একটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশে কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে কোনো অপমান জনক কথা বা উসকানিমূলক বক্তব্য কেউ রাখতেই পারেন না, যা দেশের ঐক্যকে বিনষ্ট করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে। যদি কেউ এমন করেন তাহলে তাকে সবার প্রথমে অ্যান্টি ন্যাশন্যাল আইনে গ্রেফতার করা উচিত। কিন্তু দলীয় সংকীর্ণ রাজনীতির কারণে সেটা করা হয় না। প্ররোচনা দিয়ে দেশে হিন্দু মুসলিম বিরোধ তৈরি করে জনগণের ঐক্যকে বিনষ্ট করার চেষ্টা জনগণকে রুখতে হবে সম্প্রীতি দিয়ে। লিখেছেন সনাতন পাল। আজ শেষ কিস্তি।
বর্তমানে ডলারের থেকে টাকার মূল্য কমেছে। ফলে যে কোনো জিনিস আমদানি করতে বেশি টাকা লাগছে এবং সেই কারণে আমদানি জাত জিনিস থেকে উৎপাদিত সমস্ত জিনিসের মূল্য আজ বেশি। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধিতেও মানুষ দিশে হারা। ক্ষুধা নিবারণের জন্য খাবার চাই। খাবারের জন্য টাকা চাই, টাকার জন্য কাজ চাই। সেই কাজ থেকে মানুষের দূরত্ব অনেক বেড়েছে ফলে খাবার আর ক্ষুধার মধ্যে ব্যবধান বেড়েছে। এই সমস্ত দায় সরকারের। কোনো সরকারই এই দায় এড়াতে পারবে না। বেকারত্ব কোথায় পৌঁছে গেছে যে, কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যান দিতে না পেরে অনুদানকে কর্মসংস্থানের সাথে তুলনা করা হচ্ছে!
চারিদিকে শুধু হা হা কার, গণমাধ্যমে চোখ রাখলেই মনে হচ্ছে সারা রাজ্যটা দুর্নীতির চাদরে মুড়ে গেছে। চারিদিকে কাটমানি, খুন, ধর্ষণে জর্জরিত। মনে হচ্ছে হায়নার দল সমাজটাকে উলঙ্গ করে ক্ষতবিক্ষত করছে। আর একদল মানুষ সেটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। দেশ মুখ থুবরে পড়েছে, সংকট মোচনের কোনো দিশা নেই। আছে শুধুই ভাষণ আর ভাষণ। এই সময়ে নিজেদের মধ্যে না লড়ে বেকারত্বের বিরুদ্ধে কাজের দাবিতে লড়তে হবে, ক্ষুধার বিরুদ্ধে খাবারের দাবীতে লড়তে হবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ন্যায়ের জন্য লড়তে হবে, মা বোনদের সম্মান রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়তে হবে। সুষ্ঠু পরিবেশ ও রোগমুক্ত শরীর গঠনের জন্য লড়তে হবে, শিল্পের জন্য লড়তে হবে, শিক্ষাকে সরকারি রাখার দাবীতে লড়তে হবে, শিশুর পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য লড়তে হবে। আর এই সমস্ত লড়াই করতে হলে সবার প্রথমে দরকার দেশের জনগণের ঐক্যবদ্ধ হওয়া। এক মাত্র ঐক্যবদ্ধ লড়াই পারে সমস্যার সুষ্ঠ সমাধানের পথ দেখাতে। শাসকের ভয় হলো এই সমস্ত লড়াইয়ের তীর শাসকের বিরুদ্ধেই যাবে, যার প্রভাব পড়বে নির্বাচনে। আর এটা ঘটলে দিদি- ‘মোদি তুম লোগ সভী গিয়ো’। তাই তো ‘মনকি বাত’ ‘ চায়ে পে চর্চা’, সব গিয়ে এখন ‘হাওড়া কা চর্চা’ বাদ মে ‘মুর্শিদাবাদ কা চর্চা’ শুরু হো গিয়ে। আন্দোলনকারীদের কাছে এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে অনুরোধ অনুগ্রহ করে আপনারা শাসকের এই নোংরা জঘন্য পরিকল্পনা কার্যকরী হতে দেবেন না। নিজেদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে, দেশের কথা ভেবে ওদের সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ণ রাখুন। সবাই হুমায়ূন আজাদের সেই কথা মনে করুন- “ এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো”।
(সমাপ্ত...)
শিক্ষক এবং বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct