মধ্যপ্রাচ্যে ন্যাটো ধরনের আরব প্রতিরক্ষা জোট গঠনের বিষয় হঠাৎ করে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। জর্দানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ গত শুক্রবার বলেছেন, তিনি পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর মতো মধ্যপ্রাচ্যে একটি সামরিক জোটকে সমর্থন করেন। সিএনবিসির সাথে কথা বলার সময়, বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেছেন, এ জাতীয় জোটের সনদ খুব স্পষ্ট হওয়া দরকার। যারা মধ্যপ্রাচ্যে ন্যাটোকে সমর্থন করবে, তবে বাকি বিশ্বের সাথে সংযোগ রাখবে তা খুব স্পষ্ট হতে হবে। এ লিখেছেন মাসুম খলিলী। আজ প্রথম কিস্তি।
মধ্যপ্রাচ্যে ন্যাটো ধরনের আরব প্রতিরক্ষা জোট গঠনের বিষয় হঠাৎ করে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। জর্দানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ গত শুক্রবার বলেছেন, তিনি পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর মতো মধ্যপ্রাচ্যে একটি সামরিক জোটকে সমর্থন করেন। সিএনবিসির সাথে কথা বলার সময়, বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেছেন, এ জাতীয় জোটের সনদ খুব স্পষ্ট হওয়া দরকার। আমি প্রথম ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হবো যারা মধ্যপ্রাচ্যে ন্যাটোকে সমর্থন করবে, তবে বাকি বিশ্বের সাথে সংযোগ এবং আমরা কিভাবে এর সাথে ফিট করি তা খুব স্পষ্ট হতে হবে। আবদুল্লাহ এই জোটের কথা এমন এক সময় বলেছেন যে সময়টিতে মার্কিন আইন প্রণেতারা সিনেট ও কংগ্রেসে ইরানের মোকাবেলার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের বিমান প্রতিরক্ষাকে একীভূত করার পরিকল্পনার আহ্বান সম্বলিত একটি বিল উত্থাপন করেছেন। আর ইসরাইলি কর্মকর্তারা বলেছেন, আরব দেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিদ্যমান রয়েছে, যার কারণে ইতোমধ্যেই এই অঞ্চলে ইরানের একাধিক হামলা ব্যর্থ হয়েছে। জর্দানের বাদশাহ আব্দুল্লাহর প্রতিরক্ষা জোট সমর্থনের ধারণাটি নতুন করে উঠে আসার এ সময়ে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স জর্দান, মিসর, তুরস্ক সফরে বের হয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শিগগিরই সৌদি আরব, পশ্চিম তীর ও ইসরাইলে যাত্রাবিরতি করে মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রথম সফর করবেন। আর মধ্যপ্রাচ্যে একটি প্রতিরক্ষা ফ্রন্ট গঠন বাইডেনের অ্যাজেন্ডায় রয়েছে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।
আরব ন্যাটোর বিষয়টি প্রথম উঠে আসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তার বিশেষ দূত কাম জামাতা জারেদ কুশনার যখন ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের আবরাহাম চুক্তির বিস্তারের ব্যাপারে দৌড়ঝাঁপ করে যাচ্ছিলেন, তখন। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তখন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী আর কুশনারের ব্যক্তিগত বন্ধু হিসেবে খ্যাত মুহাম্মদ বিন জায়েদ ও মুহাম্মদ বিন সালমান মধ্যপ্রাচ্যের দাপুটে নেতা। দুজনের প্রথমজন এরই মধ্যে তার দেশের প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হয়ে গেছেন। অপরজনের বাদশাহ হওয়ার পথে একের পর এক বাধা অপসারিত হচ্ছে। অন্য দিকে ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়া ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সামনে আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিমান প্রতিরক্ষা জোট গঠন হয়েছে যার অন্যতম সদস্য হলো ইসরাইল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। আর ‘আইটুইউটু’ নামের আরেকটি জোটে এ তিন সদস্যের সাথে রয়েছে ভারত। এই সব জোটের পর ‘আরব ন্যাটো’ গঠনের স্থগিত বিষয় হঠাৎ চাঙ্গা হয়ে ওঠার পেছনে যে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় রয়েছে তাতে সন্দেহ নেই।
কেমন হতে পারে এই জোট বাদশাহ আবদুল্লাহ ন্যাটোর মতো যে প্রতিরক্ষা জোটের সমর্থনকারী প্রথম ব্যক্তি হবেন বলে উল্লেখ করেছেন সেটি কেবল আরব দেশগুলোর কোনো সামরিক জোট হবে নাকি মুসলিম সামরিক বাহিনী গঠনের যে উদ্যোগ একবার সৌদি আরবের নেতৃত্বে নেয়া হয়েছিল তেমন কোনো জোট হবে এ বিষয়টি এখনো স্পষ্ট করা হয়নি। আবার তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান শক্তিমান মুসলিম দেশগুলোর একটি ব্লক করার যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তার সাথে এর কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা সেটিও স্পষ্ট নয়। তবে বাস্তবতা হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নতুন যুদ্ধ ফ্রন্টে অন্তর্ভুক্ত করতে চায় এমন দেশগুলোর আলাদা আলাদা অগ্রাধিকার রয়েছে। ঐক্য তৈরির পরিবর্তে দীর্ঘস্থায়ী আঞ্চলিক ও আদর্শিক দ্বন্দ্ব তাদের বিভক্ত করেছে। কাতার ও সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ উপসাগরীয় অঞ্চলে এখনো কম বেশি অব্যাহত রয়েছে। কাতার কৌশলগত ও কূটনৈতিক কারণে ইরানের সাথে সম্পর্ক উন্নত করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন কাতার অবরোধে জড়িত দু’টি দেশ। তারা কাতারের সাথে উষ্ণ সম্পর্কের জন্য এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি যা ইঙ্গিত করে যে, পাঁচটি আরব দেশ ও কাতারের মধ্যে বিরোধ এই অঞ্চলে ইরানের কথিত প্রভাবের চেয়েও গভীর।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct