এম মেহেদি সানি, কলকাতা, আপনজন: আদর্শ ছাত্রছাত্রী গড়ার কারিগর এম নুরুল ইসলামের নিরলস প্রচেষ্টায় আশির দশকে প্রতিষ্ঠিত আল আমীন মিশন রাজ্যের শিক্ষা মানচিত্রে এক উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হল না। মাধ্যমিকের মতো উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলেও জয়জয়কার রাজ্যের শীর্ষ এই সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল আমীন মিশনের। উচ্চ মাধ্যমিক সংসদ যে প্রথম দশ জনের মেধা তালিকা প্রকাশ করেছে তার মধ্যে আল আমীন মিশনের ৬জন শিক্ষার্থী স্থান পেয়েছে। এই সাফল্য নিয়ে আল আমীন মিশনের সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম ‘আপনজন’কে বলেন, রাজ্যের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মেধাবী ও গরিব ছাত্রছাত্রী। মূলত সেই সব মেধাবীদের একসূত্রে বেঁধে বিজ্ঞানসম্মত ও আধুনিক পদ্ধতিতে শিক্ষায় দেওয়ায় ব্রত আল আমীন মিশন। সেই লক্ষ্যকে সফল করে তুলেছে উচ্চ মাধ্যমিকের কৃতীরা। তবে, ছাত্রছাত্রীদের একনিষ্ঠ পড়াশুনাও কৃতিত্বের ভাগিদার বলে তিনি জানান। তাদের উচ্চশিক্ষায় সবসময় আল আমীন মিশন পাশে থাকবে বলে তিনি অঙ্গীকার করেন। প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মূলত গরিব মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের এক মিলন ক্ষেত্রে পরিণত করার যে প্রয়াস আল আমীন মিশন চালিয়ে আসছে নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে, তার সাফল্য ঈর্ষা করার মতো।
সাফল্যের ব্যাপারে আল আমীন মিশনের কর্ণধার ‘আপনজন’কে জানিয়েছেন আল আমীন মিশনে পড়াশনা করে এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছে মুহাম্মদ বুলবুল ইসলাম। উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া থানা এলাকার মথুরাপুর গ্রামের বাসিন্দা। ৪৯৩ নম্বর পাওয়া বুলবুল অঙ্কে ১০০-র মধ্যে ১০০ নম্বর পেয়েছে। দশম স্থান অধিকার করা সোহলে মল্লিক বাঁকুড়ার ইন্দাসের চাষি পরিবারের সন্তান। সে জানায়, তার পড়াশুনা করার মতো সামর্থ্য ছিল না। আল আমীন মিশনের সেক্রেটারি ‘স্যর’ নুরুল ইসলাম তাকে সপ্তম শ্রেণি থেকে আর্থিক ছাড় দিয়ে সেখানে পড়ার সুযোগ করে দেওয়ায় তবেই এই জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। মেধা তালিকায় অষ্টম স্থান পাওয়া সুমাইয়া খাতুন নদিয়ার প্রত্যন্ত এলাকা চাপড়া গ্রামের বাসিন্দা। সে রসায়নে ১০০ নম্বর পেয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯১। মেধা তালিকার নবম স্থানে রয়েছেন আল আমীন মিশনের আর এক পড়ুয়া সৈয়দ মুস্তাক আহমেদ। পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের বাসিন্দা মুস্তাক পেয়েছে ৪৯০ নম্বর। বাংলা ও অঙ্কে সে একশো করে নম্বর পেয়েছে। তবে, আল আমীন মিশন থেকে তিন তিনজন পড়ুয়া মেধা তালিকার দশম স্থানে রয়েছে। এদের প্রত্যেকেই ৪৮৯ নম্বর পেয়েছে। এক কৃতী সোহেল মল্লিকের বাড়ি বাঁকুড়ার ইন্দাসের কুমরুল গ্রামে। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে সে উচ্চ শিক্ষায় ভাল ফল করার আশায় ভর্তি হয়েছিল আল আমীন মিশনে। অবশেষে তার স্বপ্ন সফল হয়েছে। সোহেল অঙ্কে ১০০ নম্বর পেয়েছে। এছাড়া আরও দুজন আল আমীন মিশনের পড়ুয়া দশম স্থান অধিকার করেছে। তারা হল সাবনাজ সুলতানা ও সৃজা মণ্ডল। সাবনাজের বাড়ি মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের প্রসাদপুর গ্রামে হলেও সে দক্ষিণ দিনাজপুরে আল আমীন মিশনের ক্যাম্পাস থেকে পড়াশোনা করেছে। সে অবশ্য বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেনি, কলা বিভাগে পড়ে সে দশম স্থান অধিকার করেছে। ভূগোলে সে পেয়েছে ১০০। নদিয়ার হরিণঘাটার হাজরাপোতা গ্রামের বাসিন্দা সৃজা মণ্ডল আল আমীন মিশনকেই বেছে নেয় তার উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশুনা করার জন্য। আর তাতেই সে নজির সৃষ্টি করেছে। ৪৮৯ নম্বর পেয়েছে মেধা তালিকায় দশম স্থান অধিকার করেছে। সৃজাও অঙ্কে ১০০ পেয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct