নিজস্ব প্রতিবেদক, ফরাক্কা, আপনজন: দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিডের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন সেখানকার চাষি ও বাসিন্দারা। এবার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি হওয়ায় আদানি গোষ্ঠী বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ফরাক্কার উপর দিয়ে যে হাইটেনশন লাইন গিয়েছে তা নিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন সেখানকার মানুষ। বিক্ষোভ সামাল দিতে পুলিশ চাষি ও স্থানীয় বসিন্দারে উপর লাঠি চার্জ করায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সেদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতেঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডা থেকে মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার ইমামনগর ও বেনিয়াগ্রাম জিপির উপর দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ করছিলেন আদানি গ্রুপের কর্তারা। শনিবার ফরাক্কার জাফরগঞ্জ দাদনটোলা এলাকায় আম বাগান ও বসত বাড়ির উপর দিয়ে হাই টেনশনের তার নিয়ে যেতে গেলে গ্রামবাসীরা আপত্তি জানান। তবে, ফরাক্কার জনগণের আন্দোলন ঠিক ভাঙড়ের অনুরূপ না হলেও আন্দোলনে নেমেছেন চাষি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, হাইটেনশন লাইনের তার তাদের জমির উপর দিয়ে নিয়ে গেলেও তাদের আগাম জানানো হয়নি। পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণও দেওয়া হচ্ছে না। তারা দাবি জানান, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না দেওয়া পর্যন্ত তারা আদানি গোষ্ঠীর লোকজনকে বিদ্যুতের হাই টেনশনের তার নিয়ে যেতে দেবেন না। আর উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে তারা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। তার রায় না বেরনো পর্যন্ত হাই টেনশনের লাইন পাতার করা যাবে না। বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফরাক্কা থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। গ্রামবাসীদের সঙ্গে বচসা বাধে স্থানীয় পুলিশ ও আদানি গোষ্ঠীর লোকজনের সঙ্গে। কার্যত খন্ডযুদ্ধ বেঁধে যায় পুলিশের। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বাধে। চলে লাঠিচার্জ। পুলিশের বিরুদ্ধে ইট পাটকেল ছোড়ার অভিযোগ উঠছে। ঘটনায় জখম হয়েছেন তিনজন গ্রামবাসী। জখম হয় দুই জন পুলিশ কর্মীও আহত হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিক্ষোভের খবর পেয়ে সেখানে হাজির হয়েছিলেন স্থানীয় জেলা পরিষদের সদস্য আসিফ ইকবাল। পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়ার পর তাকে জামার কলার ধরে পুলিশ হেনন্থা করে বলে অভিযোগ।
এ ব্যাপারে যুব কংগ্রেস নেতা তথা জেলা পরিষদ সদস্য আসিফ ইকবাল ‘আপনজন’ প্রতিনিধিকে বলেন, গ্রামবাসীদের দাবি হাইকোর্টে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাই টেনশনের কাজ বন্ধ রাখতে হবে। হাই টেনশনের তার আবাসিক স্থানের উপর দিয়ে যাওয়ায় সেখানে আর দোতলা বাড়ি করা যাবে না। সেজন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জাাননো হয়েছে। কিন্তু আদানি গোষ্ঠী শুধুমাত্র যেখানে তাদের টাওয়ার বসেছে সেই জমির জন্য ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে, যেখান দিয়ে হাই টেনশনের তার যাচ্ছে সেই সব জমির জন্য ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না। কিছু এলাকার বসত বাড়ির উপর দিয়ে হাই টেনশনের তার গিয়েছে, আর বাকি এলাকায় আম ও লিচু বাগানের উপর দিয়ে। আদানি গোষ্ঠী শুধু আম ও লিচুর ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে যা খুব সামান্য। আর সেখানেই গ্রামবাসীদের আপত্তি। গ্রামবাসীদের সঙ্গে গণ্ডগোল প্রসঙ্গে আসিফ ইকবাল জানান, তিনি দেরিতে বিক্ষোভের খবর পেয়ে যখন এলাকায় যান তখন সেখানে কাঁদানে গ্যাস সহ বিশাল পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন থানার আইসি ও বিডিও। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করতে যান তিনি। পুলিশ প্রশাসনকে তিনি হাইকোর্টের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে বলেন। কিন্তু তারা বদ্ধ পরিকর ছিলেন যে করেই হোক এদিনই কাজ শেষ করবেন। এ নিয়ে আসিফের অভিযোগ, থানার আইসি দেবব্রত চক্রবর্তী সরাসরি বলেন যা হবে এখানেই হবে, কোনও বসাবসি হবে না। আজই কাজ হবে। তা মানতে না চাওয়া পুলিশ লাঠি চার্জ করে বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, আনিফ জনপ্রতিনিধি হলেও তাকে রেহাই দেয়নি। এমনকি মহিলাদের উপরও লাঠি চার্জ হয়েছে। আহত হয়েছে জনা দশেক। তাদেরকে ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিনে, যুব কংগ্রেস নেতা আসিফ ইকবালকে নিগ্রহ করায় পুলিশের ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি সাদাব খান।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct