জনগণ রাশিয়ার অর্থনীতির পতনের দিকে মনোনিবেশ করেছে, যা সম্ভবত এ বছর প্রায় ১১ শতাংশ সংকুচিত হবে। কিন্তু ২০২২ সালে ইউক্রেনের অর্থনীতি বিস্ময়করভাবে ৪৫ শতাংশ সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদি ইউক্রেন কৃষ্ণসাগরে বন্দরগুলো থেকে শস্য রপ্তানি করতে না পারে, তবে দেশটি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে। রাশিয়া বা ইউক্রেন উভয়েরই চূড়ান্তভাবে জয়ী হওয়ার ক্ষমতা নেই এবং সহজে আত্মসমর্পণেরও সম্ভাবনা নেই। এ বিষয়ে লিখেছেন ফরিদ জাকারিয়া। আজ প্রথম কিস্তি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ব্রিটিশ জনগণকে দীর্ঘ সংঘাতের জন্য প্রস্তুত করার চেষ্টা করেছিলেন। মিসরে মিত্রবাহিনীর বিজয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটাই শেষ নয়।’ ‘এটা এমনকি শেষের শুরু নয়, সম্ভবত শুরুর শেষ’। আমরা যখন এই পরিভাষাগুলোর কথা চিন্তা করি, তখন ইউক্রেন যুদ্ধের এই পর্যায়ে এসে আমরা যুত্সই কোন শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করতে পারি? যুদ্ধক্ষেত্রে আমরা আসলে কী প্রত্যক্ষ করছি?সম্ভবত আমরা যুদ্ধের মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছি। বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন গিডিয়ন রোজ। তিনি কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনের একজন পণ্ডিত। তিনি ‘হাউ ওয়ার্স অ্যান্ড’ তথা ‘যুদ্ধ কীভাবে শেষ হয়’ নামক একটি চমৎকার বইয়ের লেখক। তিনি উল্লেখ করেছেন, প্রতিটি যুদ্ধ একটি দাবা খেলার মতোই শুরু হয়। শুরু হয় নাটকীয় আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা দিয়ে। যদি এই যুগপৎ গোলাবর্ষণে নিষ্পত্তিমূলক বিজয় না আসে, তবে যুদ্ধ মধ্যম পর্যায়ে উপনীত হয়, যেখানে উভয় পক্ষই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সুবিধা লাভের জন্য সজোরে আঘাত হানার চেষ্টা করে। তিনি আমাকে বলেছেন, ‘মাঝখানের পর্বে কোনো পক্ষই এখন আলোচনায় আগ্রহী নয়। কারণ প্রতিটি পক্ষই এ সময় সরাসরি জয়লাভের চেষ্টা করছে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের অবস্থান উন্নত করতে চাইছে। এইভাবে উভয় পক্ষের একটি শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে, যেখান থেকে আলোচনা করতে হবে।’ এটা এমন একটা সময়, যখন আবেগ বেশি কাজ করে। এ সময় আপস করা কঠিন।
অবশেষে কোনো এক সময় যোদ্ধারা দুটি পথের একটির মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রবেশ করে। এ দুটি পথ হলো—হয় যুদ্ধের জোয়ার অপরিবর্তনীয়ভাবে এক পক্ষে যাবে (যেমনটি ঘটেছিল ১৯১৮ ও ১৯৪৪ সালে) অথবা একটি ক্লান্িতকর অচলাবস্থা দেখা দেবে (যেমনটি কোরিয়া যুদ্ধের ক্ষেত্রে ঘটেছে ১৯৫১ সালের মাঝামাঝি সময়ে)। রোজ উল্লেখ করেছেন, ‘সেই মুহূর্তে যুদ্ধে জড়িত পক্ষগুলো শেষ খেলায় প্রবেশ করে এবং তারা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি নিয়ে কৌশল অবলম্বন বা প্রতারণা শুরু করে।’ আমরা যে এখন মধ্যম পর্যায়ে আছি, এ সময় পশ্চিমাদের অবশ্যই ইউক্রেনকে তার অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য সাহায্য করতে হবে। কিয়েভের আরো অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দরকার। যদিও ইউক্রেনীয়রা কতটা এর সদ্ব্যবহার করতে পারে তার বাস্তব সীমারেখা রয়েছে। ওয়াশিংটন, ইউরোপসহ অন্যান্য মিত্র দেশের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে। তাদের ওডেসার চারপাশে রাশিয়ার অবরোধ ভাঙতে ইউক্রেনকে সাহায্য করতে হবে। জনগণ রাশিয়ার অর্থনীতির পতনের দিকে মনোনিবেশ করেছে, যা সম্ভবত এ বছর প্রায় ১১ শতাংশ সংকুচিত হবে। কিন্তু ২০২২ সালে ইউক্রেনের অর্থনীতি বিস্ময়করভাবে ৪৫ শতাংশ সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদি ইউক্রেন কৃষ্ণসাগরে অবস্থিত বন্দরগুলো থেকে নিজেদের শস্য রপ্তানি করতে না পারে, তবে আগামী বছরের মধ্যে দেশটি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে। খুব সম্ভবত যুদ্ধের এই মাঝামাঝি পর্যায়টি কিছুদিন স্থায়ী হবে। রাশিয়া বা ইউক্রেন উভয়েরই চূড়ান্তভাবে জয়ী হওয়ার ক্ষমতা নেই এবং সহজে আত্মসমর্পণেরও সম্ভাবনা নেই। স্বল্প মেয়াদে এই জয় রাশিয়ার পক্ষে।
ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct