দেশের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল দেশের সুরক্ষা আর দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হল দেশের যুব সমাজ। দেশের বেকার যুবদের কাজ চাই এবং সেই কাজের একটা নিরাপত্তা এবং স্থায়িত্বও চাই। ভারতবর্ষের মত প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এই ভাবনা কোনো অমূলক নয়। বরং অপরাধী তাঁরা, যাঁরা দেশের সংবিধানের মূল ভিত্তিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে একটার পর একটা আইন তৈরি করে দেশটাকে রসাতলে পাঠাতে চাইছেন। এ বিষয়ে লিখেছেন সনাতন পাল। আজ শেষ কিস্তি।
আজ যে সেনা বাহিনী নিয়ে দেশের যুবদের এতো বিক্ষোভ এক সময় পরাধীন দেশে সেই সেনা বাহিনীতেই নজরুল ইসলাম যুক্ত হয়েছিলেন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে নজরুল সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। প্রথমে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে এবং পরবর্তীতে প্রশিক্ষণের জন্য সীমান্ত প্রদেশের নওশেরায় যান। প্রশিক্ষণ শেষে করাচি সেনানিবাসে সৈনিক জীবন কাটাতে শুরু করেন। তিনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের শেষভাগ থেকে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় আড়াই বছর। এই সময়ের মধ্যে তিনি ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিক কর্পোরাল থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পর্যন্ত হয়েছিলেন। উক্ত রেজিমেন্টের পাঞ্জাবী মৌলবির কাছে তিনি ফার্সি ভাষা শেখেন।
এছাড়া সহ সৈনিকদের সাথে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে সঙ্গীতের চর্চা অব্যাহত রাখেন, আর গদ্য-পদ্যের চর্চাও চলতে থাকে একই সাথে। করাচি সেনা নিবাসে বসে নজরুল যে রচনাগুলো সম্পন্ন করেন তার মধ্যে রয়েছে, বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী (প্রথম গদ্য রচনা), মুক্তি (প্রথম প্রকাশিত কবিতা); গল্প: হেনা, ব্যথার দান, মেহের নেগার, ঘুমের ঘোরে, কবিতা সমাধি ইত্যাদি। এই করাচি সেনা নিবাসে থাকা সত্ত্বেও তিনি কলকাতার বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে প্রবাসী, ভারতবর্ষ, ভারতী, মানসী, মর্ম্মবাণী, সবুজপত্র, সওগাত এবং বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা। এই সময় তার কাছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং ফার্সি কবি হাফিজের কিছু বই ছিল। এ সূত্রে বলা যায় নজরুলের সাহিত্য চর্চার হাতেখড়ি এই করাচি সেনা নিবাসেই। সৈনিক থাকা অবস্থায় তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। এ সময় নজরুলের বাহিনীর ইরাক যাবার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধ থেমে যাওয়ায় তাই আর যান নি। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধ শেষ হলে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙে দেয়া হয়। এর পর তিনি সৈনিক জীবন ত্যাগ করে কলকাতায় ফিরে আসেন। একটা সময় সেনাবাহিনী নজরুলে কাছে শিক্ষার জায়গা ছিল। তাও সেটা পরাধীন ভারতবর্ষে ।আজকের দিনে সেই সেনা বাহিনীতে নিয়োগ করা নিয়ে দেশে আগুন জ্বলছে। অবশ্য ১৮৫৭ সিপাহী সালে সিপাহি বিদ্রোহ এই মাটিতেই সংগঠিত হয়েছিল। তবে দেশের মানুষ যখন চাইছেন না তখন সরকারই বা জবরদস্তি করছে কেন? অগ্নি-বীরদের কথা মেনে নিয়ে অগ্নিপথ বন্ধ করলেই বা কি ক্ষতি হবে? (সমাপ্ত)
শিক্ষক এবং বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct