নাজিম আক্তার, হরিশ্চন্দ্রপুর, আপনজন: প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর জেদ থাকলে যে কোনও বাধাই বাধা নয় তা দেখিয়ে দিলেন টিনা থোকদার। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের প্রত্যন্ত এলাকা ফতেপুরের দিনমজুর বাবার মেয়ে টিনা এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে নবম হয়েছেন। ভালুকা আরএমএম বিদ্যাপীঠ থেকে কলা বিভাগে পরীক্ষা দিয়েছিলেন টিনা। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯০। এদিন মেয়ের ফল জানার পর সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা বলার সময় কেঁদে ফেলেন বাবা নাড়ুগোপাল থোকদার ও মা রাসেশ্বরী থোকদার। মেয়ে ভালো ফল করলেও বাইরে কীভাবে মেয়েকে পড়াবেন তা নিয়ে দুশ্চন্তায় দিশেহারা তিনি। মেধাবী টিনার যাতে পড়াশুনায় আর্থিক সমস্যা বাধা না হয়ে দাঁড়ায় সেজন্য সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
ফতেপুরে্ বাড়ি নাড়ুগোপাল থোকদারের। দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় টিনা। ছোট ছেলে ঋজু ষষ্ঠ্য শ্রেণিতে পড়ে। পানের বরোজে কাজ করেন তিনি। এছাড়া রোজগারের আশায় অন্য কাজও করতে হয় তাকে। তা থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালানোই দায়। অনেক কষ্টে ইটের গাঁথনি দিয়ে দুটো ঘর করলেও তাতে প্লাস্টার করতে পারেননি। সব ঘরের দারজা-জানালাও নেই। ফতেপুর এলাকায় কোনও স্কুল নেই। তাই ভালুকায় সাড়ে তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করতে হত টিনাকে। সবুজ সাথীর সাইকেল থাকলেও কাজের জন্য তা বাবাই বেশি ব্যবহার করেন। অভাবের সংসারে সব বিষয়ে টিউশনও পড়তে পারেননি। তারপরেও রাজ্যে নবম হয়ে স্কুল তো বটেই এলাকার মানুষকে চমকে দিয়েছেন টিনা। ভবিষ্যতে ইংরেজি নিয়ে পড়াশুনা করতে চান টিনা। অর্থাভাবের মধ্যেও স্বপ্ন দেখেন আকাশে ওড়ার। কেন না এয়ারহোস্টেস হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct