ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা অন্যদের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যকে বেশি চাপে ফেলেছে। লেবানন ও ইয়েমেনের মতো যেসব দেশ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অভ্যন্তরীণ সংঘাত মোকাবিলায় জেরবার হচ্ছিল, সেসব দেশে খাদ্যসংকটের প্রভাব দারুণভাবে আঘাত করেছে। মিশরও এ সংকট সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু পারস্য উপসাগরীয় মোকাবিলা করছে। এ নিয়ে লিখেছেন জোসেফ ডানা। আজ শেষ কিস্তি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো কিছু উপসাগরীয় দেশ পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে কৃষিপ্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে। দুবাইয়ে ‘ফুডটেক ভ্যালি’ নামের নতুন যে কৃষি প্রকল্প চালু হয়েছে, তা পুরো মাত্রায় উৎপাদন শুরু করলে দেশটির খাদ্য উৎপাদন বর্তমানের চেয়ে তিন গুণ বেশি হবে। আমরা যদি ভালো করে তাকাই, তাহলে উপসাগরীয় অঞ্চল কীভাবে তার খাদ্যসংকট মোকাবিলা করেছে তা এবং তা থেকে এখানকার ভবিষ্যৎ কৃষির কিছু আলামত দেখতে পাব। বোঝা যাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন আরও অনেক দেশকে খাদ্য উৎপাদনের জন্য তাদের সীমানার বাইরে জমি খুঁজতে বাধ্য করবে। যুক্তরাষ্ট্রে যথেষ্ট পরিমাণ আবাদযোগ্য জমি থাকা সত্ত্বেও দেশটির খাদ্য সরবরাহের একটি বড় অংশ আসে মেক্সিকো থেকে, কারণ মেক্সিকোতে ফসল চাষ করা সহজ। কিন্তু এ সমাধান দুই পাশে ধারওয়ালা তলোয়ারের মতো। গত বছর, যখন যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকো থেকে অ্যাভোকাডো ফল আমদানি নিষিদ্ধ করেছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাভোকাডোর দাম ২৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চতায় গিয়েছিল, কারণ যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাভোকাডোর চাহিদার ৮০ শতাংশ মেক্সিকো থেকে আসে। যদিও খাদ্যের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশে জমি কেনা খাদ্য নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ হতে পারে, তবে এটি সম্ভবত বিশ্বের কিছু অংশে ভূরাজনৈতিক সমস্যাকে উসকে দেবে। উত্তেজনা তৈরি হতে বাধ্য কারণ ধনী দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর সেই সব জমি কিনছে, যেসব জমিতে স্থানীয় মানুষ আগে থেকেই চাষাবাদ করত।
ধনী দেশ এবং কোম্পানিগুলো কঙ্গোর খনিজ সম্পদ আহরণ করে কোটি কোটি ডলার আয় করলেও কঙ্গো কীভাবে অনুন্নত থাকে তা বিবেচনা করুন। আজ বিদেশি কোম্পানিগুলো কঙ্গো থেকে কোবাল্ট এবং লিথিয়াম তুলছে। কাল সেখানে তারা খাদ্য উৎপাদন করবে। উপসাগরীয় অঞ্চল দেখিয়েছে, খাদ্য আবাদের মডেল একটি ছোট কিন্তু ধনী সমাজের জন্য খাদ্যনিরাপত্তা মোকাবিলায় কাজ করতে পারে। কিন্তু আমাদের বিবেচনা করা দরকার যখন অনুশীলনটি বড় আকারে সঞ্চালিত হবে, তখন এর প্রভাব কী হবে। ইউক্রেন সংকট খাদ্যসংকটের পূর্বসূরি হিসেবে কাজ করছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। যেহেতু উপসাগরীয় দেশগুলো তাদের কৃষিপ্রযুক্তি খাতভিত্তিক অর্থনীতি তৈরি করে চলেছে, অন্যান্য দেশের জন্যও তাদের খাদ্য চাষের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার সুযোগ রয়েছে। আগামী বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের খাদ্যনিরাপত্তার এ নতুন পর্যায়ের জন্য নতুন নির্দেশিকা প্রয়োজন। মধ্যপ্রাচ্য সেই নির্দেশিকা রচনায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। (সমাপ্ত...)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct