এম মেহেদী সানি, কলকাতা, আপনজন: কলকাতার বিশ্ব বাংলা মিলন মেলা প্রাঙ্গণে তিনদিন ধরে অনুষ্ঠিত পঞ্চম কলকাতা গার্মেন্ট এক্সপো-২০২২ শেষ হল শনিবার। এদিন মূলত সবচেয়ে আকর্ষণ ছিল পোশাক শিল্প নিয়ে বিশেষ আলোচনা। সেমিনারের বিষয়বস্তু ছিল পোশাক তৈরি ও ফ্যাশনের বিশ্বজনীনতাই বাংলাকে গড়ে তোলা। এদিনের সেমিনারে প্রারম্ভিক ভাষণ দেন বেঙ্গল রেডিমেড গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার এন্ড ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি আলমগীর ফকির, সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা, ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহজাহান আলী মোল্লা। সেমিনারে যারা বক্তব্য রাখেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন এপারেল এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের সেক্রেটারি সঞ্জীব নন্দওয়ানি, বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট কে আই হোসেন, মার্কেটিং এন্ড কমার্শিয়াল রেটেলার্স এসোসিয়েশনে অফ ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর ড. হিতেশ ভাট, স্টাইল বাজারের ডিরেক্টর শ্রেয়াংশ সুরানা, জনসন এন্ড জনসনের মুখ্য বিজ্ঞানী ড. সাইদুর রহমান প্রমুখ।
এদিনের সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেমারির মামুন ন্যাশনাল স্কুলের সম্পাদক শিক্ষাবিদ কাজী মুহাম্মাদ ইয়াসিন, কলকাতার বিশিষ্ট চিকিৎসক ড. হাম্মাদুর রহমান, দক্ষিণ দিনাজপুরের বেস আন নূর স্কুলের সম্পাদক খাদেমুল ইসলাম, ডাক্তারি ও পেশাদারি কোর্সের পরামর্শ সংস্থা 'চেকমেট'-এর কর্ণধার কাজী হাবিব, মানডি হাউসের মুহাম্মাদ নাজিম প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে সঞ্চালনা করেন পলিসি টাইমসের সম্পাদক আকরাম হক। সেমিনারে যেসব বিষয় নিয়ে মূলত আলোচনা হয় সেগুলো হল, সরকারী নীতি, স্কিম এবং ভর্তুকি থেকে উপকৃত হওয়া ও তার উপালাব্ধতা, বর্তমান চ্যালেঞ্জ, সমাধান এবং সুযোগ, চিন, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম থেকে শিক্ষা, বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডগুলির খুচরো বিক্রি ও রফতানি, দেশের মধ্যে ব্র্যান্ড তৈরি করা এবং খুচরা বিক্রেতাদের সংগঠিত করা, ভারত -বাংলাদেশ, ভারতীয় টেক্সটাইল-গার্মেন্টসের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করা, বিশ্বমানের প্রযুক্তি মাধ্যমে টেকসই উৎপাদন করা, পুঁজির জন্য বিকল্প ব্যবস্থার সন্ধান করা, ফ্যাশন শিল্প এবং গার্মেন্টস-ফ্যাশন সংযোগ স্থাপনের ধারণা তৈরি করা, বাংলায় পোশাক শিল্পের সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ উপলব্ধি করা, ডকুমেন্টেশনের গুরুত্ব প্রভৃতি।
সেমিনারে বেঙ্গল রেডিমেড গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার এন্ড ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি আলমগীর ফকির বলেন, জিডিপি, রপ্তানি আয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বৃহত্তম অবদান রেখেছে এই পোশাক শিল্প। অত্যন্ত দক্ষ কম শ্রম, খরচে বিপুল পরিমাণে বাজারজাত হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে পোশাক খাতে ২,২০০ কোটি টাকা প্রণোদনা ও ভর্তুকি মিলেছে। ৫.১ কোটি মানুষ সরাসরি নিযুক্ত, পরোক্ষভাবে ৬.৮ কোটি মানুষ এই পোশাক শিল্প যুক্ত রয়েছে। রেডিমেড পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত ৯৮০০ কোটি টাকা এবং এর প্রবৃদ্ধির হার ২৭.৮৫ শতাংশ। এপারেল এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের সেক্রেটারি সঞ্জীব নন্দওয়ানি রেডিমেড পোশাক ব্যবসায় সমস্যা, সুযোগ, দুর্বলতা ও এর ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেন। সেমিনারে এশিয়ার অন্যতম পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে মেটিয়াবুরুজের আরো উন্নতির ক্ষত্রে অন্তরায় নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষজ্ঞ পোশাক শিল্পের বিকাশে ক্ষেত্রে যেসব বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তা তুলে ধরা হয়।যেমন, সচেতনতার অভাবে পোশাক ইউনিটগুলিতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের কোনও নীতি গ্রহণ করার ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পণ্যের গুণমান কমছে এবং ফলে এটাকে অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য হিসেবে পরিগণিত করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।মেটিয়াবুরুজে যে রপ্তানি ভিত্তিক ইউনিটগুলিতে যে আধুনিক ডিজাইনের অভাব এবং এই অভাবের কারণে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে তা তুলে ধরা হয় এই সেমিনারে। এ প্রসঙ্গে হাই-টেক মেশিন এবং প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেশনের জন্য ল্যাবরেটরি সুবিধা না মেলার কথা উল্লেখ করা হয়। এই সব সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সহযোগিতা প্রার্থনা করা হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct