সম্প্রতি ভারতে মুদ্রাস্ফীতি দ্রুত ভাবে ঊর্ধ্বগতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং সাধারণ আমজনতাকে খুবই সমস্যার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাবের আগেই কার্যত ভারতীয় অর্থনীতি খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে ছিল। গত ৪৮ বছরের মধ্যে সর্বাধিক বেকারত্বের হার উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে দেশের মধ্যে উদ্বেগ প্রতিফলিত হয়েছে। কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে ভারতীয় কোষাগারে ভয়ঙ্কর চাপ পড়ল। এ বিষয়ে লিখেছেন আমির আলি। আজ শেষ কিস্তি।
আর বি আই এই মুদ্রাস্ফীতির কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় অর্থনীতিবিদদের একাংশ সমালোচনা করেছেন। পরপর তিন মাস মুদ্রাস্ফীতি ৬% উপরে থাকায়, অধিকাংশ মনে করেন আগামী কয়েক মাসে মুদ্রাস্ফীতির আরো বাড়বে। সম্প্রতি ভারতীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নে ধাক্কায় আরও কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন হল ভারতীয় অর্থনীতি। ভারতীয় মুদ্রা মার্কিন ডলারের প্রতি ৫৪ পয়সা কমে ৭৭.৪৪ রুপিতে পৌঁছে যায়। ফলে ভারতীয় আমদানি বিনিয়োগকারীরা কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়ে য়ায়। বিদেশি তহবিলে অবারিত বহিঃপ্রবাহ ছাড়াও আরো কিছু কারণে ভারতীয় মুদ্রার পতন হয়। স্বভাবতই ভারতের মুদ্রার অবমূল্যায়ন ক্ষতিতে লাভের মুখ দেখছে মার্কিন ডলার।
বিশ্ব মারাত্মক খাদ্য সংকটের মধ্যে পড়তে চলেছে। এই সংকট থেকে মুক্তির উপায় দেশের কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে যে উপকরণগুলো সেগুলোকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে হবে। ভারতবর্ষে কৃষি প্রধান দেশ, ৭৫% ভারতবাসী কৃষি কাজে নিযুক্ত থাকে। দেশের মোট জাতীয় আয়ের প্রায় ৩৩ শতাংশ আয় আসে কৃষি থেকে। ভারতবর্ষে প্রচলিত কৃষিকর্ম ও কৃষি ব্যবস্থা খাদ্য সমস্যা সমাধান করতে পারেনা, চাই সরকারের সহযোগিতা। কৃষকদের উৎসাহিত করতে ফসলের খরচের দেড় গুণ ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের প্রতিশ্রুতি চরম দাম্ভিকতা সাথে দিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিখ্যাত কৃষি অর্থনীতিবিদ স্বামীনাথন বলেন তার ঘোষিত প্রতিশ্রুতি ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের অনেক কম কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। কাঠামোগত বা গঠনমূলক উন্নয়ন ও নূন্যতম সহায়ক মূল্যে যথেষ্ট উদাসীনতার ফলে কৃষকদের ভ্রূকুটিতে চরম দুর্দশা নেমে আসে। সমাজবিজ্ঞানী, কৃষি বিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ থেকে এটা স্পষ্ট যে কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়ন ও কৃষি উৎপাদন খরচের দেড় গুণ ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রতিশ্রুতিটি বাস্তবায়িত হলে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করত। কৃষিক্ষেত্রে কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটালে ভারতকে ভোজ্যতেলর জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন উপর নির্ভর করতে হত না। মুদ্রাস্ফীতি আকাশচুম্বী কারণে ভারতের জনতাকে চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাতে হতো না।সর্বশেষে বলতে হয় ভারতবর্ষ বিশ্বের অর্থনীতির অন্যতম অগ্ৰগতি কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি দেশ ছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের ভুলের মাশুলের জন্য ভারতের অর্থনীতি চলতি বর্ষে সংকোচনের গভীর খাদের মধ্যে পড়তে চলেছে,। কে দিবে আর্থিক প্রবৃদ্ধির দাওয়াই, কে নিবে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দায়। রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস শুনিয়েছে আর ও শঙ্কার মেঘ ঘনিয়েছে ভারতের আমজনতার জীবনে। মূল্যবৃদ্ধির এক ধাক্কায় কঠিন বাস্তব সম্মুখীন হয়েছে ভারতের অর্থনীতি। মুদ্রাস্ফীতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস সত্বেও হাত গুটিয়ে বসে আছে মোদি সরকার, এ যেন “রোম পুড়ছে অথচ সম্রাট বেহালা বাজাচ্ছে”। (সমাপ্ত)
লেখক বর্ধমান ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct