আপনজন ডেস্ক: পয়গম্বর হজরত মুহাম্মদ সা.-এর বিরুদ্ধে বিজেপির বহিষ্কৃত নেত্রী নূপুর শর্মার অবমননাকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশে চলছে ব্যাপক বিক্ষোভ। সেই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হওয়ায় উত্তরপ্রদেশ সরকার বেছে বেছে সংখ্যালঘু বিক্ষোভকারীদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে, উত্তরপ্রদেশ সরকারের আইনবিরুদ্ধ ও অমানবিক কাজের বিরুদ্দে এবার সরব হলেন সুপ্রিম কো্ট ও হাইকোর্টের বিভিন্ন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও প্রবীণ আইনজীবীরা। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং সিনিয়র আইনজীবীরা মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সিভি রামানার কাছে এক চিঠিতে আর্জি জানিয়েছেন, মসলিমদের ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট যেন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলা করে। উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতির জরুরি হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। যে বারোজন প্রাক্তন বিচারপতি ও প্রবীণ আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি লিখেছেন তারা হলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি বি সুদর্শন রেড্ডি, ভি গোপাল গৌড়া এবং এ কে গাঙ্গুলির পাশাপাশি প্রাক্তন বিচারপতি ও আইনজীবী এ পি শাহ, কে চন্দ্র, মহম্মদ আনোয়ার, ইন্দিরা জয় সিং, শান্তিভূষণ, চন্দ্র উদয় সিং, শ্রী রাম পাঞ্চু, প্রশান্ত ভূষণ এবং আনন্দ গ্রোভার প্রমুখ।
মুহাম্মদ সা.-এর বিরুদ্ধে বিজেপির বহিষ্কৃত নেত্রী নূপুর শর্মার অবমননাকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে অবৈধভাবে আটক, বিক্ষোভকারী এবং পুলিশ হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের উপর সহিংসতা চালাচ্ছে। এমনকী বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়ার ঘটনা ঘটনায় শীর্ষ কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণের আর্জি জানানো হয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীদের কথা শোনার এবং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে জড়িত হওয়ার সুযোগ দেওয়ার পরিবর্তে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন কিছু ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সহিংস পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সেখানকার সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দোষীদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে, যা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের কোনো অপরাধ না করে বা আইন হাতে তুলে না নেয়। চিঠিতে আরও দাবি করা হয়েছে যে, মুখ্যমন্ত্রী আরও নির্দেশ দিয়েছেন যে জাতীয় নিরাপত্তা আইন, ১৯৮০ এবং উত্তরপ্রদেশ গ্যাংস্টারস অ্যান্ড অ্যান্টি-সোশ্যাল অ্যাক্টিভিটিজ (প্রিভেনশন) অ্যাক্ট, ১৯৮৬ বেআইনি বিক্ষোভের জন্য দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা উচিত। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশগুলি বিক্ষোভকারীদের উপর নিষ্ঠুর ও বেআইনিভাবে নির্যাতন চালানোর জন্য উৎসাহিত করেছে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে। তার দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সেই নির্দেশ অনুযায়ী, উত্তর প্রদেশ পুলিশ ৩০০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে এবং প্রতিবাদী নাগরিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন।
পুলিশ হেফাজতে থাকা যুবকদের লাঠি দিয়ে পেটানো, বিনা নোটিশে বা কোনো কারণ ছাড়াই বিক্ষোভকারীদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিবাদকারীদের পুলিশ কর্তৃক মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা জাতির বিবেককে নাড়িয়ে দিচ্ছে। একটি ক্ষমতাসীন প্রশাসনের দ্বারা এই ধরনের নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন আইনের শাসনের একটি অগ্রহণযোগ্য নাশকতা এবং নাগরিকদের অধিকারের লঙ্ঘন, এবং সংবিধান এবং রাষ্ট্র কর্তৃক নিশ্চিত মৌলিক অধিকারকে উপহাস করে তোলে বলে চিঠিতে মন্তব্য করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক কিছু উদাহরণ হল অভিবাসী শ্রমিক এবং পেগাসাস ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। চিঠিতে একই চেতনায় এবং সংবিধানের তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে সুপ্রিম কোর্টকে উত্তর প্রদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে, যেখানে বিশেষ করে পুলিশ ও রাজ্য প্রশাসন জড়িত। চিঠিতে সবশেষে বলা হয়েছে, “আমরা আশা করি এবং বিশ্বাস করি যে সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি উত্থাপিত করবে এই সংকটময় মুহূর্তে নাগরিক ও সংবিধানকে হতাশ করতে দেবে না।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct