নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা, আপনজন: উত্তরপ্রদেশে ওয়েলফেয়ার পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা তথা এনআরসি-সিএএ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ জে.এন.ইউ. বিশ্ববিদ্যালয়ের যুবনেত্রী আফরিন ফতেমার পিতা জাভেদ মোহাম্মদের মুক্তির দাবিতে ও বেআইনী বুলডোজার সন্ত্রাস সৃষ্টির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে আবারও কলকাতার রাজপথে অবস্থান বিক্ষোভে শামিল হল ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া । প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, পার্টির ছাত্র-যুব শাখা ফ্র্যাটার্নিটি মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া-র কেন্দ্রীয় সম্পাদিকা তথা সিএএ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ জে.এন.ইউ. বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আফরীন ফতেমা-র বাড়ি বুলডোজার চালিয়ে অন্যায়ভাবে ভেঙ্গে ফেলার প্রতিবাদে ও তার পিতা পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের জাভেদ মোহাম্মদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবী সহ ছয় দফা দাবীতে কয়েকদিন পূর্বেই ধুন্ধুমার রাজভবন অভিযানে সামিল হন সংগঠনের হাজারও কর্মী-সমর্থক ও নেতৃত্ববৃন্দ । সেদিনের সেই রাজভবন অভিযানে পার্টির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব সহ প্রায় একশ কর্মীকে সেদিন কোলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করে। সারা দেশজুড়ে পার্টির বিভিন্ন বিক্ষোভ কর্মসূচীর পরও ওয়েলফেয়ার পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাকে আজও অবধি যোগীর পুলিশ জেলবন্দী করে রেখেছে। সম্প্রতি সুপ্রীম কোর্টের রায়ে বিগত কয়েক বছর যাবৎ ও বিশেষভাবে বিগত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ চলা উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের বুলডোজার সন্ত্রাস বড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়েছে । এদিনের অবস্থান বিক্ষোভ থেকে পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সারওয়ার হাসান বলেন, “আমরা দেখছি উত্তরপ্রদেশে, মধ্যপ্রদেশে, গুজরাটে, আসামে, ত্রিপুরায়, দিল্লীতে সর্বত্র রাজ্য সরকার ও প্রশাসন একই রকম কায়দায় আইনের পরোয়া না করেই বুলডোজার চালিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠার কাজে মত্ত হয়েছে । সম্প্রতি যখন ভারতের মতো বহুত্ববাদী সংস্কৃতির গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একটি বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায় সম্পর্কে হিংসাত্মক মন্তব্য করে ও সেই ধর্মের পয়গম্বরের বিষয়ে বিষাক্ত মন্তব্য করে দুজন পার্টি প্রবক্তা নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তখন দেশের একটা বড় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কোর্ট ও নির্বাচিত সরকারের নীরবতায় হতাশ হয়ে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে মুখর হলে তাদের উপর নেমে আসছে পুলিশী জুলুম আর বুলডোজার সন্ত্রাসের ভীতি প্রদর্শন ।
সেই প্রক্রিয়াতেই বিগত ১১ই জুন,২০২২ শনিবার রাতে ওয়েলফেয়ার পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের জাভেদ মোহাম্মদ, তার প্রতিবাদী কন্যা ফ্র্যাটার্নিটি মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া-র কেন্দ্রীয় সম্পাদিকা জে.এন.ইউ. বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আফরীন ফতেমা সহ তার মা-বোন অন্যায়ভাবে বিনা নোটিশে যোগী পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন এবং একটি জরুরী বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পরের দিন সকালেই তাঁদের বসতবাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় । আসলে, প্রতিহিংসাপরায়ন মোদী-যোগী সরকার জনবিরোধী-সংবিধানবিরোধী সিএএ আইনের বিরোধীতাকারীদের বেছে বেছে নানান ছুতোই আক্রমন করছে ।” এ প্রসঙ্গে পার্টির রাজ্য সভাপতি শ্রী মনসা সেন বলেন,”বুলডোজার সন্ত্রাস একটি সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একেবারেই কাম্য নয় । আসলে, সকল ঘটনা প্রবাহ দেখে এটাই মনে হচ্ছে যে, নির্বাচিত সরকার রাজ্যে ও রাষ্ট্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ । তাই, সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে ও অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে যারাই সোচ্চার হবেন সরকার তাঁদের টার্গেট করে বিভিন্ন মিথ্যা অজুহাতে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করবে বা বুলডোজার চালিয়ে দমন-পীড়নের পথে হাঁটবে । এধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না । আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান । তাই, কারও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে বা ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়িয়ে কেউ নিরপরাধ হয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে না । আমরা জাভেদ মোহাম্মদ সাহেব সহ সকল নিরপরাধ প্রতিবাদকারীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবী রাখছি এবং পুলিশি গুলিচালনা ও অত্যাচারে ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবী করছি ।” এদিনের অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচীতে সামিল হন পার্টির রাজ্য সভাপতি শ্রী মনসা সেন, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সারওয়ার হাসান,রাজ্য সহ-সভাপতি মির্জা নুরুল হাসান, রাজ্য সম্পাদকবৃন্দ শাহাজাদী পারভীন,আবু তাহের আনসারী,সেখ মোজাফফর,রাজ্য মহিলা ইনচার্জ রোহিনা খাতুন, ফ্র্যাটারনিটি মুভমেন্ট এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মোল্লা,রাজ্য সম্পাদক নঈম সেখ, ফিটু-র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডাঃমানোয়ারা বেগম,রাজ্য সভাপতি নঈমুদ্দিন সেখ,রাজ্য সম্পাদক মহিনুর জামান সহ অন্যান্য নেতৃত্ব । পার্টির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সারওয়ার হাসান বলেন, গণতান্ত্রিক কণ্ঠের টুঁটি চেপে ধরে দেশের সংবিধান ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার উপর বুলডোজার চালিয়ে দিতে চাইছে কেন্দ্রের মোদি সরকার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct