রাজু আনসারী, ফরাক্কা, আপনজন: মুর্শিদাবাদ জেলার ফরাক্কার দাদনটোলা গ্রামের কৃষক ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে মঙ্গলবার দেখা করলেন ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের চেয়ারম্যান তথা ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী। মঙ্গলবার সকালে নিউ ফরাক্কা স্টেশনে নেমে সকাল বেলা সাড়ে নটা নাগাদ দাদনটোলা গ্রাম যান তিনি। কৃষি জমি ও বাগানের উপর দিয়ে হাইটেনশন লাইন নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয় তা নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে জোর করে জমি নেওয়ার বিরুদ্ধে সরব হন নওশাদ সিদ্দিকী। পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ সহ সার্বিক বিষয় নিয়ে জনগণের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। চাষের জমি ও বসত বাড়ির উপর দিয়ে আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের পাশে থেকে নওশাদ সিদ্দিকী তাদের অভয় দিয়ে বললেন, পুলিশ ভয় দেখিয়ে আসছে। এটা মনে রাখবে নওশাদ সিদ্দিক বিধানসভায় আছে। তোমাদের প্রতিনিধি আছে। দেউচা, পাঁচাামির মতো এটা নিয়েও আওয়াজ তুলব যদি কারও সঙ্গে অবিচার হয়। তোমার একদম ভয় করবে না। ভয় করার কোনও জায়গা নেই। যখন আদিবাসীদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছে তখন সেখানে ছুটেছি। এখানে মুসলমানদের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে। এখানেও ছুটে এসেছি। নওশাদ আরও বলেন, যেটা সমাধান করা যায় সেটা করব। আমি কোম্পানির লোকও নই, আর সরকারের লোক নই, আমি তোমাদের লোক। তাই ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। তোমরা চোর নও, ডাকাত নও, কদিন তোমাদের জেলে রাখবে। যদি গাঁজা কেস দেয়, তাকেও প্রমাণ করতে হবে কোথা থেকে গাঁজাটা এল।
তোমরা মনে রাখবে এক মাঘে শীত যায় না। রাজ্য সরকারের সরাসরি নাম না করে নওশাদ আন্দোলকারীদের বলেন, মহারাষ্ট্র তো দেখেছ সরকার উলটে গেছে। তাই কখন রাতারাতি সরকার উল্টে যাবে কেউ বুঝতে পারবে না। সাংবাদিকদের কাছে নওশাদ জানান, এটা বেসরকারি কোম্পানির প্রজেক্ট। রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও প্রকল্প নয়। আর হাই টেনশনের লাইনের জন্য কতটা জায়গা নেওয়া হচ্ছে কেউ জানে না। যাদের লিচু গাছ, আম গাছের ফল বেচেই সংসার চলে তাদের জন্য ক্ষতিপূরণ খুব সামান্য বলে তিনি জানান। তার দাবি, একটা লিচু গাছ সত্তর বছর বাঁচে। আর ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে মাত্র সত্তর হাজার টাকা। অথচ, প্রতি বছর একটি করে গাছের ফল ১৫ হাজার টাকায বেচে সংসার যারা চালান তাদের কি হবে। তাই উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চাই। বাসিন্দাদের নোটিশ দেওয়া হয়নি বলে নওশাদ অভিযোগ জানান। যদিও স্থানীয় প্রধান ও বিডিও থেকে দাবি করা হয়েছে বাসিন্দাদের ডাকা হয়েছিল কিন্তু আসেননি কেউ। নওশাদ এ নিয়ে বলেন, আইন মেনে নোটিশ দিয়ে ডাকা উচিত। চাষি বলেই যখন তখন ডাকলে চলে আসবেন এটা হতে পারে না। তিনি মানুষের প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন বলে সাফ জানিয়ে দেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সাপ্লাই দিতে ঝাড়খন্ডের গোড্ডা হয়ে ফরাক্কার উপর দিয়ে আদানী গোষ্ঠীর হাইটেনশন তার নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার দাদনটোলা গ্রামে। পুলিশের সঙ্গে জনতার কার্যত যুদ্ধ বেধে যায়। চলে ইট পাটকেল। লাঠিচার্জেরও অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। সংঘর্ষে দুই পুলিশ কর্মী, গ্রামবাসী সহ জখম হন আটজন। জখম হন জেলা পরিষদের সদস্য আসিফ ইকবাল। পুলিশের সঙ্গে বচসাও হয় তার। যদিও পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসে কাজ শুরু করে আদানি গোষ্ঠী। ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct