আপনজন ডেস্ক: পয়গম্বর হজরত মুহাম্মদ সা.-এর বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন বিজেপির বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মা। তাকে সমর্থন করায় রাজস্থানের উদয়পুরে দুই ব্যক্তি এক দর্জির মুণ্ডুৃ তলোয়ার দিয়ে নৃশংসভাবে খণ্ডিত করে হত্যা করে। নূপুর শর্মার সেই মন্তব্যকেই উদয়পুরের ঘটনার জন্য জন্য দায়ী করল সুপ্রিম কোর্ট। নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে বহু রাজ্যে দায়ের করা সমস্ত এফআইআর তদন্তের জন্য দিল্লিতে স্থানান্তরিত করার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নূপুর শর্মার বক্তব্য উদয়পুরের দুর্ভাগ্যজনক হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। তার আলটপকা মন্তব্য পুরো দেশে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। সেই মন্তব্যের জন্য তার উচিত সমগ্র দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া। বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, সারা দেশে যা ঘটেছে তার জন্য নূপুর শর্মা একাই দায়ী। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে. যে নবী সা.-এর বিরুদ্ধে তার মন্তব্যগুলি সস্তা প্রচার, একটি রাজনৈতিক এজেন্ডা বা কিছু ঘৃণ্য ক্রিয়াকলাপের জন্য।
নূপুর শর্মার আইনজীবী মনিন্দর সিং সুপ্রিম কোর্টকে নূপুর শর্মার সমর্থনে বলেন, তিনি তার মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন এবং মন্তব্যগুলি প্রত্যাহার করেছেন। এর জবাবে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বলেছে, তার উচিত ছিল টিভিতে গিয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া। তিনি প্রত্যাহার করতে খুব দেরি করেছিলেন। আর যেখানে তিনি বক্তব্য রেখেছেন, সেখানকার বিষয়গুলি ধর্মভিত্তিক ছিল না। উস্কানি দেওয়ার জন্য ওই বিবৃতি দেওয়া হয়। নূপুর শর্মার আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে বলেন, নূপুর শর্মা হুমকির মুখে রয়েছেন এবং কোথাও যাতায়াত তার জন্য এখন নিরাপদ নয়। জবাবে বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, তিনি হুমকির মুখে রয়েছেন নাকি নিজেই নিরাপত্তা–হুমকি হয়ে উঠেছেন? যেভাবে তিনি দেশজুড়ে (ধর্মীয়) আবেগ উসকে দিয়েছেন, দেশে যা কিছু ঘটছে, তার জন্য এই নারী একাই দায়ী। বিচারপতি সূর্য কান্ত আরও বলেন, ‘কীভাবে তিনি (নূপুর শর্মা) বিতর্ক উসকে দিয়েছেন, আমরা দেখেছি। কিন্তু যেভাবে তিনি পুরো বিষয়টি বললেন এবং পরবর্তীকালে নিজেকে আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দিলেন, তা লজ্জাজনক। তাঁর উচিত গোটা জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া।দিল্লি পুলিশ ও বিতর্ক আয়োজনকারী টেলিভিশন চ্যানেলের প্রসঙ্গ টেনে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বলে, দিল্লি পুলিশ কী ভূমিকা পালন করেছে? আমাদের মুখ খুলতে বাধ্য করবেন না; কী নিয়ে টেলিভিশন বিতর্কের আয়োজন করা হয়েছিল? একটা ইস্যু উসকে দিতে? কেন তারা একটি বিচারাধীন বিষয়কে বিতর্কের জন্য নির্ধারণ করেছিল?’
সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলে। ক্ষমতাসীনদের ইঙ্গিত করে সর্বোচ্চ আদালত বলে, যখন আপনারা অন্যদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন, তারা তাৎক্ষণিক গ্রেফতার হন। যখন সেটা আপনাদের বিরুদ্ধে হয়, তখন আর কেউ আপনাদের স্পর্শ করার সাহস পায় না।’নূপুর শর্মারকে ভর্ৎসনা করে সর্বোচ্চ আদালত আরও বলেছে, নূপুর শর্মার মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তাঁর ‘একগুঁয়ে ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ’ প্রকাশ পেয়েছে। বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, তিনি যদি একটি দলের মুখপাত্র হন, তাহলে যা হয়। তিনি ভেবেছেন, তাঁর প্রতি সরকারের সমর্থন রয়েছে এবং দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ছাড়াই তিনি যেকোনো বক্তব্য দিতে পারেন। উল্লেখ্য, মে মাসের শেষের দিকে, ক্ষমতাসীন বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা একটি টিভি বিতর্কের সময় নবী মুহাম্মদ সা.কে নিয়ে একটি মন্তব্য করেছিলেন, যা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। বিতর্কের ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার সাথে সাথে কাতার, আফগানিস্তান, সৌদি আরব সহ সহ কমপক্ষে ১৬টি দেশ এই মন্তব্যের জন্য ভারতের সমালোচনা করেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct