আপনজন ডেস্ক: কিছু বিজেপি নেতা পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্যের দাবি তুলে চলেছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ারের সভায় বললেন, তিনি তার রক্ত ঝরাতে প্রস্তুত কিন্তু কোনওভাবেই বাংলাকে বিভক্ত করতে দেবেন না। আলিপুরদুয়ারে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ভোটের আগে বিজেপি ‘ভুয়ো’ প্রতিশ্রুতি দেয়, আর নির্বাচনের পরে ‘উধাও’ হয়ে যায়। ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে রাজ্যে “বিচ্ছিন্নতাবাদকে প্রশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা” করার জন্য গেরুয়া শিবিরের সমালোচনা করে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, উত্তরবঙ্গের সমস্ত সম্প্রদায় কয়েক দশক ধরে সম্প্রীতির সাথে বসবাস করছে। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, বিজেপি পৃথক রাজ্যের দাবিকে উস্কে দিচ্ছে। কখনও গোর্খাল্যান্ড চাইছেন, আবার কখনও উত্তরবঙ্গের পৃথক রাজ্য চাইছেন। আমি আমার রক্ত দিতে প্রস্তুত, কিন্তু কখনও রাজ্য ভাগ হতে দেব না। এখানে একটি দলীয় সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে তৃণমূলের পক্ষ থেকে টুইট করে বলা হয়, ‘বাংলা একতাবদ্ধ। আমি আমার রক্ত দেব, কিন্তু আমি @BJP4India তাদের ইচ্ছা ও কল্পনা অনুযায়ী #Bengal ভাগ করতে দেব না! আপনারা আমাকে হুমকি দিতে পারেন, বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে রাখতে পারেন, তারপরও আমি ঐক্যবদ্ধ বাংলার জন্য লড়াই চালিয়ে যাব। কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (কেএলও) নেতা জীবন সিংহ ভিডিওতে পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবি তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাণে মারার যে করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল, তা নিেয় মমতা বলেন, এই ধরনের হুমকিতে তিনি ভয় দেখায় না। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে তার সংগ্রামের দিনগুলোর কথা স্মরণ করে এই রাজনীতিক বলেন, তিনি তার জীবনে এ ধরনের বেশ কিছু হুমকির মুখোমুখি হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বলেন,
কিছু লোক আমাকে হুমকি দিচ্ছে। ওরা বলছে, আমি বাংলা ভাগ হতে না দিলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। আমি পরোয়া করি না। আমি এ ধরনের হুমকিকে ভয় পাই না,।জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই এলাকার জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন।তিনি বলেন, ‘বাংলার আগেকার সরকারগুলোর কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার বা দার্জিলিঙের জন্য কোনো ভিশন ছিল না। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা সব সম্প্রদায়ের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই এলাকার জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আটটি জেলা নিয়ে উত্তরবঙ্গ পশ্চিমবঙ্গের জন্য অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি অর্থ-উপার্জনকারী চা, কাঠ এবং পর্যটন শিল্পের আবাসস্থল। নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশের সাথে একটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত ভাগ করে নেওয়া এই অঞ্চলটি তার শিলিগুড়ি করিডোরের কারণে দেশের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যা মূল ভূখন্ডকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সাথে সংযুক্ত করে।গোর্খা, রাজবংশী, কোচ এবং কামতাপুরি সম্প্রদায়ের মতো বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর দ্বারা আশির দশকের গোড়ার দিক থেকে সেখানকার লোকেরা বেশ কয়েকটি সহিংস রাষ্ট্রীয় আন্দোলন প্রত্যক্ষ করেছে। পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের দাবিদারদের সমর্থন নিয়ে গেরুয়া শিবিরকে তীব্র আক্রমণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপি পাহাড় ও সমতলের মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছে।
মমতা বলেন, ‘নির্বাচনের আগে তারা বলেছিল, তারা গোর্খাল্যান্ড সৃষ্টি নিশ্চিত করবে। কিন্তু আমি কখনোই তা হতে দেব না। মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি আসনের বিজেপি বিধায়ক আনন্দময় বর্মন এবং ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি আসনের বিজেপি বিধায়ক শিখা চ্যাটার্জি উত্তরবঙ্গের জন্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পক্ষে কথা বলেছিলেন। কার্শিয়াঙের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মাও দার্জিলিংকে বাংলা থেকে আলাদা করার দাবি জানিয়েছেন।বিজেপির আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লাও গত বছর উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি তৈরি করে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি তুলে চলেছেন। তৃণমূল সুপ্রিমো দাবি করেন যে বিজেপি উত্তরবঙ্গের মানুষের ভোট পাওয়া সত্ত্বেও, এই অঞ্চলের জন্য কিছুই করেনি। মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের প্রভরন সমারোচনা করে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার হল ভেজাল সরকার। মনে রাখবেন আজকে একশো শতাংশের উপরে ৫০০ টাকার নোট জালিয়াতি হয়ে গেছে, ভেজাল তৈরি করেছে। দু’হাজার টাকার নোট ভেজাল তৈরি করেছে। বিজেপি সরকারকে আগে বলতাম জুমলা সরকার। কিন্তু এখন বলি ভেজাল সরকার।
তিনি বলেন, ‘আপনার কী দোষ? ব্যাংক যদি আপনাকে দুনম্বরি টাকা দেয়? আপনি ওই টাকা নিয়ে জিনিস কিনতে গেলে পুলিশ আপনাকে ধরে বলবে টাকাটা তো জাল! কিন্তু জালটা হবে কোত্থেকে? কোথা থেকে এসেছে জাল নোট? আপনি যখন নোট বাতিল করেছিলেন, সবার টাকা টাকা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরে কেন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি? কেন আপনি বাজারে ভেজাল নোট ছেড়ে দিয়েছেন?’ মমতা আরও বলেন, ‘বিজেপি নির্বাচনের আগে কী বলেছিল? ‘গোর্খাল্যান্ড’ করব। নির্বাচনের পরে পালিয়ে গেছে। আমরা এটা করতে দেবো না। আগে তরাই-ডুয়ার্সে কত গণ্ডগোল ছিল? পাহাড়ের সাথে তরাই-ডুয়ার্সের বিবাদ বাধিয়ে দিয়েছিল। আমরা বিবাদ চাই না। পাহাড় যেমন আমার বন্ধু। তরাই-ডুয়ার্সও তেমন বন্ধু। বিজেপি কোনও কোনও লোকেদের বলছে, আমরা ‘উত্তরবঙ্গ’কে আলাদা করে দেবো। আমরা রক্ত দিতে তৈরি আছি, কিন্তু আমরা বাংলাকে ভাগ করতে দেবো না।’ এ প্রসঙ্গে রীবন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, পঞ্চানন বর্মাকে ভাগ করা যায় না বলেও মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct