জয়প্রকাশ কুইরি, পুরুলিয়া, আপনজন: ইভিএম ভোট যন্ত্রে একটির পর একটি ভোট পড়েছে সে ভোট শান্তির। ঝালদার মানুষ যখন দেখিয়ে দিচ্ছেন এ মাটি শান্তির মাটি তখন বুথের বাইরে নীরব চেহরায় বসে একজন হয়তো ভাবছেন এই ওয়ার্ডে কেন উপনির্বাচন হচ্ছে সেই কাহিনী। তিনি পূর্ণিমা কান্দু ঝালদা ২ নং ওয়ার্ডের প্রয়াত কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর স্ত্রী। তিনি নিজেও একজন কাউন্সিলর। স্বামীর মৃত্যুর পর কংগ্রেস প্রার্থী করেছে তার ভাইপো মিঠুন কান্দুকে। ভোট চলছে যখন যেমন গতিতে তেমনি হয়তো তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে স্বামীর শেষ যাত্রার ছবি গুলি। সাত সকালে চা বিস্কুট খেয়ে সেই যে তিনি বুথের বাইরে বসেছেন ভোট শেষ করা অবধি আর কোন কিছুই খান নি। আসলে খাওয়া সম্ভব ছিল না । তিনি বুঝতে পেরেছেন ঝালদার মানুষ তার পক্ষে রয়েছেন এবং তপন কান্দু খুনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঝালদার জনতা তার পাশেই রয়েছেন। এদিন অবশ্য ভোটের পুরোটাই ছিল সম্প্রীতি এবং রাজনৈতিক সৌভ্রতৃত্বের ভোট। বিভিন্ন সময় দেখা গিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা একই সঙ্গে ঘোরাঘুরি করছেন এমনকি দুপুরবেলা বুথের বাইরেও দেখা গেল একই টেবিলে বসে দুপুরের খাবার খেলেন কংগ্রেস প্রার্থী মিঠুন কান্দু ,তৃণমূল প্রার্থী জগন্নাথ রজক এবং বিজেপি প্রার্থী পরেশ চন্দ্র দাস। সারাদিন ধরেই যে ভোটের ছবি তাতে কখনই বুথ জাম হয়নি। মানুষ এসে ভোট দিয়ে চলে গিয়েছেন এবং সেই সব ভোট পড়ল প্রায় ৮১ %। এই ছবি বলে দেয় ফলাফল যাই হোক ঝালদা দেখিয়ে দিল এ মাটি শান্তির মাটি এখান থেকে কোনদিনই রক্ত ঝরা রাজনীতি প্রশ্রয় পাবেনা।
তবে এদিন অবশ্য কোন নেতাই তপন কান্দু খুনের ঘটনার উল্লেখ করেননি। সারাদিন ধরেই চকচক হয়েছে নিশ্চিন্ত ভোটের এবং প্রার্থীরাও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন ঝালদার বিভিন্ন সমস্যা এবং উন্নয়ন নিয়ে। ভোট নিরাপদে করতে প্রশাসন যদিও কোনো রকম প্রস্তুতির খামতি রাখেন নি কিন্তু মনে হচ্ছিল যেন এই পুলিশি নিরাপত্তা ব্যাবস্থার কোন প্রয়োজন ছিল না । এই ভোট এমন একটা পরিস্থিতির ভোট যার প্রথম দিকে ছিল চূড়ান্ত উত্তেজনা। তপন কান্দু খুন হওয়ার পরেই কংগ্রেস অভিযোগ করেছিল রাজনৈতিক কারণে খুন করা হয়েছে এবং তাদের অভিযোগের আঙুল ছিল তৃণমূলের দিকে। এমনকি কংগ্রেসের অভিযোগের ভিত্তিতেই আদালত এখানে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। ভোটের কয়েকদিন আগেই সিবিআই একটি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট আদালতে জমা দেয়। সেখানে বলা হয়েছে পারিবারিক সংঘাতের কারণেই এই খুনের ঘটনাটি ঘটেছে রাজনৈতিক যোগের তেমন কোন প্রমাণ এখনো অবধি সিবিআই পায়নি তবে তদন্ত এখনো শেষ হয় নি। মানুষ যে ভোটের ময়দানে অন্তত এই খুনের রাজনীতিকে আনতে চাননি তা সাধারণ মানুষও প্রমাণ করে দিয়েছেন লড়াইয়ের ময়দানে যেন ঘুরে ফিরে এসেছে ভোট দিতে হয় ভোট দিচ্ছি পছন্দমত প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছি কিন্তু এখানে কোন রাজনীতি চলবে না। সারাদিন ধরে পূর্ণিমা কান্দু বসে থাকলেন এবং তার সঙ্গে বিভিন্ন জন কথা বললেও তিনি আগবাড়িয়ে কারো সঙ্গে কথা বলেননি। এই ওয়ার্ডের ভোটার তিনি নন তবু যেন তিনি তার স্বামীর উপস্থিতি টুকু দেখতে পাচ্ছিলেন ভোটের ময়দানে। কারণ এই ভোট হলেই ২ নং ওয়ার্ডে যে তপন কান্দুর উপস্থিতিতে মানুষের সুবিধা অসুবিধা দেখার সেই সব ছবি ঝালদার মানুষ ভোলেননি। সেই স্মৃতি নিয়েই পূর্ণিমা কান্দু বাড়ি ফিরলেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct