোলিক নিরাপত্তা বিধানের একটি ব্লক হিসেবে এটি কাজ করবে। যুক্তরাষ্ট্র বা তার মিত্র ইসরাইল অথবা রাশিয়া-চীন বা ইরানের সাথে সঙ্ঘাতে জড়ানোর উদ্দেশ্য এর থাকবে না। তবে এর সদস্য দেশগুলোর কোনো একটি আক্রান্ত হলে যৌথভাবে সবাই সাড়া দেবে ন্যাটোর মতো। ন্যাটো সামরিক জোটের পাঁচ ধারার মতো কোনো অবয়বে বিধান থাকবে এতে যার আওতায় কোনো একটি সদস্য দেশ আক্রান্ত হলে ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর মতো অন্য সব দেশ তাতে ভূমিকা রাখবে। এই বিধানের কারণে সামরিক জোটের সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্কতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct