জনগণ রাশিয়ার অর্থনীতির পতনের দিকে মনোনিবেশ করেছে, যা সম্ভবত এ বছর প্রায় ১১ শতাংশ সংকুচিত হবে। কিন্তু ২০২২ সালে ইউক্রেনের অর্থনীতি বিস্ময়করভাবে ৪৫ শতাংশ সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদি ইউক্রেন কৃষ্ণসাগরে বন্দরগুলো থেকে শস্য রপ্তানি করতে না পারে, তবে দেশটি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে। রাশিয়া বা ইউক্রেন উভয়েরই চূড়ান্তভাবে জয়ী হওয়ার ক্ষমতা নেই এবং সহজে আত্মসমর্পণেরও সম্ভাবনা নেই। এ বিষয়ে লিখেছেন ফরিদ জাকারিয়া। আজ শেষ কিস্তি।
রাশিয়া দনবাসের বেশির ভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। যেহেতু পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেনি, তাই এই যুদ্ধের সময় রাশিয়ার সরকার প্রকৃতপক্ষে লাভবান হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটির বেসরকারি সংস্থা ব্লুমবার্গের পরিসংখ্যান বলছে, এ বছর রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের আয় হবে প্রায় ২৮৫ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছর ছিল ২৩৬ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া এই যুদ্ধ পরিস্হিতি এখন ইউক্রেনের রপ্তানি করার ক্ষমতাকে ব্যর্থ করতে পারে। তবে যে কেউ আশা করতে পারেন, দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধ চলার কারণে নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়াকে আরো শক্তভাবে আঘাত করবে। একই সময়ে ইউক্রেনের রয়েছে ব্যাপক পশ্চিমা সহায়তা, উচ্চ মনোবল এবং শেষ পর্যন্ত লড়াই করার ইচ্ছা।
যদিও আমরা এখনও যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে নেই, তবু ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধের শেষ খেলা সম্পর্কে চিন্তা করা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এইভাবে ইউক্রেন একটি সুসংগত অবস্থান গড়ে তুলতে পারে, দেশটি তার কৌশলগুলো রপ্ত করতে পারে এবং অর্জন করতে পারে আন্তর্জাতিক সমর্থন। কিছুদিন আগে আমেরিকার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি এ. কিসিঞ্জার পরামর্শ দেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার হামলার আগে ইউক্রেনের যে সীমান্তরেখা ছিল, কিয়েভের উচিত এর বাইরে যেতে না চাওয়া। এই পরামর্শের জন্য তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। প্রকৃতপক্ষে ইউক্রেন এবার নতুন করে যেসব অঞ্চল হারিয়েছে, তা পুনরুদ্ধার করতে পারবে কি না, এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। এটা অত্যন্ত অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে। যদিও এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত। এ বছর রাশিয়া যেসব অঞ্চল জয়লাভ করেছে, তা পুনর্দখলের লক্ষ্য নির্ধারণ করা বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে হচ্ছে। তারপর আলোচনার মাধ্যমে ২০১৪ সালের আগে হারানো অঞ্চলগুলো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে পারে কিয়েভ। রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি বেশ কয়েকবার একই রকম কিছু প্রস্তাব করেছেন। প্রাক-ফেব্রুয়ারিতে ফিরে যাওয়ার লক্ষ্য সর্বাধিক আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জন করবে বলে বিশ্বাস। যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রধান খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে। এই মুহূর্তে রাশিয়া সরাসরি ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। কিন্তু যখন সংঘাত একটি অচলাবস্থার দিকে যাবে, তখন আসল লড়াই হবে রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে। নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার বিনিময়ে রাশিয়া কী দেবে? আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে রাশিয়ার বিচ্ছিন্নতা দূর করতে পশ্চিমারা কী দাবি করবে?
ওয়াশিংটন এ বিষয়ে এখনো বাজি ধরেনি। ওয়াশিংটন ব্যাখ্যা করে বলেছে, তারা কী চায় তা নির্ভর করে ইউক্রেনিয়ানদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওপর। এ ব্যাপারে ওয়াশিংটন তাদের ডিঙিয়ে কোনো আলোচনা করবে না। এটিই জনসমর্থনের সঠিক বার্তা। তবে ইউক্রেন ও এর পশ্চিমা অংশীদারদের একটি সাধারণ যুদ্ধের লক্ষ্য তৈরি করতে হবে, তাদের সমন্বয়মূলক কৌশল তৈরি করতে হবে, আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জন করতে হবে এবং সফল হওয়ার জন্য তাদের সমস্ত সুবিধা ব্যবহার করতে হবে। লক্ষ্যটি হতে হবে এরূপ :ইউক্রেন থাকবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, ২৪ ফেব্রুয়ারির আগে তার যতটা ভূখণ্ড ছিল, তা সম্পূর্ণরূপে দেশটির নিয়ন্ত্রণে দিতে হবে। সেই সঙ্গে পশ্চিমের কিছু নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতিও থাকবে। আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ নিষ্পত্তির কোনো বিকল্প নেই। এটা না হলে ইউক্রেনে অবিরাম যুদ্ধ চলতে থাকবে, যা এই দেশ ও তার জনগণের জন্য হবে আরো ধ্বংসাত্মক। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের ৫০ লাখেরও বেশি জনগণ শরণার্থী হিসেবে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর ফলে জ্বালানি সরবরাহ, খাদ্য, অর্থনীতিসহ সর্বত্র মারাত্মক বিঘ্ন ঘটবে। বিশ্ব জুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা তীব্রতর হবে। এই অন্ধকার ভবিষ্যৎকে এড়িয়ে যেতে হলে যুদ্ধের শেষ খেলার অনুসন্ধান করা অবশ্যই মূল্যবান। (সমাপ্ত...)
ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct